বহুদিন পর আজ ব্লগে এলাম।
দুই সপ্তাহ আগে একদিন দেখি সামুতে ঢুকতে পারছি না। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমি পাগলের মতোন হয়ে গেলাম। অযথাই ফোনে একজনের সাথে খারাপ ব্যবহার করলাম। আসলে ব্লগ আমার কাছে একটুকরো আনন্দ। বিনোদন। আমার এমনই পোড়া কপাল প্রক্সি বা ভিপিএন দিয়েও ব্লগিং করতে পারছি না। কি সমস্যা কে জানে! এখন, এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে ব্লগিং করছি। ব্লগে এসে লিখি, পড়ি এবং মন্তব্য করি। কারো তো কোনো ক্ষতি করি না। সহজ সরল হিসাব। তারপরও এই নষ্ট দেশে থাকি বলে- ব্লগিং করতে পারছি না। ব্লগিং না করতে পারাটা আমার জন্য অনেক যন্ত্রনার। যার কারনে ব্লগিং করতে পারছি না- ইচ্ছা করে প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করি। কি প্রচন্ড নোংরা মানসিকতার হলে, ছোট মনের হলে ব্লগ বন্ধ করে দিল। ছিঃ। ওর মুখে থু।
এই শহরে কতদিন ধরে বৃষ্টি নেই।
আছে সীমাহীন গরম। প্রচন্ড গরম। এর মধ্যে রাস্তায় ভয়াবহ জ্যাম। গা বেয়ে টপটপ করে ঘাম পড়তেই থাকে। শার্ট ঘামে ভিজে একাকার। প্রচুর ঘামার কারনে গায়ে বাজে গন্ধ হয়। কারো সামনে যেতে লজ্জা হয়। সকাল ১১ টা থেকে ঢাকা শহরের এক অফিস থেকে আরেক অফিসে দৌড়ে বেড়াই। কেউ আমার সাথে দেখা করে না। কথা বলে না। ওয়েটিং রুমে বসে থাকি। বেশিক্ষন বসেও থাকতে পারি না। কেউ একজন এসি দেয় বন্ধ করে। এসি বন্ধ করে বুঝিয়ে দেয় আপনি চলে যান। মানূষের কাছ থেকে অপমানিত হতে হতে আমার গায়ের চামড়া মোটা হয়ে যাচ্ছে। সারা জীবন স্বপ্ন দেখেছি- সুন্দর একটা অফিসে চাকরী করবো। বেল টিপ দিলেই পিয়ন দৌড়ে আসবে। আমি বলল, কফি দাও। কফি দেওয়ার আগে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাওয়াও। আবার বেল টিপ দিব। পিয়ন আসবে। আমি বলল, অমুক ফাইলটা নিয়ে আসো। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন আমাকে বেলের শব্দ শুনে দৌড়ে যেতে হবে চা-কফি নিয়ে।
সারাদিনের ক্লান্তির পর বাসায় এসেও শান্তি নেই।
কারেন্ট চলে যায়। বাসায় এসেও ঘামতে থাকি। একফোটা বাতাস নেই। থাকি ছয় তলায়। রাত দুইটা বাজে ঘরের দেয়াল গরম হয়ে থাকে। কলের পানিও গরম। ফ্যানের বাতাসও গরম। সারারাত ছটফট করি। কেউ জিজ্ঞেস করলে মুখে হাসির ভাব এনে বলি- বেশ ভালো আছি। নিজের সমস্যার কথা কাউকে বলতে ইচ্ছা করে না। এই শহরে মনে হয় আমার মতো কেউ এত হাঁটে না। এই প্রচন্ড রোদের মধ্যেই হেঁটে মতিঝিল চলে যাই। ধানমন্ডি চলে যাই। মহাখালী হয়ে গুলশান চলে যাই। বাসের ভাড়া বাচানোর জন্য হাঁটি না। জ্যামে বাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে না। এদিকে নিজের গায়ের ঘামের গন্ধেই বাঁচি না। বাসে অসংখ্য লোকের সাথে গা ঘেষাঘেষি করে দাড়াতে হয়, বিকট তাদের গায়ের গন্ধ। গন্ধে বমি এসে পড়ে।
রোজা শুরু হয়ে আজ তিন রোজা চলে গেল।
সামনে ঈদ, অনেক খরচ। বাজারে জিনিসপত্রের অনেক দাম। এদিকে ফ্রিজ খালি। গত দুই সপ্তাহ বাজারে যাই নি। কিভাবে কি করবো, মাথা কাজ করে না। মনে হচ্ছে স্ট্রোক করে মরে যাবো। প্রচন্ড রোদের মধ্যে পাগলের মতো হাঁটতে হাঁটতে, আর মানূষের কাছ থেকে তুচ্ছতাচ্ছিল আর অপমানিত হতে হতে- হুট করে একদিন দম বন্ধ হয়ে মরেই যাবো। দুঃখে দুঃখেই জীবন গেলো। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে জীবনের অর্ধেক সময় তো পার করেই ফেললাম। বাকি জীবনটা আনন্দে বাঁচি। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে- কিছু কিছু মানুষ আসলেই শুয়োরের বাচ্চা। এদেরকে জুতা দিয়ে পিটাতে পারলে শান্তি পেতাম। দুষ্টলোকদের আল্লাহ বেশি পছন্দ করে। আমি না হতে পারলাম ভালো, না হতে পারলাম মন্দ।
দিনকাল বেশ খারাপ যাচ্ছে।
মানুষের জীবনে ভালো সময় আসে, আবার মন্দ সময়ও আসে। এখন আমার মন্দ সময় যাচ্ছে। তবুও প্রতিদিন নিয়ম করে বই পড়ছি। মুভি দেখছি। শুধু ব্লগিংটা করতে পারছি না। ব্লগিংটা করতে পারলে শান্তি পেতাম। গত পনের দিন কিছুই লিখতে পারিনি। মাথার ভেতর অনেক লেখা জমে আছে। লেখা গুলো ব্লগে ডেলিভারী না দিতে পারলে শান্তি পাবো না। মাঝে মাঝে নিজের সাথে নিজে বেশ মজা করি। পকেট শূন্য তাতে কি! আজ একটা এসির দোকানে গিয়ে খুব ভাব নিয়ে এসি দরদাম করলাম। বিক্রেতা স্যার স্যার বলে অস্থির। আমি কুড়ি মিনিট এসিতে থেকে গায়ের জামা শুকিয়ে বের হয়ে এলাম। বের হবার আগে বললাম, আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসবো। ওকে ছাড়া কিনলে ও বেশ রাগ করবে। বিক্রেতা বলল, অবশ্যই স্যার। ম্যাডামকে নিয়ে আসুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৯ রাত ১০:৪১