১। দারিদ্যের সবচেয়ে বড় দোষ হলো- দারিদ্যে মানুষের নৈতিক চরিত্রটা বদলে যায়, নষ্ট হয়ে যায়, পচে যায়। কিন্তু নজরুল লিখেছেন, 'হে দারিদ্র, তুমি মোরে করেছো মহান'। এটা একেবারে ফালতু কথা।
২। আমি খুব ভীতু মানুষ। কিন্তু কারো সাহস দেখলে আমার ভীষন ভাল লাগে।
ভীতু আর দুর্বলদের একটা অসুবিধে আছে, তারা কোনো ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাদের দিয়ে যে যা খুশি করিয়ে নিতে পারে। অবশ্য রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- 'ওরে ভীরু, তোর ওপরে নেই ভুবনের ভার।'
৩। সত্য ও জ্ঞান অনুসন্ধানে ইবনে আল-হাতেমের উক্তিঃ আমি নিরন্তর জ্ঞান ও সত্য খুঁজে বেড়িয়েছি, এবং আমার উপলব্ধি হলো, স্রষ্টার দ্যুতি ও নৈকট্যলাভের জন্য জ্ঞান ও সত্যানুসন্ধানের চেয়ে উত্তম কোনো পথ নেই।
৪। বই হচ্ছে অভিজ্ঞতা।
এতকাল ধরে মানুষের জ্ঞানের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা বইয়ের পাতায় লিখে রাখা হয়েছে আমাদের জন্য। ভবিষ্যতে যারা আসবে, তাদেরে জন্য আমাদেরও কিছু রেখে যেতে হবে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'পূর্ব-পশ্চিম' পড়া শুরু করেছি। যদিও আগে একবার পড়েছি। আমি যখন যে বইটা পড়ি, তখন মনে হয়, সেই লেখক আমার সামনে বসে আছেন। লেখকের নিঃশ্বাসের শব্দও যেন শুনতে পাই!
৫। হাসপাতালে ঢুকে দেখি হাসপাতালটা বেশ জোরেসোরে ঝাড়ামোছা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেয়াল থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে- হাতের দাগ, পানের পিক, নাকের পোঁটা। আজেবাজে পোষ্টার, ওষুধের বিজ্ঞাপন সব ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। লোকজনের মহা উৎসাহ। একজন ক্লিনার শুনি আরেকজনকে বলছে, হাত চালাইয়া কাম করন লাগব মিয়াভাই, বঙ্গবন্ধু দ্যাশে ফিরত্যাছেন, যদি মেডিক্যালে আইয়া দ্যাহেন দেয়ালে নাকের পোঁটা, তাইলে খবর আছে! তার কথা শুনে আরেকজন ক্লিনার অবিশ্বাসের সঙ্গে বলে উঠল, তোমারে কে কইছে যে, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে আইবেন, বঙ্গবন্ধু বাইচ্যা আছে কি না জানো তুমি ?
বাইচ্যা নাই, বঙ্গবন্ধু বাইচ্যা নাই? এই হারামির পুত, তরে কে কইল বঙ্গবন্ধু বাইচ্যা নাই ?
লোকটা মারমুখী চেহারা দেখে অন্য আরেকটা বয়স্ক ক্লিনার মধ্যস্থতা করার জন্য এগিয়ে এসে বলল, বঙ্গবন্ধু বাইচ্যা আছেন, এরকম মানুষরে পাকিস্তান মারবার সাহস পাইবে না, তাগো কোমর ভাইঙ্গা গ্যাছে গা। তার উপর বিরানব্বই হাজার সৈন্য এখনও আমাগো এহানে বন্দী। তাই চিন্তা কইরো না। তারপর একটু থেমে লোকটা বলল, তোমরা তো বঙ্গবন্ধুর নেচার জানো না, জানি আমি। হঠাত কইরা একদিন স্যান্ডেল পায়ে দিয়া মুজিবকোট গায়ে চাপাইয়া মেডিল্যাল হাসপাতাল পরিদর্শনে আইয়া পড়বেন, তখুন এত অপরিস্কার দেখলে তারে আমরা জবাব দিমু কী ?
আনোয়ারা সৈয়দ হোক # উপন্যাস সমগ্র-২
৬।
১০ জানুয়ারি, ১৯৭২। তেজগাঁও বিমান বন্দরে সিলভার রঙ এর একটা কমেট বিমান অবতরণ করল। হাজার হাজার মানুষ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের গার্ড দলকে তোয়াক্কা না করে ছুটে গেল বিমানের দিকে। বিমানের ভেতর তাঁদের প্রিয় নেতা। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে এলেন তাঁর বাংলায়। স্বাধীন বাংলায়। রোগা হয়ে গেছেন অনেকটাই, সব সময় ব্যাকব্রাশ করা চুলগুলোও অবিন্যস্ত। স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় ফিরে এসেই মিশে গেলেন জনতার সাথে।