গত দুই বছরে অসংখ্য সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি দেখেছি। বিপুল আনন্দ পেয়েছি। দেড় দুই ঘন্টা- মনে হয় বেশ আনন্দে পার করলাম। যারা মুভি দেখেন, তারা জানেন সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি গুলো কত অসাধারন হয়। এমনকি ইন্ডিয়ান মুভি থেকে সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি অনেক উন্নত। ওরা নায়কের চেহারা নিয়ে ভাবে না। কুচকুচে কালো, রোগা পটকা একজন পর্যন্ত ওদের মুভির নায়ক হতে পারে। দেখলে মনে হবে গাঁজা খোর। সেই রোগা পটকা, গাঁজা খোর লোকটা পর্যন্ত দারুন অভিনয় করে। লক্ষ কোটি দর্শক মুগ্ধ হয়। আমি নিজেও মুগ্ধ হই।
নায়ক রজনীকান্তের অনেক গুলো মুভি দেখলাম। মুগ্ধ হলাম। আজ নায়ক রজনীকান্তকে নিয়ে এই পোষ্ট।
তাঁর চেহারা ‘নায়কসুলভ’ নয়। মুখে কাঁচা-পাকা দাড়ি। মাথায় পড়েছে টাক। কিন্তু এই মানুষটির সিনেমা মুক্তি পেলে বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে হইচই পড়ে যায়। নাম তাঁর রজনীকান্ত। শুধু সিনেমা দিয়ে নয়, সিনেমার বাইরের কাজ দিয়েও তিনি মানুষের মন কেড়েছেন। সামাজিক অনেক কর্মকাণ্ডে এই নায়ক নিজ
থেকে অংশ গ্রহন করেন। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশী পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেতাদের একজন রজনীকান্ত। বর্তমানে ছবি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ কোটি রুপি নেন রজনীকান্ত। রজনীকান্ত তার মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছেন ‘ধনুশ’ নামের এক ছেলের। এই ছেলেও তামিল মুভির নায়ক। রোগা পটকা- কিন্তু দূর্দান্ত অভিনয় করে। একসাথে চল্লিশ পঞ্চাশ জনকে মেরে তক্তা বানিয়ে দেয়। একজন রোগা পটকা লোক কিভাবে পঞ্চাশ জনকে মেরে বারোটা বাজিয়ে দেয়- না দেখলে বিশ্বাস করবেন না।
রজনীকান্তের জন্ম দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে। সিনেমা দুনিয়ায় প্রবেশের আগে রজনীকান্ত খুব দরিদ্র জীবন যাপন করেছেন। দূর্দান্ত একজন অভিনেতা। ভারতের বেঙ্গালুর শহরে বেড়ে উঠেন রজনীকান্ত। বেঙ্গালুরেই তার জন্ম মারাঠি পরিবারে। অসচ্ছল জীবনের সাথে লড়াই করে কাটিয়েছেন তার শৈশব। তার যখন এগারো বছর বয়স তখন তার মা মারা যান। ১৯৭৩ সালে মাদ্রাজ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন অভিনয়ে ডিপ্লোমা পড়ার জন্য। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম সিনেমা (অপূর্ব রাগাঙ্গাল) মুক্তি পায়।
রজনীকান্ত লতা রাঙ্গাচড়িকে বিয়ে করেন ১৯৮১ সালে। তার দুই সন্তান। স্ত্রী রাঙ্গাচড়িকে এথিরাজ মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন, যিনি তাদের কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য রজনীকান্তের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্যে গিয়েছিলেন। শত শত সিনেমায় অভিনয় করেছেন রজনীকান্ত। তাঁর একটি সংলাপ ভক্তদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এটি হলো ‘কীভাবে বা কখন কী করব, তা আমি কখনোই তোমাকে বলব না। যখন করব, তখনই বুঝতে পারবে।’
ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজ্য তামিলনাড়ু। রাজধানী চেন্নাই। সেখানে রুপালি পর্দার নায়ক-নায়িকাদের রাজনৈতিক মঞ্চে আসার ঐতিহ্য চালু আছে। একই পথে গা ভাসিয়েছেন কিংবদন্তি দক্ষিণী অভিনেতা রজনীকান্ত। ‘রজনীকান্ত’ এই মহান অভিনেতার আসল নাম নয়, এটি উনার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য ব্যবহৃত নাম। এই অভিনেতার আসল নাম রাখা হয়েছিলো কিংবদন্তী মারাঠি বীরের নাম অনুসারে- ‘শিবাজী রাও গায়কোয়াড়’।
যে মুভি গুলো দেখে আমি এই নায়কের ভক্ত হয়েছি- মুন্দ্রু মুদিচু (১৯৭৬), বিল্লা (১৯৮০), চালবাজ (১৯৮৯), থালাপাথি (১৯৯১), আন্নামালাই (১৯৯২), ভাষা (১৯৯৫), পারায়াপ্পা (১৯৯৯), চন্দ্রমুখী (২০০৫), শিবাজী : দ্য বস (২০০৭), এন্থিরান (২০১০)।
তামিল, তেলেগু, কানাড়া, মালায়ালাম, হিন্দি এবং এমনকি বাংলা ছবিতেও অভিনয় করেছেন রজনীকান্ত। বর্তমানে ৬৯ বছর বয়স রজনীকান্তের। ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এতোটাই জনপ্রিয় যে, উনাকে মিডিয়ায় বলা হয় ‘গড অব ইন্ডিয়ান সিনেমা’! স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন একবার বলেছিলেন যে, উনি রজনীকান্তকে একজন অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন। রজনীকান্ত ইন্ডিয়ার ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত। চেন্নাইয়ের রজনীকান্ত ভক্তরা তার সম্মানে প্রায় ৪০ ফুট উঁচু একটি মূর্তি বানিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করিয়েছিলেন!
বলিউডের অনেক রথী-মহারথী মূলত দক্ষিণ ভারতের সম্পদ। তামিল, তেলুগু, মালায়ালাম থেকে শুরু করে সমগ্র দক্ষিণ ভারত কোনও কোনও দিক থেকে বলিউডের চেয়েও শক্তিশালী। ১৯৬৯ সালে তামিলনাড়ু রাজ্য গঠিত হওয়ার পর থেকে যে ৬ জন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৫ জনই অভিনেতা বা চিত্রনাট্য নির্মাতা।
রজনীকান্ত বেঁচে থাকুন আরো অনেক দিন। কে জানে, এখনো হয়তো আরো কিছু করে দেখানোর বাকি আছে এই মহান হিরোর!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:৫০