শাহেদ জামাল সিনেমা বানাবে।
সিনেমার গল্প লেখা শেষ। গল্প সে নিজেই লিখেছে। সিনেমা পরিচালনা সে নিজেই করবে। স্পিলবার্গ, নোলান, টারান্টিনো, রিডলি স্কট, স্করসেস, সত্যজিৎ, কুবরিক, মাজিদ, ফরহাদি, কিম কি দুক' কত শত বিখ্যাত পরিচালক আছেন। তাদের সবার ছবি শাহেদ জামাল দেখেছে। তাদের মুভি দেখে সে এতটাই মুগ্ধ হয়েছে যে নিজেই মুভি বানানোত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত দুই বছর সে অনেক পড়াশোনা করেছে। এছাড়া দেশের একজন পরিচালকের সাথে সে বেশ কিছু কাজ করেছে। নিজের লেখা গল্প থেকে সিনেমা হবে এটা অনেক আনন্দের ব্যাপার। হুমায়ূন আহমেদ নিজের লেখা উপন্যাস থেকেই সিনেমা বানিয়েছেন। শাহেদ জামালের বিশ্বাস তার কাহিনী ও চিত্র্যনাট্যে অসম্ভব ভালো হয়েছে। তার আত্মবিশ্বাস আছে।
অভিনেতা অভিনেত্রী নির্বাচন করা হয়ে গেছে।
প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করবেন রাজীব নূর খান এবং তার কন্যা। যেহেতু তার গল্প বাবা আর মেয়ের। শাহেদ জামাল জানে তার বন্ধু এবং বন্ধুর কন্যা চমতকার অভিনয় করবে। তাদের সেই প্রতিভা আছে। অবশ্য প্রতিভা না থাকলেও সমস্যা নেই। একজন ভালো পরিচালক খুব সাধারন অনভিজ্ঞ লোকের কাছ থেকেও অভিনয় বের করতে পারেন। মুভির বাজেট কোনো সমস্যা না। যা লাগবে খরচ করা হবে। ক্যামেরার কাজ, এডিটিং ও টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলোর জন্য শাহেদ জামালের ইচ্ছা আছে তামিল নাড়ু থেকে অভিজ্ঞ লোক আনবে। একজনের সাথে সে কথা বলেও রেখেছে। বাণিজ্যিক মুভি না আর্টফিল্ম- এধরণের গোঁড়ামি শাহেদ জামালের নেই। শাহেদ জামালের মুভি দেখে মানুষ আনন্দ পাবে, হৃদয়বান হতে উৎসাহ পাবে।
ফিল্মমেকিংয়ের সমস্ত সৃজনশীল দিকগুলো পরিচালকের হাতে।
অর্থ্যাত শাহেদ জামালের হাতে। শাহেদ নিখুঁত ভাবেই কাজ করবে। সে পরিশ্রমী মানুষ। মুভির স্ক্রিপ্ট, চরিত্রায়ণ, লোকেশন, ক্যামেরা, সাউন্ড, শুটিং শিডিউল সব নির্ধারণ করে ফেলেছে শাহেদ জামাল। এছাড়া ভিজুয়ালাইজেশন, ফিল্মিং, লাইটিং, কোন ‘টেক’-এর পর কোন ‘টেক’ সব বেশ কয়েকবার করে গুছানো হয়ে গেছে। ও ভালো কথা সিনেমার গল্পটাই তো আপনাদের এখনও বলা হয় নি। গল্পটা এই রকম- একজন বাবা ব্যলকনিতে বসে বই পড়তে থাকে। বইয়ের নাম 'মোবি ডিক'। ৭২০ পৃষ্ঠার বই। লেখক হারম্যান মেলভিল। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। যে কোনো সময় বৃষ্টি নামবে। রাত প্রায় বারটা বাজতে চললো। ঠিক এই রকম সময় ব্যলকনিতে এসে হাজির হয় একটি সাত আট বছরের একটি মেয়ে। মেয়েটির হাতে কেক। আজ তার বাবার জন্মদিন।
বাবা কেক দেখে খুব অবাক হয়!
মেয়েকে বলে, বলো তুমি কি চাও? যা চাও তাই আজ তোমাকে তাই দিবো। মেয়েটা বলে বাবা বেড়াতে যাবো। বাবা জিজ্ঞেস করবে- কোথায় বেড়াতে যাবে? পাহাড় না সমুদ্র? মেয়েটা দ্বিধায় পড়ে যায়। এভাবে গল্প শুরু হবে। এই ছোট্র মেয়েটাকে ঘিরে সিনেমা এগুতে থাকবে। মেয়ে শুধু তার বাবার কাছে গল্প শুনতে চায়। বাবা তার মেয়েকে রাজা রানী বা রাক্ষস খোক্ষস এর গল্প বলে না। বলে ইতিহাসের গল্প। দেশভাগের গল্প বলে, ভাষা আন্দোলনের গল্প এবং মুক্তিযুদ্ধের গল্প। এই গল্প গুলোর ভিতর দিয়েই পরিচালক দেখাবে ভালোবাসা, প্রেম, পাওয়া না পাওয়া, স্বপ্ন আর আনন্দগুলো। যা দর্শকের মন ছুয়ে যাবে। দর্শক আনন্দ পাবে, কখনও বিমর্ষ হবে, কখনও তাদের বুকে হাহাকার করে উঠবে। আবার কখনোও দর্শক নিজের অজান্তেই হাতে তালি দিয়ে উঠবে।
শাহেদ জামাল রমনা পার্কে বসে আছে।
সে যেন তার সিনেমার দৃশ্যগুলো সব দেখতে পাচ্ছে। আনন্দে তার চোখ মুখ চকমক করছে। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে শাহেদকে তার সিনেমার ভূবন থেকে টেনে নামালো। ভিক্ষুককে দেখে তার খুব রাগ লাগলো। ইচ্ছা করছে ভিক্ষুককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে। মানবিক কারনে সে ভিক্ষুককে ধাক্কা দিতে পারলো না। ভিক্ষুককে দশটা টাকা দিয়ে বিদায় করলো। এতক্ষন শাহেদ ঘোরের মধ্যে ছিলো। ঘোর কেটে গেছে বলেই ক্ষুধাবোধটা বেশ ভালো ভাবেই টের পাচ্ছে। দুপুরে কিছু খাওয়া হয় নি। এখন প্রায় সন্ধ্যে। পকেটে আছে মাত্র ত্রিশ টাকা। এই টাকা দিয়ে ভাত খাওয়া যাবে না। রমনা পার্ক থেকে বের হতেই শাহেদ দেখে এক মহিলা চিতই পিঠা বানাচ্ছে। মাত্র পাঁচ টাকা পিস। পিঠার সাথে ভর্তা ফ্রি। তিন পদের ভর্তা আছে। শাহেদ ভর্তা দিয়ে গরম গরম তিনটা পিঠা খেয়ে নিলো। বেশ লাগলো খেতে। পেট ভরে গেছে। রাতে কিছু না খেলেও চলবে। এখনও হাতে পনের টাকা আছে। পনের টাকায় একটা সিগারেট এবং এক কাপ চা হয়ে যাবে। তবে অবশিষ্ট কিছুই থাকবে না। বাসায় ফিরতে হবে হেঁটে হেঁটে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫৭