somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : 'ভালোলাগা' এক পরজীবী কষ্টের নাম! # (৩য় পর্ব)

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্বের লিংক:

দ্বিতীয় পর্বের লিংক:

# (পাঁচ) #

সন্ধ্যা হবে হবে করছে। তখনও পুরোপুরি আধাঁর নামে নি। অফিস থেকে ফেরার পর হতে বারান্দায় বসে আছি। একটার পর একটা সিগারেট ফুঁকে চলেছি। মাঝে মাঝে চোখ দুটো ভিজে উঠতে চাইছে। নিজেকে শান্ত করার অনেক চেষ্টা করে ও ব্যর্থ হচ্চ্ছি। মনটা এতটা অস্থির হয়ে আছে কোনো কিছুতেই মন বসছে না। আমাদের কাছাকাছি আসার গল্প এখন অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে। আমার 'কষ্টভোলার গল্পে'র সবটুকু এখন নীরার জানা। ঐ গল্প এখন আর আমার 'কষ্টভোলার গল্প' নয়। এখন আমার সব গল্পগুলো স্বপ্ন ঘেরা। আমার গল্পেরা এখন পাল্টে গেছে। নীরা এখন আমার গল্পের অংশ।

আজ যখন ওর সাথে দেখা হয়েছে, ওকে খুব আনমনা আর বিষন্ন মনে হচ্ছিল। আজ প্রথম আমি নীরার চোখে জল দেখেছি। ওর হাসিখুসি প্রানোচ্ছল মুখটিতে আজ ছিল রাজ্যের বিষাদের ছায়া। যে মেয়েটি আমার দুঃখের গল্প গুলোকে পাল্টে দিলো তার সবটুকু উচ্ছলতা দিয়ে, যে আমার কষ্টের ভার খুব সহজে নিজের কাধে বইবার জন্য দুহাত এগিয়ে দিলো অন্তরের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে, তার দুচোখ ভরে আজ কেবল জল দেখেছি। ওর কষ্টমাখা মুখটা আমাকে শান্তি দিচ্ছে না। কেবল চোখের উপর ভাসছে। নীরার কষ্ট সইবার মত ক্ষমতা আমার নেই। আমি পারবো না। এটা আমি পারবো না। ওর কষ্টমাখা মুখ সহ্য করতে পারবো না। পৃথিবীর অনেক কষ্ট আমি সহ্য করে এসেছি এই পোড় খাওয়া জীবনে। কিন্তু আজকের এই কষ্টের ভার মনে হচ্ছে সব কষ্টের চাইতে অনেক বেশি।

আমার এই অসহ্য অস্থিরতার মধ্যে পুরো শহরে রাত নেমে এসেছে। চারিদিকে কোলাহলের শব্দ গুলো আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের শহরে সময়ের সাথে সাথে কোলাহলের শব্দে ও পরিবর্তন হয়। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলে এটা টের পাওয়া যায়। আমি টের পাচ্ছি । খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছি বলে নয়, সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি বলে। এই মুহুর্তে রাতের কোলাহলের অস্পষ্ট শব্দ আর নীরার কান্না ভেজা দুটি চোখ এর বাইরে আর কিছুর অস্তিত্ব আমি টের পাচ্ছি না।

এর মধ্যে দুইবার ফোন দিয়েছি নীরাকে। প্রথমবার ফোন রিসিভ করেনি। দ্বিতীয়বার ফোন ধরলেও কোনোভাবেই ওর মন খারাপের কারণ বলছেনা। আবার ফোন দিলাম। নীরা এখনও ঠিক একই রকম বিষন্ন, শান্ত। ফোনের ওপাশে ওর নীরবতা আমাকে আরো অস্থির করে তুলেছে। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীতে নীরবতা নেমে এসেছে।

'আমি আসতে চাই!'
'কেন?'
'তোমাকে দেখতে চাই। তোমার এই নীরবতা আমার একটু ও ভালো লাগছে না। তোমার মন খারাপ কেন আমাকে বলতে হবে।'
'নাহ্! আসতে হবেনা। ঠিক হয়ে যাবে।'
'না, আমি আসবোই! প্লীজ। খুব অল্প সময়ের জন্য। আমার কিচ্ছু ভাল্লাগছে না। তোমাকে দেখেই চলে আসবো।'

ওর অনেকক্ষন 'না' সূচক কথা শুনতে শুনতে ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে ফোন কেটে দিলাম। লাইনটা কেটেই আমি বেরিয়ে পড়লাম নীরাদের বাসার উদ্দেশ্য। পারিবারিক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতায় ওর কাছে যাওয়াটা কখনো আমার জন্য বাধার ছিলোনা। ওর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা একাকী আলাপে ও কোনোদিন কেউ কিছু মনে করতোনা।

নীরা আলো নিভিয়ে ওর রুমে একাকী শুয়ে আছে। আমাকে দেখে উঠে বসলো। অালোটা জ্বালিয়ে ওর পাশে বসলাম। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও ওর মুখ থেকে খুব বেশি কথা বের করতে পারছিলাম না। মন খারাপকে দ্বিগুন করে উঠে পড়লাম। এভাবে ওকে দেখতে আর ইচ্ছে করছিলো না। দরজার দিকে এগোতেই আচমকা নীরা পেছনে থেকে আমার হাতটা চেপে ধরলো। হঠাৎ নীরার এই আচরণে আমি হতচকিতের মত ফিরে তাকালাম। কতবার একটু হাত ধরার বায়না করেছি, হাতে হাত রেখে হাটঁতে চেয়েছি কখনো সাড়া পাইনি। আজ নিজেই ও আমার হাতটা ঝাপটে ধরলো।

'তুমি এমন করলে কেন? কেন এমন করলে? এত অভিনয় আমার সাথে কেন করলে?'

