আজ বাসায় চার দিন ধরে আমি একা।
সুরভি গিয়েছে তার বাবার বাড়ি। ইতালি থেকে সুরভির বোন এসেছে। সে খুব খুশি। দুই জমজ বোন সারাদিন ঘুরে বেড়াচ্ছে। বান্ধবীদের বাসায় যাচ্ছে, শপিং করছে, বইমেলায় যাচ্ছে, দুপুরে এবং রাতে তারা বাইরে খাচ্ছে। আমি ফেসবুকে সুরভির ছবি দেখি। লাইক দেই। সুরভি আমাকে যেতে বলেছে। আমি বলেছি আমি বিশেষ ব্যস্ত আছি। সে গাল ফুলিয়ে আছে। আমি গিয়ে তাকে না আনলে সে বাসায় ফিরবে না। এদিকে আমি একা বেশ ভালোই আছি। মুভি দেখছি, বই পড়ছি, লিখছি। ভোরে পার্কে বেড়াতে যাচ্ছি। জীবনটা বেশ আনন্দময় মনে হয়। বেশ উপভোগ্য।
সমস্যা হলো আমি রাতে ভয় পাই।
আমি একা থাকতে পারি না। ছোটবেলা মার কাছে ঘুমাতাম। ছোটবেলা কি(?) বিয়ে করার আগ পর্যন্ত মার সাথেই ঘুমাতাম। ঘুমের মধ্যেও একটা হাত মায়ের গায়ে দিয়ে রাখতাম। কোনো ভয়ডর কিছুই করতো না। এখন আমি থাকি ছয় তলায়। মা থাকে নিচ তলায়। এখন তো আমি মাকে গিয়ে বলতে পারি না- মা আমি ভয় পাই। তোমার কাছে থাকবো। মুভি দেখে ঘুমাতে যাই রাত তিনটায়। বিছানায় যাওয়া মাত্র ভয় হতে শুরু করে। মনে হয় ঘরে আমি ছাড়া অন্য কেউ আছে। সে হাঁটে, তার নিঃশ্বাসের শব্দ পর্যন্ত শুনতে পাই। মনে হয় আমি ঘুমালে সে আমাকে গলা টিপে আমাকে মেরে ফেলবে।
রাতে তীব্র ভয় আমাকে গ্রাস করে।
ভয়ের চোটেই কম্বল দিয়ে চোখমুখ ঢেকে ঘুমিয়ে যাই। গভীর ঘুম। ঘুমিয়েও শান্তি নাই। অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নে দেখি মরুভূমিতে আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি। চারিদিকে ধু ধু মরুভূমি। আশে পাশে কেউ নেই। আমি একা। হাঁটছি তো হাঁটছি'ই। পথ আর শেষ হয় না। তৃষ্ণায় গলা বুক শুকিয়ে গেছে। কোথাও পানি নেই। গতকাল স্বপ্ন দেখলাম- অচেনা অজানা শহরের পথে আমি হাঁটছি। আমার পেছনে অদ্ভুত চেহারার সব লোকজন আসছে। আমি থামলে তারাও থামে। তাদের দেখে আমি ভয় পেয়ে দৌড় দেই। তারাও তখন দৌড় দেয়। তাদের হাতে রাম দা। দা'য়ে তাজা রক্ত লেগে আছে। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি ক্লান্ত। বিধ্বস্ত।
কাল রমনা পার্কে গেলাম।
কি মনে করে বাচ্চাদের দোলনায় বসলাম। বেশ কিছুক্ষন দুললাম। খুব ভালো লাগলো। কিন্তু বেশিক্ষন বসতে পারি নি। পার্কের লোক এসে আমার সামনে ফুঁ দিয়ে বাশি বাজালো। বাশি বাজিয়ে বুঝিয়ে দিলো এই দোলনা তোমার জন্য না। শিশুদের জন্য। তুমি বড় হয়ে গেছো। ইচ্ছা হলো গার্ডকে বলি, ভাই প্লীজ আর দশ মিনিট বসতে দেন। দোলনায় বসার সাথে সাথে আমার ছোটবেলা ফিরে এসেছে। ছোটবেলা মা আমাকে নিয়ে যেত রমনা পার্কে। মা একটা বিশাল গাছের নিচে বসে থাকতো। আমি ইচ্ছা মতোন দৌড়ঝাপ দিতাম। দোলনা ছিলো আমার ভীষন প্রিয়। আমি দোলনায় বসতাম, মা পেছন থেকে ধাক্কা দিতো। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও আমি বাসায় ফিরতে চাইতাম না।
সুরভি বাসায় নেই, তাই সকালে হোটেলে নাস্তা খাই।
আমি যে হোটেলে নাস্তা খাই। সেই হোটেলের ওয়েটার গুলো আমাকে দেখলে ভীষন খুশি হয়। একজন বলে আমার এখানে বসেন, আরেকজন বলে আমার এখানে বসেন। খুব খাতির যত্ন করে আমাকে খাওয়ায়। আমি তাদের প্রত্যককে দশ টাকা করে দেই। যে আমাকে না খাওয়ায় তাকেও দশ টাকা দেই। যে ছেলেটা পানি দেয় বা যে ছেলেটা সালাত বানিয়ে দেয় তাদেরও দশ টাকা করে দেই। মাত্র চল্লিশ টাকায় ওরা এত খুশি কেন হয় আমি বুঝি না। সামান্য চল্লিশ টাকায় আজকের দিনে কি হয়! যাই হোক, মা ফোন করে বলল, সারাদিন কই থাকিস? কি করিস? দুপুরে বাসায় খাবি। আজ আমি রান্না করেছি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৮