ধরুন, আমার কাঁধে যে ব্যাগটা আছে- তার ভেতর পিস্তল আছে, গ্রেনেড আছে এবং চাপাতি আছে। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আমি এক মিশনে বের হয়েছি। বনানী গিয়ে দেখলাম আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তল্লাশী চালাচ্ছে। সারা বছর'ই তারা তল্লাশী চালায়। আমি দূর থেকে ভালো করে লক্ষ্য করলাম- দু'জন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক সিএনজি, বাইক আর গাড়ি থামিয়ে সন্দেহ ভাজনদের তল্লাশী করছে। যারা তাদের পাশ দিয়ে, ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছে তাদের চেক করছে না। আমি কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সুন্দরভাবে তাদের পার হয়ে গেলাম। ব্যাগে আমার পিস্তল, চাপাতি আর গ্রেনেড।
এখন কথা হচ্ছে- সিএনজি, বাইক বা গাড়ি থামিয়ে চেক করছে কিন্তু যারা ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তাদের চেক করছে না কেন? এদিকে আমি ব্যাগে করে পিস্তল, গ্রেনেড আর চাপাতি নিয়ে বনানী এলাকায় প্রবেশ করলাম। আমাদের দেশের পুলিশরা এত নির্বোধ ক্যান? যারা অবৈধ্য জিনিস নিয়ে রাস্তা পার হবে তারা তো জানেই এখানে চেকপোষ্ট আছে। তাই তারা এপথ দিয়ে অবৈধ জিনিস নিয়ে গাড়ি, সিএনজি বা বাইকে করে যাবে না। তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগা দিয়েই যাবে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে হেঁটে। পুলিশের লক্ষ রাস্তার দিকে, ফুটপাতের দিকে না। আমি শিস দিতে দিতে ব্যাগে ভরে পিস্তল, চাপাতি আর গ্রেনেড নিয়ে পার হয়ে গেলাম। আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকালো না!
যাই হোক, আমি বনানী থেকে শূটিংক্লাব গেলাম। সেখানেও সারা বছর চেকপোষ্ট থাকে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে তারা যাকে সন্দেহ হচ্ছে চেক করছে। কথা হলো- সবাই জানে এখানে চেকপোষ্ট আছে তাই কেউ এপথ দিয়ে অবৈধ কিছু নিয়ে যাবে না। এদিকে ধরুন আমার কাঁধের ব্যাগে পিস্তল, চাপাতি আর গ্রেনেড আছে। আমি ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। অথচ আমাকে কেউ চেক করলো না। কেউ কিছু জিজ্ঞেসও করলো না। সবার নজর রাস্তার দিকে। যেহেতু আমি জানি এখানে চেকপোষ্ট আছে- পুলিশ গাড়ি, সিএনজি বা বাইক থামিয়ে চেক করবে তাই আমি অবৈধ জিনিস নিয়ে বাইক বা সিএনজিতে করে না যেয়ে বরং ফুটপাতে নিরাপদে হেঁটে যাব। কাঁধে থাকা ব্যাগের অবৈধ জিনিসও নিরাপদে যথাসস্থানে পৌছাতে পারব। নির্বোধ পুলিশ সারাদিন চেকপোষ্টে দাঁড়িয়ে থেকেও কিছুই করতে পারল না। পুলিশের কি বুদ্ধি হবে না? তারা কি আজও সেই পুরানো আমলে পড়ে থাকবে?
আজ আমি ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছি। ব্যাগের ভেতর তিনটা মোটা মোটা বই ছিল। বনানী আর শূটিং ক্লাব গেলেই আমি পুলিশের চেকপোষ্ট দেখে হাসি। অপ্রয়োজনীয় কাজে বেশ কয়েকজন সময় নষ্ট করছে দিনের পর দিন। হলি আর্টিজেন হামলার পরে এখানে চেকপোষ্ট আজও আছে। মহাখালী থেকে গুলশান-১ যেতেও ব্রীজের কাছেও একটা চেকপোষ্ট আছে। কিন্তু তারা ফুটপাত দিয়ে যারা যাতায়াত করছে তাদের চেক করছে না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন ধরেই নিলো- ফুটপাত দিয়ে কেউ অবৈধ কিছু নিয়ে যাবে না? তাই ফুটপাতে চলাচলরত কাউকে চেক না করে রাস্তা আটকে বাইক, সিএনজি আর গাড়িতে চেক করতে হবে। আর এদিকে আমি যে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, আমার কাঁধে ব্যাগ। আর ব্যাগে ছুরি, পিস্তল, চাপাতি আর গ্রেনেড নিয়ে নিশ্চিন্ত মনে পার হয়ে গেলাম।
আজ আমার লেখার বিষয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেকপোষ্ট না। এই পোষ্টের শিরোনাম দিয়েছি আজকের ডায়েরী। যাই হোক, সারাদিন বনানী, গুলশান আর শূটিংক্লাবের চেকপোষ্ট নিয়ে গবেষনা করার পর দেখি মধ্যদুপুর হয়ে গেছে। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। কই যাই, কি করি- কিছুই বুঝতে পারছি না। ভাবছি দুপুরে কোথায় খাবো? ঠিক এমন সময় পুরোনো বন্ধুর ফোন পেলাম। বন্ধু রাব্বি বলল, চলে আসো আমার দোকানে। দুপুরে দুইজন একসাথে খাবো। আমি বাসায় খাবার আনতে লোক পাঠিয়েছি। আমি বললাম, পাঠাওতে করে এক্ষুনি আসছি বন্ধু। উত্তর বাড্ডা পার হয়ে সাতারকূল নামক এলাকায় গেলাম বন্ধুর দোকানে। খুবই পুরোনো বন্ধু আমার। বিশ বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের পরিচয়। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আগে আমরা আরামবাগ এক ম্যাডামের কাছে ইংরেজী পড়তে যেতাম- তারও আগে থেকে আমাদের পরিচয়। একই শহরে থাকি অথচ আজকাল বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা হয় না!
বন্ধুর দোকানের ছবি।
বন্ধুর এই দোকানে নানান রকম জিনিস পাওয়া যায়। গাড়ির চাকায় হাওয়া দেবার যন্ত্র আছে, ওজন মাপারও যন্ত্র আছে আবার কাঠের উপর নকশা করার যন্ত্রও আছে। দুপুরের খাবারের বিশাল আয়োজন করেছে রাব্বি। রান্নাও চমৎকার হয়েছে। রাব্বির মার হাতের রান্নার ভক্ত আমি। রাব্বির বৌ এর হাতের রান্না ভালো না। আজ রাব্বির মা রান্না করে পাঠিয়েছেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তুমুল গল্প হলো। রাব্বিকে নিয়ে আমি আলাদাভাবে একটা পোষ্ট দিবে। দারুন সব গল্প আছে রাব্বি আর আমার।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৭