সকাল নয়টা।
বাসা থেকে বের হয়েছে শাহেদ জামাল। সে বড় রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। তার ইচ্ছা সে আজ যাবে ইজতেমাতে। অনেক ছবি তুলবে। কিন্তু অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরেও সে কোনো বাস পাচ্ছে না। বেশ রাগ হচ্ছে শাহেদ জামালের। এমন সময় তার সামনে একটা স্কুটি থামলো। স্কুটিতে এক মেয়ে বসা। হেলমেটের কারনে মেয়েটার চোখ মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে মেয়েটা বেশ সুন্দরী তা বুঝা যাচ্ছে। মেয়েটা বলল, কোথায় যাবেন? বলেন, আমি নামিয়ে দিচ্ছি।
শাহেদ মেয়েটির স্কুটিতে বসলো। তার বেশ ভালো লাগছে। মেয়েটার শরীর থেকে মিষ্টি একটা গন্ধ আসছে। শাড়ির আঁচল পতাকার মতোন উড়ে এসে লাগছে শাহেদের মুখে। এর আগে শাহেদ কখনো কোনো মেয়ের স্কুটারে উঠেনি।
মেয়েটা বলল, আপনাকে কোথায় নামাবো?
শাহেদ বলল, আপনার যেখানে ইচ্ছা।
মেয়েটা বলল, ইচ্ছা-মিচ্ছা বুঝি না। স্পষ্ট করে বলেন।
শাহেদ বলল, তাহলে ঝিগাতলা। তল্লাবাগ। মিষ্টির দোকানের কাছে।
মেয়েটা বলল, ঝিগাতলা যাওয়ার পথে স্টার রেস্টুরেন্ট পড়বে। সেখান থেকে কিছু খেয়ে নিতে চাই। আসলে আমি সকালে নাস্তা খাইনি।
শাহেদ বলল, ওকে। ওকে। শুকরিয়া। শুকরিয়া।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে মেয়েটা যখন হেলমেট খুলল, তখন শাহেদ মেয়েটাকে চিনতে পারলো।
মেয়েটার নাম লাবনী।
শাহেদদের পাশের বাসায় থাকে। শাহেদ মেয়েটাকে তার বেলকনি থেকে প্রায়ই দেখেছে। মেয়েটা স্নান শেষ করে বেলকনিতে এসে
অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকে। অবশ্য কখনও লাবনীর সাথে কথা হয়নি শাহেদের। তবে চোখে চোখে অনেক কথা হয়ছে তো বটেই। যাই হোক, লাবনী বলল, কি খাবেন বলেন?
শাহেদ বলল, আপনি যা খাবেন তাই খাবো। কোনো অসুবিধা নেই। হে হে ....
এভাবেই সম্পর্ক গুলো হয়। হয়ে যায়।
আবার সম্পর্ক ভাংতেও সময় লাগে না। বরং সম্পর্ক হওয়া সহজ কিন্তু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা খুব মুশকিল। শাহেদ বেকার। লাবনী আকিজ গ্রুপে চাকরী। বেশ ভালো চাকরী। অনেক টাকা বেতন। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি আছে। সপ্তাহে দুই দিন ছুটি। বিশাল অফিস। খুব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন আর সুন্দর করে সাজানো। শাহেদ বেশ কয়েকবার লাবনীর অফিসে গিয়েছে। অফিসে গেলেই লাবনী শাহেদকে বার্গার আর কফি খাওয়ায়। অফিস শেষ করে লাবনী হাতিরঝিলে শাহেদের সাথে দেখা করে। স্কুটি রেখে তারা হাতিরঝিলে নৌকায় ঘুরে বেড়ায়। তখন তাদেরকে বেশসুখী মানুষ বলে মনে হয়।
লাবনীর বাবা পুলিশ।
বর্তমানে রমনা থানায় আছেন। একদিন লাবনীর বাবা বললেন, লাবনী তুমি কি শাহেদকে পছন্দ করো? তাকে বিয়ের কথা ভাবছো? তুমি যদি তাকে পছন্দ করো তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। বাবার কথা শুনে লাবনীর চোখে পানি চলে এলো। মনে মনে বলল, বাবা তুমি এত ভালো কেন? তোমার মতো ভালো বাবা দুনিয়াতে আর একজনও নেই। সেদিন রাতেই শাহেদকে খেতে ডাকা হলো। লাবনীর মা বলল- লাবন্য আজ তুই রান্না করবি। লাবনী ভালো রান্না জানে। রাতে সবাই একসাথে খেলো। খুব গল্প করলো। শাহেদের গল্প শুনে তারা তিনজন খুব হাসলো।
লাবনীর বিয়ে হয়ে গেল।
শাহেদ জামাল লাবনীকে পেয়ে মুগ্ধ! শাহেদ মনে মনে ভাবে 'আমি নিশ্চিয়ই ভালো কোনো কাজ করেছি এজন্য আল্লাহ এত ভালো একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন'। লাবনী যেহেতু বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তাই লাবনীর বাপ মায়ের অনুরোধে শাহেদ লাবনীর বাসায় উঠে এসেছে। লাবনী অফিস শেষ করে এসে দেখে শাহেদ তার শ্বশুরের সাথে দাবা খেলছে। অথবা শ্বাশুরির সাথে লুডু খেলছে। শাহেদ খুব অল্প সময়ে শ্বশুর শ্বাশুরির মন জয় করে নিয়েছে। ছুটির দিনে তারা একসাথে ভূতের মুভি দেখে। দেশের রাজনীতির পরিস্থিতি নিয়ে তুমুল আলাপ আলোচনা করে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