'অভিনয়! বুঝতে পারছিনা কিছু।'

'আসলে তুমি জানতে কিভাবে আমাকে দুর্বল করতে হবে। আমাকে কিভাবে কষ্ট দিতে হবে। কিভাবে তোমার শূন্যতায় আমাকে কাঁদাতে হবে। তা-ই তুমি করেছ।' নীরা হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে গেলো। 'প্রচন্ড অভিনয় করেছ! নিখুঁত অভিনয়!'

'আমি কি করেছি?' নীরার আচমকা এই আচরণ, আবেগের পরিবর্তন আমার কাছে দুর্বোধ্য মনে হলো। আমি অসহায়ের মত প্রশ্ন করলাম।

'আমি চাইনি তোমার জন্য এভাবে অনুভব করতে। চাইনি তোমার শূন্যতায় নিজেকে পোড়াতে, চাইনি তোমাকে এভাবে ভাবতে। কিন্তু তুমি আমাকে সে পথে টেনে এনেছ। কেন??'

আমার মনে হচ্ছিল আমি নীরার সাথে এতদিন সবকিছু ভুল করেছি, ওর চাওয়ার বিরূদ্ধে গিয়ে করেছি। মনে হচ্ছিল নীরার কাছে আমি অপ্রত্যাশিত হয়ে গেছি। অপরাধী মনে হচ্ছিল নিজেকে। ওই সময়কার অনুভূতিটা কতটুকু যৌক্তিক ছিলো তখন বুঝতে পারিনি। পরে বুঝেছিলাম ওটা ছিলো ভুল অনুভুতি এবং বোঝার ভুল।
ঐ মুহুর্তে কি করবো কিংবা কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।

'ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। তোমাকে কখনো ওভাবে জ্বালাবোনা। ডিস্টার্ব করবোনা। যতটুকু করেছি প্লীজ মাফ করে দিও। এবং ভুলে যেও।'

কথাটা শুনে নীরা আরো জোরে ঝাপটে ধরলো আমাকে।
'কেন ? কেন চলে যাচ্ছ? সত্যি আমি পারছিনা। নিজেকে ধরে রাখতে পারছিনা। আমি তোমার কষ্টের আশ্রয় হতে চেয়েছিলাম। তোমার কষ্টের গল্প শোনার মানুষ হতে চেয়েছিলাম, তোমার ঐ বিষন্ন মুখটার সব বিষন্নতা দুর করে তোমাকে ভালো রাখতে চেয়েছিলাম ঠিক। কিন্তু, তোমার জীবনে এভাবে আসতে চাইনি। কারণ, আমি জানি এখানে কত কষ্ট। আজকে আমি যে পরিস্থিতিতে আছি সেটা হয়ত তোমার জন্য প্রত্যাশিত, কিন্তু আমার জন্য নয়। কেন তুমি তোমার কষ্টের গল্পগুলো আমাকে শোনালে। কেন তুমি তোমার ভালোলাগার কাব্যে আমাকে জড়িয়েছ! আমি তো নিজেকে কোনোভাবেই ধরে রাখতে পারছিনা!' বলতে বলতে আমার বুকে মুখ লুকাল নীরা। ওর চোখের পানিতে আমার শার্ট ভিজতে লাগল। পরখ করতে চাইলামনা এ কান্না আনন্দের নাকি পরাজয়ের।

নীরার কথাগুলো আমার কানে নুপুরের ঝংকারের মত বাজছিলো। আমার জন্য যেন অনেক দুর হতে স্বর্গীয় সুরের লহর একরাশ মুগ্ধতার ছোঁয়া নিয়ে রিনিঝিনি রিনিঝিনি শব্দের মাতম তুলছে। মনে হচ্ছিল এটা আমার জন্য সেই ক্ষণ যে ক্ষণের জন্য এতদিন আমি প্রতীক্ষায় ছিলাম। মনে মনে নিজেকে বলছিলাম 'পেয়েছি! আমি পেয়েছি! আমি তাকে পেয়েছি!!'

ওইদিন টি ছিলো আমার নীরাকে পাওয়ার দিন। স্বার্থপরের মত ওইদিন নীরাকে কাঁদিয়ে আমি হেসেছিলাম। ওর কান্না, ওর বিষন্নতা....সব আমার জন্য একরাশ প্রাপ্তি, আর অপ্রত্যাশিত আনন্দ নিয়ে এসেছিলো।

নীরাকে পাওয়ার মুগ্ধতায় সেদিন সারারাত জেগেই কাটিয়ে দিলাম। মনে হচ্ছিল আমার জীবনে আমি এমন এক আলোর দেখা পেয়েছি, যার মূল্য নির্ণয় করতে যাওয়া বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। বাসায় ফিরে ওকে এসএমএস পাঠালাম ...''এ কি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে......!'' এই লাইনটিই বারবার মনে হচ্ছিলো ওই সময়।

(চলবে)

ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৬
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×