নাম তার শাহেদ। শাহেদ জামাল।
শিক্ষিত ছেলে। নিজেকে সে যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান মনে করে। আসলেই কি সে বুদ্ধিমান? তার কর্মকান্ড নির্বোধ লোকদের মতোন। অনেকে তাকে পাগল মনে করে। সবার জীবনের একটা উদ্দ্যেশ্য আছে, লক্ষ্য আছে। অথচ শাহেদ জামালের ছোটবেলা থেকেই তেমন কিছু লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নেই। তার লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যহীন জীবন সুন্দর চলে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে শাহেদের ভীষন খারাপ সময় যাছে। এমনকি রাতে ঘুমের সময়টাও তার পক্ষে নেই। শাহেদ হয়তো জটিল মুভি দেখছে খুব মন দিয়ে- হুট করে তার ঘুম আসে। প্রচুর ঘুম। কিছুতেই চোখ মেলে রাখা যাচ্ছে না। এবং সে বালিশে মাথা রাখা মাত্র মুহুর্তের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। বিশ পঁচিশ মিনিট পর তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এবং ঘুম্থেকে উঠার পর মনে হয়- যেন টানা আট/নয় ঘন্টা ঘুম দিয়ে উঠেছে। অথচ সে ঘুমিয়েছে মাত্র কুড়ি মিনিট।
তারপর অনেক চেষ্টা করেও সারারাত তার ঘুম আসে না।
তবু সে চুপ করে বিছানায় শুয়ে থাকে। তার পাশে তার স্ত্রী নীলা গভীর ঘুমে। মেয়ে পরী বাম পাশ ফিরে, বাম হাত- বাম গালের উপর রেখে আরামে ঘুমায়। শাহেদ তার ঘুমের সমস্যার কথা সে তার স্ত্রী-কন্যা কাউকেই বলে না। শাহেদ নিজেকে এই বলে শান্ত্বনা দেয়- ঘুম না এলেও সমস্যা নেই। সময়টা তো আর অপচয় হচ্ছে না। সে বিছানায় শুয়ে শুয়েই সিনেমা বানায়। সিনেমার নায়ক সে নিজেই। পরিচালকও সে নিজেই। তার সিনেমার কাহিনি চমৎকার- সে নিজেই মুগ্ধ হয়। সে নিজেকে নিজেই ধন্যবাদ দেয়। নিজের অভিনয় দেখে সে নিজেই বাহবা দেয় নিজেকে। এভাবেই পার হচ্ছে রাত। রাতের পর রাত। চোখের চারপাশ কালো হয়ে যাচ্ছে। মুখের চামড়া ভারী হয়ে যাচ্ছে। শাহেদ ফযরের আযানের আগেই বিছানা থেকে উঠে যায়। ফযরের আযান শুনতে তার দারুন লাগে। হুজুর ঘুম জড়ানো কন্ঠে আযান দেয়। আকাশ একটু একটু করে ফরসা হতে থাকে।
শাহেদ টানা আঠারো বছর সিগারেট টেনেছে।
মেট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার পর শাহেদের মনে হলো- সে অনেক বড় হয়ে গেছে। তাই সে ভাবলো- এখন সিগারেট খাওয়া যেতে পারে। সেই থেকে খাওয়া শুরু। টানা আঠারো বছর সিগারেট চলতেই থাকলো। এর মধ্যে তার মা বুঝিয়েছেন, বাবা সিগারেট ভালো না। সে তার মায়ের কথা শুনে নাই। তার স্ত্রী নীলা বুঝিয়েছে- সিগারেট ছেড়ে দেবার জন্য। এমন কি তার আদরের কন্যা পরীও সিগারেট ছেড়ে দেবার কথা বলেছে। সে সিগারেট ছাড়েনি। কিন্তু সেদিন হুট করে শাহেদ সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিল। ঘটনাটা এরকম- বহস্পতিবার, রাত দশটা বাজে। শাহেদ সিগারেটের পেকেট নিয়ে বেলকনিতে বসলো। পেকেট খুলে সে প্রচন্ড অবাক। মাত্র একটা সিগারেট আছে। অথচ সারারাত পড়ে আছে। রাত জেগে সে মুভি দেখবে তার সিগারেটের প্রয়োজন আছে। প্রতিদিন বাসায় ফেরার পথে শাহেদ পাঁচটা সিগারেট কিনে নিয়ে আসে।
এখন শাহেদ কি করবে?
আবার ছয় তালা থেকে নিচে নামবে? টাকাও নেই। এখন সিগারেট কিনতে হলে- এটিএম কার্ড দিয়ে আগে টাকা তুলতে হবে। এদিকে আবার এটিএম বুথ অনেক দূরে। প্রতিদিন সিগারেটের পেছনে তার ১৫০ টাকা খরচ হয়। একটা সিগারেট বারো টাকা দাম। শাহেদের কাছে মনে হলো এখন, রাত দশটা। তার কাছে সিগারেট নেই। পুরো রাত পড়ে আছে! সে সিগারেট ছাড়া কিভাবে সারারাত পার করবে? শাহেদের মেজাজ খুব খারাপ হলো। এবং হুট করে তার মনে হলো সামান্য সিগারেট নিয়ে এত চিন্তার কি আছে? মন খারাপ করার কি আছে? সিগারেট না খেলে কি হবে? কিছুই হবে না। বরং মাসে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা বেঁচে যাবে। তার স্ত্রী কন্যা খুশি হবে। নিজের শরীরের উপকার হবে। পেকেটে থাকা একটা সিগারেট ভেঙ্গে সে ছুড়ে ফেলে দিল ছয়তালা থেকে। এরপর থেকে সে আর একটাও সিগারেট খায়নি। তার কোনো সমস্যাও হয়নি। বরং সে অনেক ভালো আছে। টাকা বেঁচে যাচ্ছে, শরীরে সিগারেটের গন্ধ হয় না শরীরে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:২৭