গ্রামটা সুন্দরবনের কাছে।
গ্রামের নাম রসুলপুর। এই গ্রামে আমি এসেছি। এই গ্রামে বিশাল এক বাড়ি আছে। এই বাড়িতেই আমি ক'টা দিন থাকবো। কিন্তু লোকজন মাত্র তিনজন। স্বামী স্ত্রী আর একজন বুড়ো কাজের লোক। স্বামী স্ত্রীর বয়স বেশী নয়। অনেক বিষয় সম্পত্তি আছে বলে বাড়ির কর্তা কোনো চাকরি বাকরি করেন না।
এই দম্পতি সন্ধ্যা রাতেই ঘুমিয়ে পড়েন।
বুড়ো কাজের লোকটার একই দশা। সে যাই হোক, আমাকে থাকার জন্য বিশাল এক ঘর দেয়া হলো। বিদ্যুৎ নেই, হারিকেন জ্বলছে একটা। সন্ধ্যারাতে ঘুমানোর প্রশ্নই আসে না। হারিকেনের আলোতেই একটা বই পড়া শুরু করলাম। বইয়ের নাম 'নরওয়েজিয়ান উড' হারুকি মুরাকামি'র লেখা। বইটির পাতায় পাতায় বিষণ্ণতা, বেদনা, যন্ত্রণা, যৌনতৃপ্তি, প্রেম, অসম সম্পর্ক। অসাধারণ একটি প্লটের উপর লেখা হয়েছে বইটি।
কম্বল গায়ে দিয়ে হারিকেনের আলোয় বই পড়ে যাচ্ছি। হঠাৎ মনে হলো আমি ছাড়া এ ঘরে অন্য কেউ একজন আছে। আমার সারা শরীর শির শির করে উঠলো। অজানা এক ভয়ে বুক কাঁপছে। গলা শুকিয়ে আসছে। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। অথচ কোনো অশরীরির অস্তিত্ব যেন অনুভব করছি। চিৎকার করে কাউকে ডাকবো কিনা বুঝতে পারছি না। আর ডাকলেও কেউ শুনবে না। এক ঘর থেকে আরেক ঘরের দূরত্ব অনেক।
হঠাৎ মনে হলো আমার মতো গরীবকে মেরে ভূতের লাভ কি?
এই ভেবে অনেক সাহস সঞ্চয় করে হারিকেনটা উঁচু করে সামনের দিকে তাকালাম। দেখি জানালার কাছে অন্ধকারে কে যেন বসে আছে। সাদা কাপড় জড়ানো গায়ে। চোখ কচলে আবারও ভালো করে দেখে নিলাম, ভুল দেখছি কিনা। না ভুল নয়। ঠিকই দেখছি। বিকট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে একজন স্থির বসে আছে।
আমার কিছুই করার নেই এটা ভাবতেই আমার সাহস বেড়ে গেল। তখন মনে মনে বললাম- আয় শালা কে কী করবি। আসলে কেউ যখন খুব ভয় পেয়ে যায়, যখন দেখে আর রক্ষা নেই, এবার গেছি তখন হঠাৎ অনেকখানি সাহস বেড়ে যায়। আমার হয়েছে এই অবস্থা। ছায়ামূর্তি দিকে তাকিয়ে চোখ মূখ খিচিয়ে বললাম, আয় শালা কে কী করবি।
এটা সাহস বা বীরত্ব নয়। সাময়িক পাগলামি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:১৩