প্রায় প্রতিদিনই দেখি মসজিদ নির্মানের জন্য টাকা তুলছে।
রাস্তার ফুটপাতে মাইক বাজিয়ে অথবা বাস যখন রাস্তার জ্যামে পড়ে তখন এক হুজুর ইনিয়ে বিনিয়ে মসজিদ নির্মান ও এতিম বাচ্চাদের কথা বলে লোকজনদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। এটা প্রতিদিনের চিত্র। শুধু ঢাকা শহরে না, সমস্ত বাংলাদেশে'ই মসজিদ নির্মানের জন্য টাকা নিচ্ছে। বাংলাদেশে তো মসজিদের অভাব নেই- আর কত মসজিদ নির্মান করতে হবে? আজ থেকে বিশ বছর আগে বা ত্রিশ বছর অথবা চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগেও মসজিদ নির্মানের জন্য টাকা সংগ্রহ করা হতো। আজও হয়। ছোট্র এই বাংলাদেশে মসজিদ নির্মান কি কোনো দিন শেষ হবে না? এত এত মসজিদ সারা বছর খালি পড়ে থাকে। শুক্রবার জুম্মার নামাজে কিছু লোকজন হয়। এরপর আর কোনো খোজ খবর থাকে না। আমি মসজিদ নির্মানের বিপক্ষে নই। আল্লাহর ঘর হবে, ভালো কথা। কিন্তু একই এলাকায় চারটা পাঁচটা মসজিদ কি দরকার? যখন আযান শুরু হয় সব গুলো মসজিদে একসাথে আযান হয়। কোনো মসজিদের আযানের ধ্বনি ভালো করে শুনতে পারি না। আজকাল মসজিদ নির্মান নিয়েও ব্যবসা হচ্ছে। সরকারী জায়গায় হুট করে একটা দোতলা মসজিদ বানিয়ে ফেলে। ধার্মিক দেশ। তাই মসজিদ ভাঙ্গে না। প্রতিটা মসজিদে কমিটি থাকে। তাদের আবার--- এই আলোচনাতে না-ই গেলাম।
সমগ্র বাংলাদেশে যত গুলো মসজিদ আছে, তত গুলো লাইব্রেরী নেই।
কিন্তু লাইব্রেরী থাকলে নতুন প্রজন্মের জন্য ভালো হতো। সর্বোপরি দেশের জন্য উপকার হতো। এই সমাজের লোকজনদের মসজিদ নির্মানে যতটা আগ্রহ দেখা যায়- লাইব্রেরী নির্মানে নয়। কেন এই হীনমন্যতা? আমার তো ভাবতেই ভালো লাগে- সুন্দর একটা লাইব্রেরী। সেখানে অসংখ্য ছেলে-মেয়ে চুপ করে বই পড়ছে। জ্ঞান আহোরন করছে। এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কি আছে! বহু ধনী লোক নিজের নামে অথবা তার বাপ মায়ের নামে ফাউন্ডেশন করে। সেই ফাউন্ডেশন থেকে ভালো-ভালো কাজ করার উদ্যেগ নেয়। সেলাই মেশিন কিনে দেয়, রিকশা বা ভ্যানগাড়ি কিনে দেয়, দরিদ্র লোকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়, বুড়ো লোকদের হজ্ব করিয়ে আনে। সব মিলিয়ে তারা আসলেই ভালো কাজ করে। কিন্তু তারাও লাইব্রেরী করতে চায় না। লাইব্রেরী করলেও তো কোনো ক্ষতি নেই। গত দশ বছরে বইয়ের পাঠক অর্ধেকে নেমে এসেছে।
দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে, অথচ কিছু কিছু উন্নয়ন একেবারেই হচ্ছে না। যুগের পর যুগ পার হয়ে যাচ্ছে।
রাস্তার জ্যাম আজ থেকে বিশ বছর আগেও ছিল, আজও আছে। বিশ বছর আগে- লোকজন দৌড়ে দৌড়ে বাসে উঠতো, বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, সিট পাওয়া যেত না- আজও একই অবস্থা। চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগেও ভিক্ষুক ছিল, আজও ভিক্ষুক আছে। আগেও মানুষ রাস্তায়-ফুটপাতে ঘুমাতো- এখনও মানুষ ফুটপাতে ঘুমায়। আগেও চুরী, ডাকাতি, ছিনতাই হতো- আজও হয়। আগেও মানুষ বেকার ছিল- এখনও বেকার আছে। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে অসংখ্য ঘর বাড়ি ভেঙ্গে যায়, ডুবে যায়। দেশ স্বাধীন হয়েছে এত বছর হলো- অথচ নদী ভাঙন আজ পর্যন্ত রোধ করা গেল না? আচ্ছা, মেয়র সাঈদ খোকন দায়িত্ব গ্রহনের পর কি কি কাজ করলেন? এই তালিকাটা কোথায় পাবো? অনেক বছর তো হয়ে গেল? আজও ফুটপাত হকারদের দখলে, সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে যায়। পুলিশের ঘুষ বন্ধ হয়নি। নেশা দ্রব্য বিক্রি বন্ধ হয়নি। সরকারী অফিস গুলোতে দূর্নীতি বন্ধ হয়নি।
