somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিউচারামা আর সিম্পসন

১০ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফিউচারামা আর সিম্পসন দুইটা সিরিজের সবগুলা পর্ব দেখা শেষ। কতগুলা ঘন্টা নষ্ট করলাম জানি না। ম্যাট গ্রোয়েনিং সিম্পসনরে বেশী ভালবাসেন। সিম্পসনের এক পর্বে ফিউচারামার বেনডার হোমারের গাড়ীতে আইসা পড়লে হোমার কোন পাত্তা না দিয়া বেনডাররে এক হাতে ছুইড়া ফালায় দেয়। হোমার আর বেনডার দুইটাই টাফ ক্যারেক্টার। কিন্তু ম্যাট হোমাররে বেনডারের থেকে বেশী শক্তিশালী করছেন। বিভিন্ন রিভিও অনুযায়ী সিম্পসন ফিউচারামার থেকে এগিয়ে। কিন্তু আমার মতে ফিউচারামা একটা অনবদ্য সৃষ্টি। একটা ক্লাসিক। ক্লাসিক বলতে আমি বুঝি একটা পারফেক্ট ক্রাইম। অপরাধ হয়েছে, অপরাধের চিহ্নও আছে, সবাই অপরাধের ফলাফল দেখতে পারছে কিন্তু কিছুতেই অপরাধের রহস্য ভেদ করতে পারছে না। অপরাধটা যে কিভাবে হল কেউ জানে না। সমালোচকদের কাজ একটা শিল্পকর্মকে সার্জনের মত ছুরি চালিয়ে কেটে কুটে দেখা, বিশ্লেষণ করা। কিন্তু একটা ক্লাসিককে কিছুতেই বিশ্লেষণ করা যায় না, কিভাবে জিনিসটা ক্লাসিক হয়ে দাড়াল কেউ জানে না, কিন্তু তার মন্ত্রে সবাই মুগ্ধ। সমালোচকরা তার বিশ্লেষণ করে সূত্র উদ্ধার করতে পারেন না, যে সূত্র দিয়ে আরেকটা ক্লাসিক তৈরী করা যাবে। তাই ক্লাসিক ক্লাসিকালই থেকে যায়। তার আবেদন কোনদিন হারায় না। শত হাজার বছরেও তা ধ্বংস হয় না। পূনর্জন্ম নিয়ে সে আবার বেচে ওঠে। পেখেলবেলের ক্যানন ডি যেমন তিনশ বছর আগেও প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রে, পিয়ানোতে আবেদনময় ছিল, আজকের বেজ গীটারেও তা সমান আবেদনময়। কে বলবে এই ক্যানন ডি এত পুরাতন দিনের সুর!

ফিউচারামা হারাবে না। অন্তত আমি তা বিশ্বাস করি। ভবিষ্যতের আলো বাকানো হলো স্ক্রীনেও সে তার আবেদন ধরে রাখবে বলে আমি মনে করি। জুরাসিক বার্কে ফ্রাই যখন তার প্রিয় কুকুর সীমোরকে পাথুরে অবস্থায় রেখে যায় এই ভেবে যে তার সীমোর হয়তো তাকে ভুলে গেছে এবং এরপরে যখন "ইফ ইটস টেইক ফরএভার, আই উইল ওয়েট ফর ইউ, ফর থাউযেন্ডস সামার আই উইল ওয়েট ফর ইউ" এর সাথে দেখানো হয় "মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু" কিভাবে "মানুষের" জন্য অপেক্ষা করে তখন চোখের পানি আটকে রাখা কষ্ট হয়। আবার যখন লিথাল ইন্সপেকশানে ছোট্ট বেওডারের ক্রুটিপূর্ণ গঠনের কারনে যখন তাকে হার্মিস বাতিলের খাতায় না ফেলে ওভাররাইড করে তাকে বাচিয়ে রাখে তখন মানব জাতিকে একটা প্রাণী না ভেবে "মানব" নামক একটা বিশেষ বস্তু হিসেবে আমার যুক্তিপূর্ণ মন ভাবতে বাধ্য হয়। মনে হয় প্রেম-ভালবাসা সহ আমাদের "সহজাত প্রবৃত্তিগুলো" আসলে ঠিক কেন যেন হরমোনের খেলা নয়, বরং অবোধ্য কোন বস্তু। মানুষ তার সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুকে কিভাবে ভালবাসে, কিভাবে নিজের সব কিছুর বিনিময়ে হলেও সব বিপদ থেকে রক্ষা করে, শিশু যতই প্রতিবন্ধী হোক না কেন মানুষ যে তার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও তাকে বাচিয়ে রাখে, নিজের সবকিছু বিসর্জন দিতেও পিছপা হয় না, সে এক অন্য জিনিস! লিটল বার্ডের জন্য বিগ বার্ডরা যে ত্যাগ স্বীকার করে তা যে আমাদের রক্তকণিকায় লেখা এটা বোঝা যায়। ফিউচারা আমাদের প্রাণী জগতের প্রবৃত্তির এক মহান উপস্থাপন।

সিম্পসনের সাথে ফিউচারামর আরেকটা পার্থক্য হল "আরোপিত" দর্শন উপস্থাপন। সিম্পসন এর অনেককিছুই আরোপিত। সেখানে ক্রাষ্টি একজন ইহুদী। এখানে ইহুদীদেরকে অন্য ধর্মালম্বীদের কাছে আরোপন করা হয়েছে। বশীরকে আমেরিকার সন্ত্রাস ভয়ে ভীত সমাজের কাছে আরোপন করা হয়েছে। ইসরায়েলে খ্রীষ্টান, ইহুদী, মুসলিমদের মধ্যে শুয়রের মাংস আর মদ নিয়ে পার্থক্য থাকলেও সবাই যে মুরগী খায় সেটা দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে আরোপিত বন্ধুত্ব স্থাপন করা হয়েছে। লিসাকে প্রাণীজ খাদ্য গ্রহনকারীদের কাছে আরোপন করা হয়েছে। এগুলো সবই কৃত্তিম। কৃত্তিম কোন কিছু ক্লাসিক হতে পারে না। কৃত্তিম পলিথিন মাটিতে বছরের পর বছেওর থাকলেও তা থেকে আওরেকটা পলিথিন জন্মাবে না। কিন্তু একটি বীজ যদি মাটিতে বপন করা হয় তার থেকে আরেকটি চারা জন্মাবে, গাছ হবে, সেই গাছ থেকে আবার বীজ পাওয়া যাবে। ফিউচারামায় কোন আরোপন নাই। কোন ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তাবাদ তো নাইই বরং মানবতাবাদ এমনকি প্রাণীবাদও নাই। সেখানে অন্যান্য গ্রহের প্রাণীরা মানবতাবাদকে ছাড়িয়ে প্রাণীবাদে অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। আবার রোবট মানুষের বিবাহের ৈধতার মাধ্যমে প্রাণীবাদও তার জায়গা হারিয়েছে। এইটাকে ঠিক কি(?)বাদ বলা যায় আমি জানি না। মহাবিশ্ব তার জায়গা হারিয়েছে ইটার্নিটির কাছে। এখানে সবকিছু সহজাত। কোন সীমারেখা নাই, কোন সংস্থাপনের গন্ডি নাই। চিরায়ত বা ক্লাসিকের কোন গন্ডি থাকে না। ফিউচারামা একটি চিরায়ত উপস্থাপন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×