যার যা প্রবৃত্তি এবং ক্ষমতা সেটার চর্চা না করলে সে সুখী হয় না, আনন্দ পায় না। শিং-এ শান দেওয়ার জন্য হরিণ শক্ত গাছের গুঁড়ি খোঁজে, কলা গাছে শিং ঘষলে সুখ পায় না, আনন্দ পায় না। আমরা আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনকে কত অপ্রয়োজনীয় কাজেই ব্যস্ত রাখি! টেলিভিশন দেখে, আজাইরা আড্ডা দিয়ে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করি। অথচ আমাদের জীবনের আয়ু সীমিত।
চলছে বইমেলা। ৫/৬ হাজার নতুন বই তো বের হবেই। বইপত্র নিয়ে এলোমেলো পড়তে গিয়ে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। বই পড়ার আগে ভাবতে হবে- আমি এই বইটি কেন পড়ব? বইটি থেকে কী চাই। যা পড়া হয়, তা আত্মস্থ করা গুরুত্বপূর্ণ। বই পড়ার মূল উদ্দেশ্য থাকতে হবে আত্মিক উন্নয়ন। আত্মিক উন্নয়ন মানে এই না যে- বই পড়লেই রাতারাতি জীবন বদলে যাবে।
আমি এ বছর বইমেলায় যাবো না।
ইদানিং বইমেলায় যাওয়া, এবং ছবি তোলা একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অগা, মগা, যগা বই লিখেছে, এবং টাকা দিয়ে বই ছাপাচ্ছে। সবচেয়ে দুঃখজনক এই অগা-জগা-মগা'রা মনে করছে তাদের বই শতাব্দীর সেরা বই। তাদের যেন মাটিতে পা পড়ছে না। এই আত্মবিশ্বাস তারা পেলো কি করে? বইমেলায় সবচেয়ে নোংরা বিষয় হলো কিছু লেখকদের আচার আচরন। তারা এমন ভাব ধরেন যেন জনগন তাদের বই কেনার জন্য হামলে পড়ছে। তাদের সাথে ছবি তোলার জন্য অস্থির হয়ে আছে। টিভি ক্যামেরা দেখলে তথাকথিত লেখকরা পাগল হয়ে যাচ্ছে। একজন লেখক কেন এত লজ্জাহীন হবেন? তার মধ্যে কেন চাটুকার আর দালালদের মতোন জ্বী হুজুর, জ্বী হুজুর ভাব থাকবে?
আপনি যদি ভালো লিখেন, তাহলে আপনার বইয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়ার দরকার হবে না। পাঠক ভালো বইয়ের সন্ধান নিজেরাই করে নেয়। হুমায়ূন আহমেদ কখনও নিজের বইয়ের বিজ্ঞাপন দেন নি। অবশ্য তার কোনো ফেসবুক একাউন্ট ছিলো না। এযুগের তথাকথিত বা মৌসুমি লেখকেরা ফেসবুককে প্রচার প্রচারনার হাতিয়ার হিসেবে নেয়। কিছুক্ষন পরপর তারা ফেসবুকে পোষ্ট দিতেই থাকে। তাদের অবস্থা হয়েছে এমন- ''গায়ে মানে না আপনে মোড়ল'' টাইপ। তিনিই সেরা লেখক। তার তুলনা হয় না। আমার অমুক বই বের হয়েছে, আমি আমি বিকেল পাচ টায় অমুক স্টলে থাকবো। অটোগ্রাফ এবং সেলফি হবে। সাধারন মানুষ মৌসুমি বা তথাকথিত লেখকদের কর্মকান্ড দেখে হাসে এবং মনে মনে অকথ্য ভাষায় খালি দেয়। একজন লেখক হবেন সহজস সরল ভালো মানুষ। চালাক হবেন না, বদমাশ হবেন না, কৃপণ হবেন না। ধান্ধাবাজ বা তেলবাজ হবেন না। হবেন আন্তরিক, হৃদয়বান এবং মানবিক।
বালছাল টাইপ একটা বই লিখে তথাকথিত লেখককূল যে গড়িমা দেখায় তাতে মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়। এই সমস্ত মৌসুমি লেখক একজন আরেকজনের চেয়ে এগিয়ে। কেউ কেউ নিজের বইয়ের প্রচারকের জন্য অতি সস্তা বেহায়াপনা করে। তাদের আচার আচরন এবং ফেসবুকের পোষ্ট গুলো নির্লজতা প্রকাশ পায়। তাদের নির্লজতা দেখে আমি লজ্জা পাই। এরা বাংলা সাহিত্যের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। একজন সত্যিকারের লেখক কখনও এমন হবেন না। হুমায়ূন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ইত্যাদি লেখকদের দেখে তাদের কিছু শেখা উচিত। হুমায়ূন আহমদের মতো কেউ নেই। যে কিনা লেখালেখি করার জন্য চাকরী ছেড়ে দিয়েছেন। এরকম তথাকথিত লেখকরা পারলে এমনটা করে দেখান। এই সমস্ত লেখকদের চেয়ে বেশ্যা ভালো।
শ্রদ্ধেয় চাঁদগাজী ঠিকই বলেন- ''প্রতি বছর বইমেলাতে ৫/৬ হাজার গার্বেজ বই বের হয়।'' এই গার্বেজ বই যারা লিখছে, বিশ্বাস করুন তারা চাটুকার, লোভী, দালাল, ভন্ড, মিথ্যাবাদী। লেখক হওয়ার মতো যোগ্যতা তাদের নেই। এদের কোনো সাধনা নেই। এমনকি তারা বিশ্বসাহিত্যের কিছুই পড়ে নাই। এই টাইপ মানুষজন কোনোদিনও লেখক হতে পারবে না। তারা দুই চারটা বই লিখে 'জাতে উঠতে চায়'। অতীত মুছে ফেলতে চায়। কেউ কেউ নিজের বইয়ের কাটতি বাড়ানোর জন্য নানান লোকজনের হাতে টাকা ধরিয়ে বলে প্লীজ এক কপি কিনুন। ফোন দেয়, ম্যাসেজ দেয়- নানান রকম ভাবে অনুরোধ করে। এই সমস্ত লেখককে কান ধরে বইমেলা থেকে বের করে দেওয়া উচিত। এবং এই সমস্ত লেখকদের বই যারা টাকার বিনিময়ে ছাপায় তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
বই কারা কিনবে?
দরিদ্র দেশ। বেকারের দেশ। দুষ্টলোকের দেশ। চাটুকার, ভন্ড, মিথ্যাবাদী আর দালালদের দেশ। দূর্নীতিবাজদের দেশ, চোরের দেশ। এই দেশে জনসংখ্যা অনেক হলেও পাঠক একেবারে কম। বইলেখা এবং কেনার মধ্যেও নানান রকম ধান্ধা আছে। একুশে বইমেলা এতটাই উৎসবে পরিনত হয়েছে যে, অধিকাংশরা বই না কিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেলায় ঘুরেই কাটিয়ে দেয়। সহজ সরল সত্য কথা হলো- এই সমস্ত তথাকথিত লেখকদের কবিতার বই তিন শ' বের করলেও ত্রিশটা বিক্রি হবে না। গল্প বা উপন্যাসের অবস্থাও একই রকম।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০৭