somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পহেলা বৈশাখের দিনটি কি আমাদের পূর্ব পুরুষদের জন্য কোন আনন্দময় দিন ছিল ?

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে ৪৫০ বছর আগে ঠিক এই দিনে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে প্রত্যেক কৃষক কে তার বাৎসরিক সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পরের দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা অর্থাৎ জমিদাররা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। যেসব কৃষক চৈত্র মাসের শেষ দিনে পহেলা বৈশাখের খাজনা পরিশোধ করার মত ফসল তুলতে পারতো না, গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া আর তাদের কোন পরিণতি ছিলো না। অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের দিনটি আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে কোন আনন্দদায়ক দিন ছিল না। পহেলা বৈশাখের দিনটি ছিল আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে এক বিভীষিকাময় দিন। কারন যদি কোন কারনে তারা পহেলা বৈশাখের দিনে জমির বাৎসরিক খাজনা পরিশোধ না করতে পারত তাইলে জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনী দ্বারা ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ায় ছিল তাদের ভাগ্য। পহেলা বৈশাখের আরেক নাম কিন্তু পুণ্যাহ। পুণ্যাহ মূলত সংস্কৃত শব্দ। অর্থ ভালো কাজের সুফল পাবার দিন। জমিদার প্রথার সময় বছরের সূচনার দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে এই পুণ্যাহ অনুষ্ঠানটি করা হতো। আক্ষরিক অর্থে এই পুণ্যাহ অনুষ্ঠানটি ছিল রাজা-প্রজার দেখা হবার এবং কথা বলার দিন। আসলে পুণ্যাহ ছিল জমিদারদের দিক থেকে আর্থিক স্বার্থ উদ্ধারের কৌশল। ১৯২০ সাল পর্যন্ত জমিদার এবং বড় বড় তালুকদারদের কাচারিতে পুণ্যাহ অনুষ্ঠান হতো। সেদিন প্রজারা ভালো কাপড়-চোপড় পরে খাজনা দিতে আসতো এবং অতীতের বাকী থাকা খাজনা আদায় করতো।

সে আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খাজনা আদায় শুরু হয়। সরকার বাহাদুর সকল জমিদার, তালুকদার, ইজারাদার, এবং অন্যান্য রাজস্ব প্রদানকারী ব্যক্তিদেরকে আামন্ত্রণ জানানো হতো পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে। সে অনুষ্ঠানের সেরেস্তায় বা খাজনা আদায়ের নির্ধারিত দরবারে নায়েব তহসিলদারকে পূর্বের রাজস্ব পরিশোধ করে নতুনভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া হতো। আর সে দরবার পরিচালনা করতেন নওয়াবগণ। আর যারা নওয়াবদের সন্তুষ্ট করতে পারতেন তাদেরকে নওয়াব সন্মানসূচক খিলাত বা পোশাক দিতেন। কাচারিতে প্রজারা একত্রিত হয়ে জমিদার বা নায়েবের কাছ থেকে পানপাতা নিতেন। আগে সদর আর মফস্বল নামে দু’ধরণে পুণ্যাহ হতো। সদর পুণ্যাহ উৎসবে জমিদার এবং আন্যান্য ভূস্বামিগণ বাংলার দীউয়ানের বাসভবনে অংশগ্রহণ করতেন। আর মফস্বল পুণ্যাহ উৎসব অনুষ্ঠিত হতো জমিদারের কাচারিতে।

সাহিত্যের ভাষায় তো কত চমৎকার লাগে এই পুণ্যাহ নববর্ষ পহেলা বৈশাখ শুনতে। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখুন তো যেই কৃষক টা তার খাজনা পরিশোধ করতে পারত না তার জীবনটা কি এই পহেলা বৈশাখের দিনে দুর্বিষয় হয়ে যেত না। তাইলে আমরা কোন মুখে এই পহেলা বৈশাখ পালন করি। আরে আমাদের বেশীরভাগ পূর্ব পুরুষদের কাছে পহেলা বৈশাখের দিনটা কোন আনন্দময় দিন ছিল না পহেলা বৈশাখের দিনটা ছিল একটি দুশিন্তাগ্রস্থ দিন যে আমি কি আজ আমার ভিটামাটি রক্ষা করতে পারব কিনা। কর্পোরেট সংস্কৃতির কবলে পরে আমরা পহেলা বৈশাখের দিনে অনেক নাচগান করলেও আমাদের পূর্ব পুরুষরা সারা বছর এই পহেলা বৈশাখের দিনটা কে ভয় পেত। সত্যিকার অর্থে পুণ্যাহ নববর্ষ কোন আনন্দদায়ক উৎসব ছিল না আমাদের পূর্ব পুরুষদের জন্য।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×