আসসালামু আলাইকুম ও রহমাতুল্লাহ।
জ্বীন শব্দের অর্থ গুপ্ত, অদৃশ্য, লুকায়িত। জ্বীন হচ্ছে ইসলাম ধর্মের মূল গ্রন্থ কুরআনে বর্ণিত একটি জীব বা সৃষ্টি। যদিও বৈজ্ঞানিকেরা এখনও জ্বীনের অস্তিত্বের প্রমাণ আবিষ্কারে সক্ষম হন নি। মানুষ জ্বীনদের দেখতে পায় না। কিন্তু জ্বীনরা মানুষদেরকে দেখতে পায়। কুরআনে জ্বীন সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল করা হয়েছে। জ্বীন জাতি মানুষের মত পুরুষ ও স্ত্রী জাতিতে বিভক্ত। জ্বীনেরা নোংরা ও গন্ধময় জায়গায় থাকতে পছন্দ করে, যেখানে মানুষরা ময়লা এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে রাখে। পায়খানা এবং প্রস্রাব করার জায়গাগুলোতে জ্বীনদের অবাধ বিচরণ। জ্বিনরা মানুষের ফেলে দেওয়া খাবার খায়। এছাড়া হাড়, গোবর ইত্যাদি খায়। জ্বীনদের টাকা পয়সা লাগে না। জামা কাপড় লাগে না। ইন্টারনেট লাগে না। ডাক্তার হাসপাতাল লাগে না।
গঠন অনুযায়ী জ্বীন তিন ধরনের হয়ে থাকে।
এক প্রকারের জ্বীন পাখার মাধ্যমে বাতাসে ওড়ে, এক প্রকারের জ্বীন সাপ এবং মাকড়শার আকারে থাকে। 'মারিদ' নামক এক প্রকার জ্বীন আছে যারা জ্বীনদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এরা খুব পাওয়ারফুল। মানুষের বসবাসের স্থানে সাধারণত জ্বীন থাকে না। তারা মানুষের পরিত্যক্ত স্থানে থাকতে পছন্দ করে। তাদের অধিকাংশই মানুষের কাছ থেকে দূরে নির্জন এলাকায় বসবাস করে। তবে কিছু প্রজাতির জ্বীন মানুষের সাথে লোকালয়ে থাকে, যেমনঃ ক্বারীন জ্বীন। মারাত্মক জ্বী। মানব সৃষ্টির মূল উপাদান কাদামাটি হলেও মানুষ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কাদামাটি নয়। ঠিক তেমনি জ্বিনের পূর্ব পুরুষ আগুণের তৈরী হলেও জ্বীন মানেই আগুন নয়। জ্বীনরা ধর্ষন করে না, দূর্নীতি করে না, চুরী, ছিনতাই বা ডাকাতি করে না।
মানুষের রক্তের সাথে জীনরা মিশতে পারে।
জ্বীনেরা মানুষের আকার ধারণ করতে পারে এবং মানুষের মত কথা বলতে পারে। মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর আকারও ধারণ করতে। মানুষের ওপর জ্বীন ভর করাকে আছর বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যখন মানুষের নিজের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং সাময়িক স্মৃতি বিভ্রম ঘটে। একে আছর করাও বলে। জীনকে বশে আনা যায়না ইহা স্রেফ মনগড়া কথা। জ্বিন জগৎ একটি পৃথক জগৎ। সে জগৎ মনুষ্য জগৎ ও ফিরিশতা জগৎ থেকে আলাদা। জ্বীনদের মধ্যেও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী রয়েছে। তাঁদের কেউ মুসলমান, কেউ খ্রিষ্টান, কেউ হিন্দু, কেউ বৌদ্ধ। জ্বীনরা চাইলে অনেক ভালো মন্দ অনেক কিছুই করতে পারে। ভালো জ্বীনরা সাধারন চুপচাপ থাকে। আর দুষ্ট জ্বীনেরা মানুষের সাথে মিশে মন্দ কাজ করতে থাকে।
জ্বীনদের থেকে আল্লাহর দৃষ্টিতে মানুষদের মর্যদা বেশি।
মুসলিম দার্শনিক জাকারিয়া ইবনে মুহাম্মাদ আল-কাজওয়ানি তার ‘দ্য বুক অব জ্বীন’ –এ দাবি করেছেন যে, তিনি সৌদি আরব, পারস্য ও ভারতে অনেকবার জ্বিন দেখেছেন। (আমার ধারনা তিনি মিথ্যা বলেছেন) জ্বীন না চাইলে তাদের কেউ দেখতে পারে না। তবে নবিজি (সঃ) জ্বীন দেখেছেন। গৌলরা হলো জ্বীন জাতির মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক প্রজাতির। এরা ভয়াবহ। হাশরের মাঠে যখন আল্লাহ তায়ালা জিজ্ঞাসা করবেন, ‘হে জিন সম্প্রদায়! তোমরা তো মানুষদের বেশি পথভ্রষ্ট করে ফেলেছো’। তখন তারা বলবে, ‘হে আল্লাহ, দুনিয়াতে তো আমরা একে অপরের উপকার করেছি।’ তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন যে, ‘না। এ উপকার গ্রহণযোগ্য নয়, তোমাদের স্থায়ী স্থান হচ্ছে জাহান্নাম’। জ্বিনদের মধ্যে সবচেয়ে স্মার্ট জ্বিন হচ্ছে সিলা জ্বিন। এরা অতি দ্রুত আকৃতি পরিবর্তনে সক্ষম। বেশিরভাগই মেয়ে জ্বিন হয়। অত্যন্ত বুদ্ধিমান বলে মনে হয়। এরা খুব কমই মানুষের সামনে আসে। এরা ইচ্ছা যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় চলে যেতে পারে। যে কোনো রুপ ধারন করতে পারে।
জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে হযরত আদম আঃ এর ২০০০ বছর পূর্বে। জ্বীন জাতির আদি পিতা আবূল জিন্নাত। অবশ্য আবূল জিন্নাতের ইতিহাস কোথাও নেই। তাই তার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছুই জানা যায় নি। জ্বিনদের মধ্যে বিয়ে শাদী হয়। খুব ধূমধাম করে অনুষ্ঠান হয়। বংশ বৃদ্ধির জন্য তারা বিবাহ করে থাকে। তাদেরও মানুষের মত সন্তান হয়। তবে তাদের বাচ্চা হওয়ার সংখ্যা মানুষের থেকে বেশী। যেখানে মানুষের হয় ১টি, জ্বিনদের হয় ৯টি। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) কে জিন এবং মানবজাতির নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পাঠ না করলে দুষ্ট জিনরা তার গোপনাঙ্গ নিয়ে খেলা করে। অনুরূপ খাদ্য গ্রহণের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না পড়লে খারাপ জিন তার খাদ্যে অংশগ্রহণ করে। কোরআনের ২৬টি সুরায় শতাধিকবার জ্বিনের কথা নানা আঙ্গিকে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত জ্বীণ জাতি মানুষের কোনো উপকার করেছে এরকম শোনা যায় নি। তাদের হিসাব এবং মানুষের হিসাব আলাদা। তারা থাকুক তাদের মতো, মানুষ থাকুক মানুষের মতো।
মহান আল্লাহ আমাদের জিন ও শয়তানের কুপ্রভাব থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৭