দেশভাগ হওয়ার পরও আমাদের দেশটা ভালো ছিলো।
মানুষ ভালো ছিলো। মানুষের মধ্যে মানবতা ছিলো। ৭১ এ যুদ্ধের পরও দেশটা ভালো ছিলো। মানুষ ভালো ছিলো। ৭৫ এর পরে দেশ অধপতনে যেতে শুরু করে। আজও তা অব্যাহত আছে। এখন তো দেশ তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখন এই যুগের মানুষ, বর্তমান সমাজের মানুষ গুলো হৃদয়হীন। প্রচন্ড মানবতাহীন। এই সমাজের মানুষ গুলোর মধ্যে কোনো মায়ামমতা নেই। এরা প্রত্যেকে যার যার জায়গা থেকে ভয়াবহ রকমের নিষ্ঠুর। এই সমাজের মানুষ এখন শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবে। নিজের পরিবারের বাইরের কাউকে নিয়ে ভাবে না। ভাবটা এরকম দুনিয়া জাহান্নামে যাক, আমি ভালো থাকলেই হলো। সবাই শুধু আমার আমার করছে। দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র নিয়ে কেউ ভাবে না। আমরা যা চিন্তা করি, সমাজও তাই চিন্তা করে। আমরা যা ভাবি, সমাজও তাই ভাবে। প্রকৃতপক্ষে সমাজ কিছু ভাবে না, আমরাই ভাবি।
দেশ এবং সমাজের এই অবস্থার জন্য দায়ী কে?
দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এই কথাটা আমি মোটেও বিশ্বাস করি না। যারা বলে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে তারা কেন এই কথা বলে আমি বুঝি না। উন্নয়ন হলে শুধু তাদের হয়েছে। এবং তাদের ছত্রছায়ায় থাকা লোকজনের হয়েছে। মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, ফ্লাইওভার ইত্যাদি দিয়ে ভরে ফেললেও দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে বলা ঠিক হবে না। আজও মানুষ রাস্তায় ঘুমায়। রাস্তায় বের হলেই হাজার হাজার ভিক্ষুক দেখা যায়। দেশে বেকারের অভাব নেই। চিকিৎসার মান ভালো না। সরকারী হাসপাতাল গুলোতে দালাল। সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না বললেই চলে। এদিকে দেশে দূর্নীতি অব্যাহত আছে। নব্য ধনীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সরকার দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করেছিলো। দু'চারজনকে গ্রেফতার করে এখন সেই বিষয়ে আর কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যায় না। সব কিছু বদলে যায়, এটাই নিয়ম। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে।
ভালো চাকরি না করলে, ধনী না হলে সমাজ দাম দেবে না, যে করেই হোক, কারি কারি টাকা করতে হবে। গাড়ি, বাড়ি করতে হবে। কারনে অকারনে দেশ বিদেশ ঘুরতে হবে। এমন চিন্তাই আমাদের মাথায় সবসময় ঘুরপাক খায়। সাধারণত একটা পরিবারে শান্তি বজায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্তই যতক্ষণ সব সদস্যের মানসিকতা মোটামুটি একই থাকে। পরিবেশ এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষের মানসিকতাও বদলায়। আজ আমরাও বদলে গেছি। অনেকই বদলে গেছে। বদলে গেছে আমাদের মূল্যবোধ আর মনুষ্যত্ব। প্রাইভেট টিউটর ছাড়া পরীক্ষায় ছেলেমেয়েরা পাস করতে পারে না! ভালো স্কুল-কলেজে পড়তে গেলে ডোনেশন ছাড়া প্রবেশাধিকার পাওয়া যায় না। খাদ্যে ভেজাল, দূর্নীতি, রাস্তাঘাটে আইন না মানা, লোক দেখানো কাজকর্ম করা ইত্যাদি বিষয় গুলো আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, মনে-প্রাণে না হলেও এসবই কিন্তু আমরা মেনে নিচ্ছি। মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ না মেনে কোনো উপায় নেই। প্রতিকারের কোনো পথ নেই। কে প্রতিকার করবে? যোগ্য ও দক্ষ লোকের আমাদের বড় অভাব।
সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলো কেমন আছে?
ন্যাশনাল টিউব, এটলাস হোন্ডা, সোর্ড ব্লেড, মিল্কভিটা, বাংলাদেশ চা বোর্ড, আমার বাড়ি আমার খামার, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন, নিরাপদ খাদ্য, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, বাংলা একাডেমী, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন ইত্যাদি এইসব প্রতিষ্ঠান গুলো সারা বছর কি কি কাজ করে? কত টাকা সরকারের লাভ হয়? এইসব প্রতিষ্ঠান থেকে কারা লাভবান হচ্ছে? মানুষের জীবনের সমস্যাগুলো এই সমাজ থেকে, বর্তমান সামাজিক ব্যবস্থা থেকে জন্ম নিচ্ছে। মানুষের মধ্যে মুক্তির যে অদম্য আকাঙক্ষা ও প্রবণতা, সেটাই মার্কসবাদ–লেনের দিকে টেনে নিয়ে যায়। ধর্মের নামে মিথ্যা, অনাচার, হত্যা, ধর্ষন- গণতন্ত্রের নামে মিথ্যা ও অনাচার, ইতিহাস নিয়ে মিথ্যা ও অনাচার বাংলাদেশে আমাদের জীবনকে বিপর্যস্ত ও বিকৃত করে রেখেছে। কার্যকর কোনো আদর্শ নেই, নীতি নেই, পরিকল্পনা নেই, কর্মসূচি নেই।
একই কথা আমি বারবার বলি।
আমাকে বার বার বলতে হয়। যে পর্যন্ত অনিয়ম গুলো ঠিক না হবে, সে পর্যন্ত আমাকে বলেই যেতে হবে। আমরা ভালো থাকলেই সমাজ ভালো থাকবে। আমরা ভালো কিছু করলেই সমাজ থেকে ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে। আমরা নিজেদের পরিবর্তন করলেই সমাজের পরিবর্তন হবে, সমাজ বদলাবে। আমাদের এই সমাজ আমাদেরই সারিয়ে তুলতে হবে। ইউরোপ থেকে লোকজন এসে আমাদের সমাজ বদলে দিবে না। স্বাধীন বাংলাদেশে গত ৪৯ বছর ধরে আমরা অসুস্থ, রুগ্ন, বিকারপ্রাপ্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছি। অবস্থাকে আমাদের উন্নত করতে হবে। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির পরিচালনা নীতি বাধ্য করতে হবে। তার জন্য যা যা করা দরকার সবই করতে হবে। কর্তব্য পালন না করলে আমরা উন্নতি করতে পারব না। আসুন আমরা সবাই দেশকে ভালোবেসে সমাজকে পাল্টাই!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৫৮