somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

যেভাবে আমি দূর্নীতিবাজ হলাম

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দারিদ্রতা খুব খারাপ।
দরিদ্র মানূষকে কেউ সালাম দেয় না। সম্মান করে না। কোনো কিছুতেই দরিদ্র মানুষের ডাক পড়ে না। আমরা পাঁচ ভাই। কোনো বোন নেই। আমার বাপ ছোট একটা চাকরী করতো। বাবা আমাদের কোনো শখ পূরন করতে পারে নি। বাপের দিন আনি, দিন খাই অবস্থা। দরিদ্রতার কারনে আমাদের কোনো ভাইয়ের লেখাপড়া খুব একটা হয়নি। আমার কোনো কামকাজ নেই। আমি আমার বন্ধুর মুদি দোকানে বসে থেকে, বেশির ভাগ সময় পার করেছি। অভাবে অভাবে পার করেছি বত্রিশটা বছর। কোনো দিন যে আমি সীমাহীন টাকার মালিক হবো তা আমি কল্পনাও করিনি। আজ আমি সীমাহীন টাকার মালিক। অসংখ্য লোক আমার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। যে-ই আমাকে দেখে সালাম দেয়। অসংখ্য লোক আমার চামচামি করে। আমার বউ প্রতিমাসে চল্লিশ-পঞ্চাশ লাখ টাকা খরচ করে। আমার আলমারি ভর্তি থাকে টাকায়। আমার বউ খরচ করতে করতে ক্লান্ত।

এই ঢাকা শহরে আমার নামে-বেনামে তেইশ টা বাড়ি আছে।
সব গুলো বাড়িই সাত তলা করে। ফ্লাট আছে অনেক গুলো। আসলে সঠিক হিসাব আমার নাই। আমার ম্যানেজার বলতে পারবে। মালোশিয়া আর লন্ডনে আমার বাড়ি আছে। সারা বছর খালি পড়ে থাকে। বছরে দুই একবার আমি যাই। তবে কোনো মন্ত্রী বা সচিব বেড়াতে গেলে আমার বাড়িতে উঠে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড আর লন্ডনে আমার ব্যবসা আছে। খুব অল্প সময়ে আমি আমার জ্ঞান আর মেধা দিয়ে সীমাহীন টাকার মালিক হয়েছি। অবশ্য এই সম্পদ অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, আমি যাকে ইচ্ছা তাকে বেসুমার দেই। যাকে ইচ্ছা দেই না। আল্লাহ আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। প্রচুর টাকা হলে অন্য সবাই যা করে- আমিও তাই করেছি। বাপ আর মায়ের নামে স্কুল, কলেজ আর মাদ্রাসা করেছি। টিভি চ্যানেল করেছি, পত্রিকা বের করেছি। যে পর্যন্ত আমার সরকার ক্ষমতায় ছিল সে পর্যন্ত আমার কোনো সমস্যা হয়নি। সরকার বদলে যাবার পর বিরাট বিপদে পড়লাম। জেলখানায়ও যেতে হয়েছে। তবে বেশিদিন থাকতে হয়নি। টাকা দিয়ে সব শালাকে কিনে নিয়েছি। হে হে....

একসময় আমি দিনের পর দিন অভাবে পার করেছি।
কেউ আমাকে সাহায্য সহযোগিতা করে নি। টাকার প্রতি আমার অনেক রাগ। মনে মনে নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞতা করেছিলাম, একদিন এমন টাকা করবো, এত টাকা করবো, যেন আমার মতো টাকা আর কারো না থাকে। আমি তা করেছি। আমার ঘরে বাহাত্তুর বস্তা টাকা ছিল। আমি বাজি রেখে বলতে পারি, আমাদের দেশের কোনো ব্যবসায়ীর কাছে এত নগদ টাকা নাই। সারা বাংলাদেশে নগদ টাকা আমারই সবচেয়ে বেশি ছিল। ক্ষমতা বদলের সাথে সাথে একদিন পুলিশ আমার বাসায় এলো। আমাকে এরেস্ট করলো না। কিন্তু সব নগদ টাকা তারা ভাগবাটায়ারা করে নিল। টাকা পয়সা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না। যা কামিয়েছি আমার চৌদ্দ পুরুষ পায়ের উপর পা তুলে খেলেও ফুরাবে না। আমি আমার সমস্ত ভাইদের গাড়ি বাড়ি করে দিয়েছি। ব্যবসা ধরিয়ে দিয়েছি। সবার নামে ব্যাংকে কোটি টাকা রেখেছি। তারা প্রত্যেকে উন্নত জীবন যাপন করছে এখন।

দূর্নীতি করলেও আমি কিন্তু কিছু ভালো কাজ করেছি।
অসংখ্য ছেলেপেলেকে চাকরীর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখানেও আমার স্বার্থ আছে। চাকরী দেওয়া মানে ওদেরকে আমি কিনে নিয়েছি। ওরা আমার কথায় এখন, উঠে-বসে। গ্রামে বেশ কিছু মাদ্রাসা আর স্কুল আমি চালাই। আমি পানির মতো টাকা খরচ করি। প্রতিমাসে টাকা দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হই আমি। সরকারের বহু সেক্টরে পানির মতো টাকা ঢালি। তারা চুপ করে থাকে। টাকা খাওয়ার জন্য জিব বের করে বসে থাকে সরকারী কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে দুদক সবচেয়ে এগিয়ে। টাকা খরচ করতে আমার একটুও কষ্ট লাগে না। মাছের তেল দিয়ে মাছ ভাজার মতোন অবস্থা। এখন আমার সরকার আর ক্ষমতায় না আসলে আমার কিছু যায় আসে না। আমি যা করার করে নিয়েছি। আমার গাড়িতে আমার চ্যানেলের স্টিকার লাগানো থাকে। তবে ইদানিং তথাকথিত সাংবাদিকেরা আমার কাছে এসে হাত কচলায়। দিয়ে দেই তাদের কিছু। এরা অল্প পেলেই খুব খুশি হয়।

আমার মতো দূর্নীতিবাজ এ সমাজে বহু আছে।
বরং তারা আমার চেয়ে টাকার মালিক বেশি। তাদের জমিজমার অভাব নাই। দূর্নীতির টাকা নিরাপদে রাখার জন্য তাদের পনের বিশ জন করে উকিল আছে। সবার নামে বেনামে ত্রিশটা চল্লিশটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। দেশের মানুষ খুব ভালো করেই জানে কারা কারা দূর্নীতিবাজ। কিন্তু কারো চিৎকার করে বলার সাহস নাই। বললে, সাইজ হয়ে যাবে। তাই সব বোবা হয়ে গেছে। দুদক নিয়েও কোনো ভয় নেই। দুদক হলো বিরোধী দলের দূর্নীতিবাজদের ধরার জন্য। ওরা মাসে মাসে পেয়ে গেলে অন্ধ হয়ে যায়। বোবা হয়ে যায়। তবে মামলা হলেও ভয় নেই। অগ্রিম জামিন নিয়ে বের হয়ে যাওয়া যায়। সব রকম ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। মানুষ সবাই জানে আমি কিভাবে এত টাকার মালিক হলাম। তবুও মানুষ আমার চামচামি করে, আমাকে সালাম দেয়। টাকা দিয়ে তিন চার হাজার মানুষ আমরা সব সময় কিনে রাখি। মনে রাখবেন, এই সমাজে সবচেয়ে বেশি লোক দেখানো কাজ করে দূর্নীতিবাজরা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:০৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×