কপি আর পেস্ট কে না করে?
পৃথিবীর আনন্দময় কাজ গুলোর মধ্যে এটা একটা। একসময় আমি নিজেও অসংখ্য কপিপেষ্ট লেখা লিখেছি ব্লগে। গুগল সার্চ দিয়ে বা বই থেকে কপি করতাম। অনেক বার ধরাও খেয়েছি। তারপর তারা আমাকে কঠিন-কঠিন কথা বলে প্রায় ছিলে ফেলেছে। যদিও একটা কপি পেষ্ট লেখা কমপ্লিট করতে অনেক সময় লাগে। অনেক পরিশ্রম করতে হয়। অনেক পড়তেও হয়।
একটা সফল কপি পেস্টের মধ্যে কি যে আনন্দ সেটা যিনি করেন তিনিই জানেন।
তবে আফসোস এই কাজটি এখনো মর্যাদার আসন পায়নি। কাজটাকে ছোট ও গর্হিত কাজ হিসেবেই দেখা হয়। তাই কপিপেস্ট মার্কা কোনো লেখার'ই কদর নাই। বহু বই কিন্তু কপিপেস্ট করে লেখা হয়েছে। বহু কবি সাহিত্যিক অন্যের লেখা, একটু ঘুরিয়ে পেচিয়ে লিখে নিজের নামে ছাপিয়ে দিয়েছেন। যাই হোক, আমি এখনও কিছু লেখার সময় হুমায়ূন আহমেদকে অনুসরন করি। এবং সব সময় করে যাব।
ওয়েব জগত কপি পেস্টের আঁখড়া।
কপি হয় ফেসবুক স্ট্যাটাস। ফেসবুকের একটা পেজ নতুন কিছু লিখলেই কপিপেস্ট হতে হতে আমাদের ওয়ালে এসে হাজির হয়। গুগলে আপনার কোনো লেখার শিরোনাম লিখে সার্চ দিন কত ব্লগ সাইটে যে আপনার লেখা কপিপেস্ট হয়ে গেছে আপনি নিজেও তা জানেন না। আমার মতো এক তুচ্ছ ব্লগারেরও অসংখ্যা লেখা বিভিন্ন পোর্টালে আছে। কেউ কেউ দয়া করে নাম দেয়, কেউ কেউ নামও দেবার প্রয়োজন মনে করে না।
স্কুল কলেজ অফিস আদালত প্রতিষ্ঠান সবখানেই কপিপেস্টের কারবার।
ফটোকপির মেশিনের আবিস্কারককে এজন্য একবার থাংকু দিয়ে দিন। সহজ সরল সত্য কথা হলো- কপি পেস্ট আমাদের আচরনে, চালচলনে, পোষাকে আশাকে, লেখনিতে সবকিছুতে। এ জীবনটাই কপিপেস্টময়। কপিপেস্ট কে না করে? কপিপেস্ট থেকে যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়। তাতে ক্ষতি কি? কপিপেস্ট ছাড়া কি কোন লেখা শেষ হয়। এই লেখাটি লিখতেই আমাকে কয়েকবার কপি পেস্ট করতে হয়েছে। হা হা হা। তবে, নিশ্চিত থাকুন এখানে আপনার কোনো লেখা কপিপেস্ট করি নাই।
প্রতিটা সৃষ্টির একজন স্রষ্টা থাকে।
আর তার কাছে তার প্রতিটি সৃষ্টি সন্তানের মত। সে চায় সেই সৃষ্টির স্রষ্টা যে তিনি তা সবাই জানুক। কপি আর পেস্টের খেলায় আমরা যখন তাকে হারিয়ে ফেলি তখন তার মনের অনুভূতি কেমন হতে পারে তা বুঝবেন আপনি যদি নিজেও কোনো কিছুর স্রষ্টা হন। তাই কপি আর পেস্টের সময় এই বিষয়টা মাথায় রাখা দরকার। স্রষ্টার প্রাপ্য মর্যাদা যাতে নষ্ট না হয় তার চেষ্টা করুন।
যারা আপনার লেখা বা আঁকা ছবি চুরি হয়েছে বলে হা-হুতাশ করেন, তাদের বলছি- কপি আর পেস্ট হয় তেমনি কিছু যা সবার ভালো লাগে। তাই কপিপেস্ট মানেই সেই সৃষ্টিকে আরো ছড়িয়ে দেয়া। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। মানুষ আনন্দ পাচ্ছে অথবা ভালো কিছু জানছে শিখছে এটাইতো অনেক বড় পাওয়া। প্রতিটা সৃষ্টির স্রষ্টারাতো এটাই চায়। নাইবা জানলো বা চিনলো সেই সৃষ্টির স্রষ্টাকে। বর্তমানে অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলো কপিপেস্টের রাজা। তারা শুধু শিরোনামটা বদলে দেন।
অসাম্প্রদায়িক শান্তিপূর্ণ আদর্শ ছড়িয়ে পরুক।
যুক্তি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে মতের বিরুদ্ধে মত শক্তিশালী হোক। বল প্রয়োগ করে অনেক কিছু করাই সম্ভব হতে পারে, কিন্তু একটা আদর্শকে দমিয়ে রাখা কখনই সম্ভব নয়। মনটা আকাশের মতো বিশাল করুন। তাহলে এই রকম ছোট-খাটো ব্যাপার নিয়ে আপনার মন খারাপ হবে না। ধরুন, একটা ছেলে বা একটা মেয়ে অযথা আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করছে, এখন তারা যদি ফালতু আড্ডা না দিয়ে অনেক সময় ব্যয় করে একটা কপিপেষ্ট লেখা লিখে- তাহলে কি সেটা ভালো নয়? সেই লেখাটা দু'জন পড়লেও তো ভালো।
ভালো কিছুর অনুকরণ করাটা- মন্দ কাজ নয়।
যেমন আমি হুমায়ূন আহমেদকে অনুকরন বা নকল করতে চেষ্টা করি। এটা কিছুতেই খারাপ কাজ হতে পারে না। খারাপ কাজ হলো সেটা- ধরুন, কিছু ছেলে মেয়ে মদ খাজা বা ইয়াবা খাচ্ছে- এখন আমি যদি তাদের অনুকরণ করে মদ খাজা বা ইয়াবা খান সেটা অবশ্যই খারাপ। সেটা আপনার-আমার জন্যও খারাপ, আপনার- আমার পরিবারের জন্যও খারাপ, দেশের জন্যও খারাপ। আর একটা লেখা বা ছবি কপি করা খুব বেশি খারাপ কাজ নয়। মানুষকে ভালো বাসুন। ক্ষমা করতে শিখুন। ত্যাগ কতে শিখুন। তাহলে আপনি সুখী মানুষ হতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৯ দুপুর ২:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




