তখন আমি ছোট ছিলাম।
স্কুলে পড়তাম। সেই সময় ২১ শে ফ্রেরুয়ারী আমরা খুব ঘটা করে পালন করতাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে, বন্ধুরা সবাই মিলে ইট আর মাটি যোগাড় করতাম। ইট মাটি দিয়ে শহীদ মিনার বানাতাম। অনেক সময় লাগতো। আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হতো। আমরা চেষ্টা করতাম আমাদের শহীদ মিনারটা যেন বড় হয়। তা না হলে অন্য এলাকার ছেলেপুলেদের সাথে হেরে যাবো।
শহীদ মিনারের জন্য ফুল সংগ্রহ করতে হতো।
বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুল চুরী করতাম। আমি তখন রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাই স্কুলে পড়ি। পুলিশ লাইনে বেশ কয়েকটা ফুলের বাগান ছিলো। সেই বাগান থেকে আমি ফুল চুরী করে আনতাম। চুরী করা ফুল শহীদ মিনারে দিতাম। আমার মতো এত বড় এবং সুন্দর ফুল আর কেউ চুরী করতে পারতো না। ফুল না কিনে কেন চুরী করতাম আমি জানি না।
চান্দা তুলে খিচুরী রান্না করা হতো।
এলাকার প্রতিটা বাড়ি থেকে চাঁদা তুলতাম। দোকান থেকে চাঁদা তুলতাম। যারা টাকা দিতো না, তারা চাল, ডাল, পেঁয়াজ দিতো। পরিমানে অনেক চাল দাল হয়ে যেত। নগদ টাকাও অনেক হয়ে যেত। গরুর মাংস দিয়ে খিচুরী রান্না করা হতো। এলাকার সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে সেই খিচুরী খেতো। বলা বাহুল্য খিচুরী অনেক মজা হতো। তখনকার খিচুরীর স্বাদ এখনও আমার মুখে লেগে আছে।
ছেলেবেলার দিন গুলো হারিয়ে গেছে।
এখন জীবন বড়ই জটিল, কুটিল আর আবর্তময়। ছোটবেলার বন্ধুরা সব হারিয়ে গেছে। কারো সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। কে কোথায় আছে জানি না। হঠাত রাস্তায় কারো সাথে দেখাও হয়ে যায় না। এখন একুশে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনার বানাই না। ফুল চুরী করতে হয় না। খিচুরীও রান্না করা হয় না। তবে আজ সুরভি খিচুরি আর গরুর মাংস রান্না করেছে।
মেয়েটার নাম ছিলো আসমানী।
সে আমাদের সাথে শহীদ মিনার বানানো, চাঁদা তুলতো, খিচুরী রান্না করতে সহযোগিতা করতো। আসমানীকে আমার খুব ভালো লাগতো। মাথা ভরতি লম্বা চুল ছিলো তার। মূখটা ভীষন মায়াময় ছিলো। আসমানী এখন কোথায় জানি না। বেঁচে আছে কিনা তাও জানি না। আজ একটা গোপন কথা বলি, জীবনের প্রথম চুমুটা আসমানীকে দিয়েছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৫৮