ভাত খাইতে ভাল লাগে। এরপরে কিছুক্ষণ ঘুমাইলাম। অঈ আকাশে চাড দেকা যাইতাছে । হ এহন আর কি করা। ঘুইরা ঘুইরা ঘুমাইতাছি। একসময় আইব হ আইব, চিন্তা করতে মানা করছে। এহন ঘুমানি ঠিক না, সন্ধায়ার ঝুম বৃষ্টি নামতে পারে। ওইদিকে আগুন লাগছে।
কিছুদিনের মধ্যেই রোদ উঠব। ক্ষেতের ধান পাকা ধরছে। নামল শিলাবৃষ্টি। সব ধান গেল চিটা পইড়া। মাথায় হাত। ক্ষেত ভরা ধান কিন্তু তার মাঝে কোন প্রাচুর্য নাই। ভিতরের চাল হারিয়ে ধানগুলো হালকা হয়ে গেছে।
কিছু আমের গায়ে শিলা পড়েছে। শিলা পড়লে আম নাকি মিষ্টি হয়। অনেক শিলা কুড়িয়েছে বাচ্চারা। কিন্তু ক্ষেতের ধান যে সব নষ্ট হয়ে গেল। এখন সবাই খাবে কি?
সমাধান নাই, সমাধান নাই। ভয়ংকর পৃথিবীর ভয়ংকর মুখে ছেড়ে দেওয়া মানুষগুলো। কে কখন কি খাবে তার নিশ্চয়তা নাই। কেউ অনাহারে দিন কাটায়, কারো ঘরে চাল নাই। হাড়ি চড়ে না কারো চুলোয়। কেউ খবর রাখে না কারো। ক্ষুধায় যখন পেট ব্যাথা করে তখন পুরুষগুলো হতবুদ্ধি হয়ে ঘুরে বেড়ায়, নারীরা নিস্তেজ হয়ে বসে থাকে আর বাচ্চাগুলো কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়ে।
আপনি ততক্ষন পর্যন্ত একটা বিষয় ঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারবেন না যতক্ষণ না আপনি নিজে সেই বিষয়ের একটি উপাদান হিসেবে অংশগ্রহন করেন।
সকালে বাজারে একরাশ লোক কোদাল, টুকরি, কারো তাও নেই। তারা বসে থাকে আর অপেক্ষা করে। ক্ষুধা বড় মারাত্মক জিনিস।
এক বুড়ো লোক। স্ত্রী পুত্র কন্যা কেউ নাই। শরীরের শক্তি কমে এসেছে। পরিশ্রমের কাজও করতে পারেন না। তাই কেউ কাজ দেয় না। জ্বর হল একদিন। খাবার কিছু নাই। প্যারাসিটামলের টাকাও নাই। দশ টাকার জন্য ঘুরছেন। জোগাড় হবার পর দুই টাকা দিয়ে একটা বন রুটি কিনলেন। আর এক টাকা দিয়ে একটা প্যারাসিটামল। কিন্তু শেষ এখানেই নয়। তাকে তার খাদ্য জোগাড় করতে হবে। কিন্তু তার শরীর ভেঙ্গে আসছে। অবলম্বন নাই।
এ জগতের প্রত্যেকটা প্রাণীই স্বার্থপর। এখানে কাউকে দেখার কেউ নাই। ব্যাতিক্রম সবসময়ই ব্যতিক্রম। এখানে সব মিথ্যা। ভাল বলতে কিছু নাই। ভাল হচ্ছে একটা বস্তাপচা জিনিস। নয়তো ঐ মেয়েটাকে এভাবে পতিতা হতে হত না।
ধুলোর দুপুর। কাঠফাটা রোদ। আক্ষরিক অর্থেই কাঠফাটা রোদ। সে রোদে বাইরে বের হওয়াই সম্ভব নয়। চরম বিধ্বংসী তার তাপ। দুপুরের পর কাজ ছেড়ে দেয় কামলারা। পেটের দায় আংশিক মিটে গেছে। আধাবেলার টাকা অন্তত পাবে। কিন্তু তবুও এই রোদে কাজ করা সম্ভব না।
টং দোকান। সস্তা সব জিনিস। লম্বা পলিথিনে এক টাকার আচার একটু একটু করে ভাগে ভাগে সাজানো। তিন বছরের মেয়েটা মায়ের কাছ থেকে এক টাকা, হ্যা এক টাকা, আসলেই এক টাকা নিয়ে এসে একটুকরো আচার কিনে। তার জিহ্বায় স্বাদ জাগে। খালি গায়ে একটা ময়লা সাদা রঙের মাঝে নীল লতার প্রিন্ট তোলা মেয়েলী হাফপ্যান্ট পড়ে মেয়েটা ধুলোর মেঠো রাস্তায় হাটে আর আচার খায়। ও জানেনা, ওকে কিছুদিন পর নিজের খাবার নিজেকেই ব্যাবস্থা করতে হবে।
.......................................চলবে যদি মনে চায়