somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জীবনের গল্প- ১২

১৭ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি যখন ঢাকা শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই- তখন গাড়িওয়ালা লোকদের উপর আমার খুব রাগ হয়। ঢাকা শহরে এত মানুষজন যে শান্তিতে একটু হাঁটাও যায় না। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে যায়। এর মধ্যে বাস গাড়ি সিএনজি এমন বেপরোয়া ভাবে চালায় যে, জীবনটা হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয়। রাস্তায় জমে থাকা ময়লা পানি গাড়ির চাকায় ছিটকে এসে গায়ে লাগে। ড্রাইভার এমন ভাব করে যেন এটাই অলিখিত নিয়ম। চারিদিকে বিকট হর্ন। কে কার হর্ন শুনছে কে জানে!

আবার এই আমিই যখন কোথাও গাড়ি করে যাই, তখন মনে হয়, ঢাকা শহরের মানুষজন গুলো খুব অদ্ভুত। এরা কোনো নিয়ম কানুন মানে না। ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় হাঁটছে। আবার হুটহাট রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। এর মধ্যে গাড়ি চালানো যে কি মুশকিল তা তারা বুঝে না। হর্ন দিলেও সরে না। হঠাত রাস্তার মাঝখানে এক হাত উঁচু করে রাস্তা পার হয়। উন্নত দেশ হলে এই রকম লোককে গ্রেফতার করা হতো। কেউ নিয়ম কানুন মানছে না। এই জাতির ছোট বেলা থেকেই নিয়ম কানুন শেখানো হয় না।

এই কয়েকদিন আগে, সকালে এক জরুরী কাজে যাব, দেরী হয়ে যাচ্ছে- কোনো বাস থামছে না। অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছি। শেষে এক চলন্ত বাসে লাফ দিয়ে উঠলাম। দরজা লাগানো। আমি দরজায় ঝুলে আছি। আমি খুব করুনভাবে বলছি প্লীজ দরজা খুলুন। আমি পড়ে যাচ্ছি। বাসের ভেতর থেকে একসাথে অনেকজন বলে উঠলো- জায়গা নেই। জায়গা নেই। এদিকে আমার অবস্থা কাহিল। যে কোনো সময় আমি পরে যেতে পারি। আবার বললাম, প্লীজ দরজাটা খুলুন। হেলপারের দয়া হলে দরজাটা একটু ফাঁক করলো। সেই ফাঁক দিয়েই আমি সাপের মতো ঢুকে গেলাম। বাসের অনেক যাত্রী রেগে গেল, কেউ কেউ অনেক উপদেশ দিল। আমি চুপ করে তাদের সবার মন্তব্য শুনলাম। আসলেই বাসের ভিতর খুব ভিড়। দাড়াবার জায়গাও নেই।

বাসটা কিছু দূর যাওয়ার পর, আমার মতোই আরেকটা ছেলে দরজার কাছে ঝুলে আছে আর বলছে- দরজাটা একটু খুলুন। আমার খুব তাড়া আছে। বাসের ভেতর থেকে অনেকে বলছে জায়গা নেই। জায়গা নেই। বাসের দরজায় ঝুলে থাকা ছেলে কিছুতেই তা শুনছে না। মানছে না। তাদের সাথে আমিও বলছি- জায়গা নেই। জায়গা নেই। অন্য যাত্রীদের থেকে আমি বেশি রেগে গিয়ে বললাম- নির্বোধের মতো ঝুলে আছেন কেন? আপনাদের কি কোনোদিন জ্ঞান বুদ্ধি হবে না? মুহূর্তের মধ্যে আমার মানসিকতা বদলে গেল! আজিব! একটু আগে আমি নিজেই এই কাজ করেছি।

একদিন আমি এক অফিসে গেলাম। চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করবো। চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে অল্প চিনেন। চেয়ারম্যানের পিয়ন বলল, আজ দেখা হবে না স্যার খুব ব্যস্ত। আপনি আগামীকাল আসেন। আমি বললাম, স্যারকে কি আমার নামটা ঠিক করে বলেছিলেন? রিসিপশনের দু'টি মেয়ে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার খুব লজ্জা লাগছে। আমি খুব করে পিয়নকে বললাম, তুমি কি গিয়ে শুধু আমার নামটা বলো। আমি দুই মিনিটের বেশি সময় নেব না। আমি নিজে শ্লিপে আমার নামটা বড় বড় করে লিখে দিলাম। এবং বললাম স্যারকে গিয়ে শ্লিপটা দেখাও। তখন তিনি নিজে এসে আমাকে ভেতরে নিয়ে যাবেন। পিয়নটি ভেতরে গেলে এবং একটু পর ফিরে এসে বলল- স্যার বলেছে আজ দেখা হবে না। আপনি অন্য কোনোদিন ফোন করে আসবেন।

আমি প্রচন্ড অপমানিত বোধ করলাম। মাথা ঝিম-ঝিম করতে শুরু করলো। মনে হচ্ছে এ মুহূর্তে আমি অজ্ঞান হয়ে যাব। অপ্রত্যাশিতভাবে অপমান হলে সেই মুহূর্তে আমি চোখে অন্ধকার দেখি। সিড়ির রেলিং ধরে অতি কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। রাগ করে লিফটে না গিয়ে আমি সতের তলা থেকে হেঁটে নামলাম। ঠিক তখন আমার মকবুলের কথা মনে পড়ল। মকবুল একদিন আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। আমি তার সাথে দেখা করিনি। দুই ঘন্টা তাকে বসিয়ে রেখে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:০২
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×