এই কয়েক বছর আগের কথা।
রাত তখন একটা। গিয়েছিলাম- গোপাল গঞ্জ। এখন, বাইকে করে ডাক বাংলোয় ফিরছি। ঝাঁকিয়ে শীত পড়েছে। ফরিদপুরের বিখ্যাত শীত। বাইক শাঁ শাঁ করে যাচ্ছে। শীতে কাঁপছি। দু'পাশে ধানক্ষেত। পথ আর শেষ হয় না। হঠাত মাঝ রাস্তায় বাইক বিগড়ে গেল। বাইক চালক হানিফ ভাই বলল- সামনে কিছু দূর হেঁটে গেলেই ডাক বাংলো পেয়ে যাবেন। দশ মিনিট লাগবে। একা যেতে পারবেন না? আমি খুব সাহস দেখিয়ে বললাম- কোনো ব্যাপার'ই না।
অন্ধকার রাস্তা। ভয় ভয় লাগছে।
বিশাল এক খন্ড মেঘ চাঁদকে ঢেকে রেখেছে। খুব সাবধানে হাঁটছি। নানান রকম শব্দ হচ্ছে। ঝি ঝি পোকা, কুকুরের ঘেউঘেউ, গাছের পাতার শন শন শব্দ, বাতাসের শব্দ। অনেক ধরে আমি ডাকবাংলোর উদ্দেশ্যে হেঁটে চলেছি। অনেকক্ষন পর বুঝতে পারলাম, আমি ভুল পথে চলে এসেছি। দশ মিনিট লাগার কথা, মনে হচ্ছে আমি ঘন্টার বেশি সময় ধরে হেঁটেছি। নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। আশে পাশে কোনো বাড়ি ঘর দেখতে পাচ্ছি না। আমি পথ হারিয়েছি।
হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে- একটা গাছের নিচে এসে দাড়ালাম।
মনে হচ্ছে বাকি রাতটা এখানেই কাটাতে হবে। চুপচাপ বসে আছি। কি করবো বুঝতে পারছি না। হঠাত ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো। চারপাশে নানান গাছ পালার শন শন শব্দ। এই শব্দে গায়ে ভয়ের কাঁপন ধরে। আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম কে বা কারা যেন বলছে- আহা ছেলেটা!! আমি প্রচন্ড ভয় পেলাম। আবার সেই বাতাসের ফিস ফিস শব্দ হলো, আহ-হা, বেচারা! আমি চারপাশে ভালো করে তাকালাম। অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। ঠিক এই সময় আবার শুনতে পেলাম আহ-হা লোকটা। আমি চারপাশে ভালো করে তাকালাম। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। শুধু জমাট বাঁধা অন্ধকার।
এরকম তো হবার কথা নয়।
ভয়ে আমার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। অনেক গুলো কুকুর। আমার চারপাশ ঘিরে খুব ঘেউ ঘেউ করছে। যেন বলছে, তুমি চলে যাও, তুমি চলো যাও, প্লীজ তুমি দ্রুত চলে যাও। অবশ্যই আমার মনের ভুল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি জোরে তিনবার শ্বাস নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। কোন দিকে যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি, জানি না। কিন্তু চারপাশ থেকে সেই করুন সহানুভুতিময় সেই সুর, আহ-হা বেচারা, আহ-হা ছেলেটা, আহ-হা লোকটা।
ওই তো ডাক বাংলো দেখা যাচ্ছে। ...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৯ সকাল ৭:৫৬