করোনা বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।
ঘরে কোনো বাজার সদাই নাই। ফ্রিজ একদম খালি। ঘরে কোনো খাবার না থাকলে আমার খিদে তিন গুন বেড়ে যায়। সুরভি কিভাবে কি করছে কে জানে! বাজারে গেলে হয়তো কিছু দোকান অবশ্যই খোলা পাবো। কিন্তু হাত একদম খালি। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় রাস্তায় গিয়ে দাড়াই। অনেকেই তো চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি দিচ্ছে। না খেয়ে মরে গেলেও কারো কাছ থেকে এইভাবে হাত পেতে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কি যে করি! মাথাই কাজ করছে না। এরকম বিপদ যে কখনও তা স্বপ্নেও ভাবি নাই। হয়তো আমার মতো বিপদে বহু মানুষ আছে। এখন বুঝতে পারছি কিছু টাকা জমিয়ে রাখা দরকার ছিলো। অবশ্য যখন হাতে টাকা ছিলো- তখন একবারও মনে হয়নি এরকম সময় আসবে। সামনে ঈদ। এর আগে নববর্ষ। নিজের অভাবের কথা আত্মীয় স্বজনকে বলাও আমার পক্ষে সম্ভব না। তারপরও সব কিছু মিলিয়ে আমি ভালো আছি।
সুখ দুঃখ মিলিয়ে সময় কিন্তু ঠিকই চলে যাচ্ছে।
মুভি দেখছি। বই পড়ছি। ব্লগ পড়ছি। টিভিতে খবর শুনছি। সন্ধ্যায় বাসার সবাই মিলে লুডু খেলছে। ভাবী সন্ধ্যায় নাস্তা বানিয়ে আমাকে ডাক দিচ্ছেন। সন্ধ্যার নাস্তায় ভাবী একেক দিন একেক রকম আয়োজন করছেন। কোনো দিন নুডুলস, কোনো দিন পাকোরা, কোনো দিন মুড়ি মাখা। সব শেষে চা। সারাদিনে এখন এক কাপ চা- খাই। গত ছয় দিন ধরে টানা বাসায় আছি। এক মুহুর্তের জন্যও বাইরে যাই নি। মা নিচের মেইন গেটে তালা মেরে রেখেছে। কাউকে বাইরে যেতে দিচ্ছে না। আমি হলাম ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মানুষ। অথচ আমাকেই থাকতে হচ্ছে ঘরে বন্দি। পরী একা একাই খেলছে, পড়তে বসছে। ঘুমাচ্ছে। সুরভি আলমারি থেকে সমস্ত কাপড় নামিয়ে আবার নতুন করে ভাজ করে রাখছে। গাছের যত্ন নিচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সুরভি রোজা রাখছে। এই রোজা তার ডায়াটের অংশ হয়তো।
এখন অনেক রাতে ঘুমাতে যাই।
অনেক রাত বলতে- তিন টার আগে বিছানায় যাই না। তিনটার আগে ঘুমই আসে না। একাএকা জেগে থাকাও ভীষন কষ্টের। মুভি দেখি অথবা বই পড়ি। সকালে দশটায় ঘুম থেকে উঠি। কোনো কিছুতেই তাড়াহুড়া নেই। জীবন যেমন স্লো হয়ে গেছে, সমস্ত ব্যাক্তিগত কাজও স্লো হয়ে গেছে। এদিকে আমার সিগারেট শেষ। আমি দরিদ্র মানুষ। কোনো কিছু নিয়েই আমার বিলাসিতা নেই। শুধু মাত্র সিগারেট ছাড়া। গলির মোড়ের দোকান থেকে সিগারেট কিনি। ওরা আমাকে বাকিতেও সিগারেট দেয়। ভাগ্য এমন খারাপ যে এই দোকানটাও অনেকদিন ধরে বন্ধ। এক পেকেট সিগারেট আনিয়েছি। দাম রেখেছে তিন শ' টাকা। অথচ অন্য সময় দাম নিতো আড়াই শ' টাকা। এই করুন পরিস্থিতিতেও কিছু লোক ব্যবসা করে নিলো। যাই হোক, সুরভি বুয়াকে ২০ দিনের জন্য ছুটি দিয়ে দিয়েছে। ছুটি দেওয়ার আগে তাকে চলতি মাসের বেতনটা অন্তত পক্ষে দিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো। হাত খালি দিতে পারি নি।
মোবাইল টিপাটিপি করতে আমার ভালো লাগে না।
অথচ গত ছয় দিন ধরে সমানে মোবাইল টিপেই যাচ্চি। দশটা গেমস নামিয়েছি। একটূ পরপর গেমস খেলি। সারাদিন বসে বসে বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি জানছি আর অবাক হচ্ছি! অস্থির হচ্ছি। দম বন্ধ হয়ে আসার মতোন অবস্থা। টেনশন করলেই আমার ক্ষুধা বাড়ে। চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তেই থাকে। ক্ষুধা এমন এক জিনিস যে কোনো পরিস্থিতিতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। ক'দিন ধরে কাবাব আর নান রুটি খেতে ইচ্ছা করছে। ইদানং হুটহাট করে নানান রকম খাবার খেতে ইচ্ছা হয়। গতকাল দুপুরে ইচ্ছা করলো- গরুর তেহারি খেতে। এর আগের দিন ইচ্ছা করলো ইলিশ মাছ খেতে। ইলিশ মাছের ডিম আমার ভীষন প্রিয়। দেশী কৈ মাছ খেতে ইচ্ছা করছে। বিয়ে বাড়ির রোস্ট খেতে ইচ্ছা করছে। পায়েশ খেতে ইচ্ছা করছে। বিবিখানা পিঠা খেতে ইচ্ছা করছে। এই দুর্যোগে এরকম নানান রকম খাবার খেতে ইচ্ছা করাটা অবশ্যই অপরাধ। আমি দরিদ্র মানুষ হলেও প্রতিবেলা ভালো ভালো খাবার ছাড়া আমি খেতে পারি না। আমার অভ্যাস হয়েছে আমার দাদার মতোন। আমার দাদা দশ পদ ছাড়া ভাত খেতে বসতেন না।
করোনা বিপদ কেটে যাবে।
অবশ্যই কেটে যাবে। এই পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে ক্ষমতাধর আর কেউ নেই। হয়তো করোনা ভ্যাকসিন আবিস্কার হতে হতে হয়তো বিশ্বে দুই লাখ লোক মারা পড়বে। মানুষের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু বড় যন্ত্রনাদায়ক। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় মৃত্যুর খবর শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়বে, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বাতিল। ভাসমান এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের তালিকা করে খাদ্য সহায়তা দেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর। আমার ধারণা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্লগে এবং ফেসবুকে কে কি লিখছে সব দেখেন। জানেন। যেহেতু লক ডাউন সমস্যাটি জাতীয় সমস্যা, আমার একক কোন সমস্যা নয় তাই গতকাল থেকে খরচের জন্য একটি নতুন খাতা খুলেছি। লক ডাউন অবস্থায় যত খরচ হবে লক ডাউন শেষে সরকারের কাছে সে অর্থ ফেরত চাইব। সরকার আমাকে দিতে বাধ্য। যাই হোক, ভালো থাকুন সবাই। শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মনোযোগী হোন মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও। আমরা ভালো থাকলে ভালো থাকবে দেশ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০০