আজ বাইরে গিয়েছিলাম।
অদরকারে না। দরকারেই বাইরে গিয়েছিলাম। যদিও সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে থাকা আমার জন্য মোটেও আনন্দময় কিছু না। ঘরে বাজার সদাই কিছুই নেই। অল্প কিছু বাজার করলাম। বাজারের অর্ধেকের বেশি দোকান খোলা। বাজারে জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক কম। ডিম কিনলাম ৯০ টাকা ডজন। পেয়ারা কিনলাম দুই কেজি ১৪০ টাকা দিয়ে। নানান রকম বিস্কুট কিনলাম ৫০০ টাকার। আলু কিনলাম ৫ কেজি। ২২ টাকা করে কেজি। টমেটো কিনলাম দুই কেজি ৪০ টাকা দিয়ে। একটা বড় লাউ কিনলাম ত্রিশ টাকা দিয়ে। দুই পেকেট বেনসন সুইস কিনলাম ৫১০ টাকা দিয়ে। শশা কিনলাম দুই কেজি ৬০ টাকা। অনেককেই দেখলাম দুই তিন পেকেট করে সিগারেট কিনছে। আমার কাছে টাকা থাকলে আরো কয়েক পেকেট কিনে রাখতাম।
রাস্তার পরিবেশ বেশ ভালো।
অল্প কিছু লোক বাইরে। এই কিছু লোক বাইরে থাকবেই। এই শ্রেনীর লোকজন কোনো নিয়ম কানুন মানে না। এরা গর্ধব শ্রেনীর। প্রতিটা নাগরিকের রাষ্ট্রের নিয়ম নীতি মেনে চলাই উচিত। শুনেছি ৭১ সালে যুদ্ধের মধ্যেও নাকি কিছু লোক বাইরে বের হতো। দুই একটা সিনেমা হলও নাকি খোলা ছিলো। কেউ কেউ সিনেমা দেখতেও যেত। আজ বেশ কয়েকটা চায়ের দোকান খোলা দেখলাম। এক দোকানে দেখলাম- পুরী পিয়াজু আর আলুর চপ বিক্রি হচ্ছে। বাজারে লোকজন বেশ ভালোই আছে। রাস্তায় পুলিশের চেকপোষ্ট দেখলাম। তিন চারজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের কোনো কাজ নেই। তারা মোবাইল টিপাটিপিতে ভীষন ব্যস্ত। ট্রাফিক পুলিশ অযথাই রিকশাওলাদের উপর ক্ষমতা দেখাচ্ছে। কারো কারো রিকশা রাস্তায় পাশে উলটা করে ফেলে রেখেছে। গলির ভেতর সবজির দোকান গুলো খোলা। মসজিদে কিছু লোকজন নামাজ পড়ছে।
এক দোকানে দেখলাম লুডু সাজিয়ে রেখেছে।
লোকজন বেশ আগ্রহ নিয়ে লুডু কিনছেন। আমার বাসার লোকজনও খুব আগ্রহ নিয়ে লুডু খেলছে। সুরভি সন্ধ্যায় নিচে নামে। লুডু খেলে রাত ১১ টায় উপরে আসে। এসেই আমাকে বলে আজ আমি জিতেছি। হে হে। আমি থাকি ছয় তলায়। সারাদিন কড়া রোদ। পুরো ঘর গরম হয়ে থাকে। আমার ঘরে নাই এসি। অথচ গরম আমি সহ্য করতে পারি না। সারারাত ঘুম আসে না। বই পড়ি। মুভি দেখি। ঘুমাতে যাই শেষ রাতে। উঠি বারো টায়। গোছল টোছল করে ফ্রেশ হতে হতে দেড়টা বেজে যায়। সকালের নাস্তা আর খাই না। একেবারে দুপুরের ভাত খাই। আমি একাই ভাত খাই। সুরভি রোজা। আজকে রান্না হয়েছে পুঁই শাক দিয়ে চিংড়ি মাছ, আলু ভরতা, ডাল, বরবটি ভরতা, আর কাইকা মাছ বেগুন দিয়ে ভাজা ভাজা। আমি ভাত খাই, কম ভলিউমে গান চলে রবীন্দ্রনাথের। গান শুনতে শুনতে ভাবি- রবীন্দ্রনাথের গান গুলো হতে পারে পৃথিবীর সঙ্গীত। প্রতিটা গান আমাকে ভাবায়। আমাকে আনন্দ দেয়।
নিজের মনে প্রশ্ন জাগে-
কিছুদিন আগেও তো স্লোগান ছিল আমাদের খাদ্যের অভাব নেই, বস্ত্রের অভাব নেই। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু হঠাৎ করে যেভাবে ত্রাণ বিতরণের নমুনা দেখতে পাচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে দেশে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। আসলেই কি তাই? করোনার দিনে গ্রাম গুলোতে মানুষজন কেমন আছেন? বিশেষ করে দরিদ্র মানুষ? আজ আমাদের বুয়া সুরভিকে ফোন দিয়ে বলল- কোয়ারেন্টাই ঘরেন্টাইন,
গরিব মানুষ মরেন্টাইন। বুয়াকে বিকাশ করে এক হাজার টাকা পাঠালাম। আমার এই বুয়া কিন্তু দরিদ্র না। তার ঘরে টিভি ফ্রিজ সবই আছে। মাসে বুয়া দশ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দেয়। বুয়ার জামাই বেইলী রোডে ফুচকা বিক্রি করে। যাই হোক, আজ লেখা এখানেই শেষ করছি। এমন আকালের দিনে টাঙ্গাইলের চমচম খেতে ইচ্ছা করছে।