বহু বছর আগের কথা।
১২/১৩ বছর তো হবেই। আমার ছোট ভাইকে প্রায়ই দেখতাম সামু ওপেন করে কি যেন লিখে, পড়ে এবং হাসে। ছোট ভাই আবীর আইটি এক্সপার্ট। বর্তমানে একটা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। ছোট ভাই আমাকে সামু সম্পর্কে সব কিছু বুঝিয়ে বলল। ও সামুতে কম্পিউটার সংক্রান্ত পোষ্ট দিত। আমি ওর পাশে বসে টানা তিন মাস সামু দেখলাম, পড়লাম এবং বুঝতে চেষ্টা করলাম। তখন আমার লেখালেখি ডায়েরীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ছোট ভাই বলল, ডায়েরীতে লেখার দরকার নাই। দিন বদলে গেছে। আধুনিক হতে হবে। সামুতে লিখো। ব্লগাররা পড়বে, এমন কি লেখায় ভুলভাল থাকলে ব্লগাররা তা ধরিয়ে দিবে। শুধরে নেওয়ার সুযোগ আছে। ডায়রীতে লিখলে কেউ তা পড়বে না। ভুলভাল থেকেই যাবে।
ছোট ভাই সামুতে একাউন্ট খুলে দিলো।
আমি শুরু করলাম ব্লগিং। সেই ব্লগিং আজও অব্যাহাত আছে। দশ বছর হয়ে গেলো। লিখছি, পড়ছি, মন্তব্য করছি। ব্লগিং সে এক অন্য দুনিয়া। আনন্দময় দুনিয়া। এদিকে ছোট ভাই অফিসের কাজের চাপে ব্লগিং বন্ধ করে দিলো। কিন্তু আমি সমানে ব্লগিং করেই চলেছি। প্রথম প্রথম আমি একটিভ কম ছিলাম সামুতে। গত তিন বছর ধরে আমি সামুতে বেশ ভালো ভাবেই আছি। আমি জোর গলায় বলতে পারি, লাস্ট দুই-তিন বছর এমন কোনো পোষ্ট নাই আমি পড়ি নাই, মন্তব্য করি নাই। তবে প্রথম ৬/৭ বছর মন দিয়ে ব্লগিং করি নাই। আগে তো আমি, কেউ আমার পোষ্টে মন্তব্য করলেও আমি তার উত্তত দিতাম না। এই জন্যও কত কঠিন কথা যে আমাকে শুনতে হয়েছে। ব্লগের নিয়ম মেনে চললেই, ব্লগে শান্তিতে থাকা যায়।
এই সামুতে এসে আমি অনেক কিছু শিখেছি।
প্রতিদিন নানান বিষয় নিয়ে পোষ্ট আসতে থাকে। আসতেই থাকে। সেসব গুরুত্বসহকারে পড়ে যাই। সামুতে এমন দিন গেছে একটা পোষ্ট প্রথম পাতায় দশ মিনিটও থাকতো না। কেউ ভুলভাল তথ্য দিলে সিনিয়ররা তা শুধরে দিতেন। এই সামুতে দুষ্টলোকেরা কখনই সুবিধা করতে পারে নি। দিন শেষে তাদের চলে যেতে হয়েছে। বহু তথাকথিত ব্লগারকে দেখেছি ক্যাচাল লাগাতে এসে ধরাশায়ি হয়ে ফিরে গেছে। এমনও দেখেছি অন্য ব্লগ থেকে সামুতে এসে মাস্তানি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। শেষে নাজেহাল হয়ে পালিয়ে গেছে। অন্য ব্লগের ব্লগারদের দেখেছি সামুতে এসে সামুর ব্লগার নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতো। অনেক আড্ডাতেও আমি এটা দেখেছি। আমাকেও সামু থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল।
ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের একজন শিক্ষক।
উনি আমাকে খুব পছন্দ করেন। বিভিন্ন বিষয়ে লিখতে আমাকে দারুন উৎসাহ দিতেন। একদিন স্যার আমাকে বললেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ১০০ পর্বের একটা ধারাবাহিক লেখা লিখো। উনি আমাকে অনেক বই পত্র দিয়েও সহযোগিতা করেছেন। আমি সামুতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ১০০ পর্বের একটা লেখা লিখলাম। পরে অবশ্য এটা বই আকারেও বের হয়েছে। এরপর স্যার বললেন, বাংলা এবং বিশ্ব সাহিত্যের একশ' সেরা বই নিয়ে লিখো। তার আগে সেই বই গুলো পড়ে নাও। সেই বই গুলো পড়লাম। আমি সামুতে বাংলা ও বিশ্ব সাহিত্যের সেরা এক'শ বই নিয়ে লিখলাম। এরপর স্যার বললেন, এক'শ সেরা মুভি নিয়ে লিখো। তাও লিখলাম এই সামুতে। পুরোনো ব্লগার যারা আছেন তারা আমার সেই সমস্ত লেখার কথা জানেন। আর নতুন ব্লগাররা সার্চ দিলেই লেখা গুলো পেয়ে যাবেন।
আজ সামু ব্লগের ১৪ তম বর্ষপূর্তি।
এটা একটা বিশাল ব্যাপার। এক যুগেরও বেশি সময়! আমাদের মতো একটা দেশে টিকে থাকা খুব মুশকিল। নিজের চোখেই দেখেছি- বহু ব্লগ এসেছে, আবার চলে গেছে। কেউ স্থায়ী হতে পারেনি। সামু এখনও ঠিকে আছে। দিনশেষে যোগ্যরাই টিকে থাকে। সামু জন্মের পর থেকে সামুর ওপর বিপদ-আপদ কম আসেনি। কিন্তু সামু সব বিপদ আপদ মোকাবেলা করে টিকে আছে। ইনশাল্লাহ টিকে থাকবে। একটা ব্লগে অনেক খরচ। সেই আলোচনায় এখন যাবো না। যাই হোক, আমি সামুর মঙ্গল কামনা করি। সামুর সমস্ত ব্লগাদের জানাই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আসুন আমরা সবাই ব্লগে মিলেমিশে থাকি। কেউ কাউকে যেন খোঁচা দিয়ে কথা না বলি। একজনের প্রতি অন্যজনের শ্রদ্ধা থাকতেই হবে। সামুর জয় হোক। জয় বাংলা।