বাংলাদেশে একটাও স্বতন্ত্র টিভি চ্যানেল বা দৈনিক পত্রিকা নেই।
সবাই আছে ব্যবসার ধান্দায়। সত্যিকার নিউজটা পরিস্কার ভাবে কেউ দেয় না। আসলে, কেউ'ই দৈনিক পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল মানুষের সেবা করার জন্য দেয় না। দেয় ব্যবসা করার জন্য। এই সমাজে সত্যিকার মানব দরদী কেউ নেই। সবাই মানব দরদী সাজে। ১০০% সত্য লেখার ক্ষমতা কারো নেই। হয়তো কেউ সত্য বললে, পরের দিন তাকে গ্রেফতার করা হবে অথবা টিভি চ্যানেল বা দৈনিকটাই বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই ভয়েও অনেকে সত্য বলতে ভয় পায়। টিভি চ্যানেল বা দৈনিক পত্রিকার কথা বাদ দিলাম- আমরা তো ব্লগিংটা পর্যন্ত শান্তিতে করতে পারছি না। ডিজিটাল যুগে চোরাই পথে ব্লগে প্রবেশ করতে হয়। এর চেয়ে দুঃখের আর কি আছে? আমরা কার কাছে এর সমাধান চাইবো? মাঝে মাঝে মনে হয়- এই দেশে জন্ম গ্রহন করে পাপ করে ফেলেছি।
যারা ফুটপাত দিয়ে বাইক চালায় তাদের আমার অকথ্য ভাষায় গালি দিতে ইচ্ছা করে।
মনে মনে হয়তো গালি দেই-ও। ফুটপাত দিয়ে বাইক চালানোর শিক্ষা তাদের কে দিয়েছে? বাবা মা? তাদের কি বিবেক নেই? মনুষ্যত্ব বোধ নেই? শিক্ষা নেই? যারা উলটো পথে গাড়ি চালায়, তারা কি মানুষ? যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করে রাখে তারা কি ভালো মানুষ? আইন আছে, তবে আইনের প্রয়োগ নেই। পুলিশকে এক শ' টাকা দিলেই পুলিশ খুশি। সত্য কথা বলতে কি, যদি পুলিশ তাদের ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে। দূর্নীতিবাজদের ধরার জন্য দুদক এর কি দরকার? এই দুদক কোনো দিনও দূর্নীতিবাজদের ধরবে না। বরং তারা নিজেরাই দূর্নীতি করবে। করছে। দেশের সাধারন মানুষেরা জানে এই সমাজে কারা দূর্নীতি করে। করছে। সরকার দুদকের অফিস বন্ধ করে দিক। আর দেশের জনগনের কাছে জানতে চাক- দূর্নীতিবাজ কারা। জনগন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে দূর্নীতিবাজ কারা।
আগামী অর্থ বছরের বাজেট হয়ে গেছে।
বাজেট নিয়ে আমি কিছু বলবো না। ফেসবুকে ছবি দেখলাম বাজেট নিয়ে আওয়ামীলীগের একদল লোক আনন্দ মিছিল করলো। অর্থ মন্ত্রী বাজেট পেশ করলো- আর একদল লোক রাস্তায় বের হয়ে আনন্দ মিছিল করলো। যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলায় জিতে তাহলে আনন্দ মিছিল করা যেতে পারে। বাজেট এর জন্য আনন্দ মিছিল?? এই আনন্দের কারন কি? দেশে আর দরিদ্র মানুষ থাকবে না? ফুটপাতে কেউ ঘুমাবে না? কেউ চিকিৎসার অভাবে মরবে না? কেউ ফুটপাতে বাইক চালাবে না? কেউ কাউকে দিনের বেলা হাতুড়ি বা রাম দা দিয়ে কুপিয়ে মারবে না? দেশে চুরী ছিনতাই হবে না? কেউ দূর্নীতি করবে না?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৯ সকাল ৭:২৫