
ফেসবুকে একটা ভিডিও নিয়ে তুমুল ঝড় হচ্ছে।
ভিডিও টা আমি দেখেছি। এক জোড়া তরুন তরুনী সিগারেট খাচ্ছিলো। গল্প করছিলো। অতি সাধারণ ব্যাপার। তখন এক লোক এসে মেয়েটার উপর খুব রেগে গেলো। লোকটার মাথায় নামাজের টুপি। মেয়েটার অপরাধ সে কেন সিগারেট খাচ্ছিলো। ঘটনাটা রাজশাহীতে ঘটেছে। বুঝলাম না ঐ লোকের সমস্যা কি? কেউ না খেয়ে থাকলে কি ঐ লোক তাকে খাবার দিয়ে আসে? কেউ টাকার অভাবে চিকিৎসা না করাতে পারলে কি সেই লোক তাকে চিকিৎসা করায়? কেউ বেকার থাকলে কি এই লোক তাকে চাকরি পাইয়ে দেয়? এই ধরনের লোকেরা অমানুষ টাইপ।
ঐ লোকটা কমপক্ষে একটা থাপ্পড় দেওয়া দরকার ছিলো।
রাজশাহী সার্কিট হাউসের পাশে ফুটপাতে ওই তরুণ-তরুণী বসে ধূমপান করছিলেন। মেয়েটি শাড়ি ও ছেলেটি টিশার্ট-প্যান্ট পরা ছিলেন। প্রচন্ড হাসি খুশি প্রানবন্ত দেখতে। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে ১৫-২০ জন মানুষ জোড় হয়। সবাই একজোট হয়ে ওই তরুণ-তরুণীকে ওই স্থান ত্যাগ করার জন্য চাপ দিতে থাকে। যদিও মেয়েটা ততক্ষনে সিগারেট ফেলে দিয়েছে। আসলে এই দেশে মেয়েরা স্বাধীন না। কিছু বদমাশ পরিবেশ নষ্ট করে দেয়।
হ্যা জানি, ধূমপান খারাপ।
নারীপুরুষ নির্বিশেষে স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকারক, সন্দেহ নাই। শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে ধূমপানের জন্য পুরুষতান্ত্রিক নিপীড়ন-হেনস্থার শিকার হবে নারীরা! এটা মেনে নেয়া যায় না! পৃথিবীর সকল সমাজে কমবেশি ধূমপায়ী নারীরা রয়েছেন। আমার দাদী লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খেতেন। আমি তাকে সিগারেট সরবরাহ করে দিতাম। একবার দাদী বাথরুমে সিগারেট খেতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে হাত ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। বান্দরবানে দেখেছি প্রায় সব বয়স্ক আদীবাসী মহিলারা সিগারেট খাচ্ছে।
সেদিন গুলশানে এক ব্যাংকে গিয়েছি।
লাঞ্চ টাইম ছিলো। ছাদে বিশাল ক্যান্টিন। সবাই খাওয়া দাওয়া করছে। আমিও সেখানেই খেলাম। খাওয়া শেষে বেশ কয়েকটা মেয়ে আমাদের সাথে সিগারেট ধরালো। তাদের সিগারেট খাওয়া দেখে বুঝলাম এটা তাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। যাই হোক, রাজশাহীর ঘটনাটি প্রায় সব পত্রিকাতেই এসেছে। খুব দুঃখজনক ঘটনা। ছেলে মেয়েটা দারুন ভদ্র ছিলো। রাগী ছেলেমেয়ে হলে- ওই লোকোকে কলার ধরে দুই টা লাগাতো। ঐ লোক বেঁচে গেছে।
তরুণীকে হেনস্তাকারী ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ।
তরুণীকে হেনস্তার পেছনের ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম শহীদ হোসেন বারেক। বর্তমানে তিনি ঠিকাদারি করেন। ছেলে মেয়ে দুজন অভিযোগ করলে পুলিশ হয়তো ব্যবস্থা নেবে। ব্যবস্থা নেওয়াই উচিত। যাদের কাছে ছেলেরা ধূমপান করলে খারাপ লাগে না কিন্তু মেয়েরা করলে জাত যায়, সমাজ রসাতলে যায় ভাবেন তারা আসলে হেফাজত। তাদের মূল কনসার্নের জায়গা হলো নারী কেন সমাজের তথাকথিত নিয়ম ভেঙ্গে পুরুষের মতো খোলা ময়দানে সিগারেট খাবে?? নারীর জায়গা ঘরে, নারী কেবল ঘরে থাকবে, সংসার করবে, বাচ্চা উতপাদন করবে আর স্বামীর কথা মেনে চলবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




