শেখ মুজিবের প্রকৃত বুদ্ধিদাতা ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ।
তাজউদ্দিন আহমদ এর মেধা, যোগ্যতা আর বিশ্বস্ততায় আস্থা ছিলো বঙ্গবন্ধুর। শারমিন আহমেদ লিখেছেন, মুজিব কাকু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। তারপরও স্বাধীনতার যুদ্ধ থেমে থাকেনি। হুশিয়ার কান্ডারির মতোই আব্বু ধরেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের হাল। ইন্দিরা গান্ধীকে স্পষ্ট করে তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, 'বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে তুমি আমাদের দেশে যাবে। বন্ধু তখনই হবে যখন তুমি আমাদের সীকৃতি দেবে'। 'মুজিবনগর' বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী। অথচ জীবদ্দশায় শেখ মুজিব কখনও গৌরবদীপ্ত স্থানটিতে যাননি। তাজউদ্দিন আহমদ অতি সাধারন জীবন যাপন করতেন। নিজ বাড়ি এবং কারাগারে যতদিন ছিলেন নিজের হাতে বাগান করতেন। বাগানের যত্ন নিতেন। ময়মনসিংহ এবং ঢাকা কারাগারে তিনি বাগান করেছেন।
বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকা কালীন সৌদি আরব বাংলাদেশকে সীকৃতি দেয়নি। বইটির ৫৩ পৃষ্ঠায় লেখা আছে- 'মুজিব কাকুর নিজস্ব ভাষা ও বাচনভঙ্গির মধ্য দিয়েই আব্বুর লিখে দেওয়া মূল পয়েন্ট গুলো ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে প্রতিফলিত হয়'। ১৫২ পৃষ্ঠায় লেখা আছে- 'স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর মুজিব কাকু কখনই আব্বুর কাছে জানতে চাননি মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের ঘটনা বলি। কখনোই জানতে চাননি তার অবর্তমানে আব্বু কীভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন।' ১৯১ পৃষ্ঠাটা আমি দুবার পড়েছি। সেখানে লেখা ''শেখ মুজিবকে ফোন করে তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি আপনার এই একদলীয় শাসনের সঙ্গে একমত নই।'' বাকশালের ১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি হলে শেখ মুজিব।
'তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা' বইটি লিখেছেন শারমিন আহমদ।
শারমিন আহমদ তাজউদ্দিন আহমদ এর জ্যেষ্ঠ কন্যা। তার জন্ম ঢাকায়। তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে থাকছেন। ওয়াশিংটন ডিসির জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি খেকে ১৯৯০ সালে উইমেন্স স্টাডিজে এম এ করেছেন শারমিন। বইটিতে কন্যার বয়ানে পিতার জীবনের নানান ঘটনা উঠে এসেছে। তাজউদ্দীন আহমদ এর শৈশব, যৌবন, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ওনার কর্মকান্ড, এছাড়াও ওনার পরিবারের নানান ঘটনা বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে লেখক তার ছোটবেলার নানান রকম গল্প বলেছেন সহজ সরল ভাবে। বইয়ের বড় অংশজুড়ে আছে লেখকের শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিচারণা, আছে একটি রাজনৈতিক পরিবারের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার ছবি। স্বাধীনতা যুদ্ধের অসংখ্য বিষয় উঠেছে বইটিতে।
'সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন' তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মিনী। তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৯ সালে তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বিয়ে হলে স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের সহযোদ্ধায় পরিণত হন। তাদের চার ছেলেমেয়ে। তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসাবে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ট্রাজিক অধ্যায় হচ্ছে বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীনের মধ্যে বিচ্ছেদ। এই বিচ্ছেদ এর জন্য দায়ী খন্দকার মোশতাক। অথচ শেখ মুজিব খন্দকার মোশতাককে চিনতে ভুল করেছেন। সত্য কখনো চাপা থাকে না, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে এই বই। যুদ্ধের সময় তাজউদ্দিন আহমেদ 'দোলনচাপা' ছদ্মনামে তার স্ত্রীর কাছে চিঠি লিখতেন। ১৯৭৪ সালে তাজউদ্দিন আহমদ তার স্ত্রীকে বলেছিলেন, 'লিলি তুমি বিধবা হবে। মুজিব ভাই বাচবে না, আমরাও কেউ বাচবো না। দেশ চলে যাবে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে'।
ধর্মের প্রসঙ্গে তাজ উদ্দিন আহমদ বলতেন, নিঃশ্বার্থ ভাবে জাতি, ধর্ম, বর্ণনিবির্শেষে জীবসেবার নামই ধর্ম। ষাট এর দশকে তাজউদ্দিন আহমদ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তার খুব ইচ্ছা ছিলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর করার। তিনি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন বিদেশ সফরে গেলে সস্তার হোটেলে উঠতেন। বলতেন গরীব দেশের পয়সা বাচুক। তিনি তার স্ত্রী পুত্র কন্যাদের নিয়ে সরকারী সফরে যেতেন না। ‘তাজউদ্দিন আহমদ নেতা ও পিতা’ বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ২০১৪ সালে। 'ঐতিহ্য' থেকে প্রকাশিত বইটি দেখতে সুন্দর। বাঁধাই, পৃষ্ঠা, সাজসজ্জা খুবই আকর্ষণীয়। বইয়ের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫০ টাকা। বইটিতে অনেক সাদা কালো ও রঙ্গিন আছি আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩৯