somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল (ছাব্বিশ)

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ অনেকদিন পর শাহেদ জামাল রমনা পার্কে এসেছে।
দীর্ঘদিন রমনা পার্ক বন্ধ ছিলো করোনার জন্য। এই বন্ধ থাকা অবস্থায় পার্কে বেশ কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ হয়েছে। হাঁটার রাস্তা গুলো নতুন করে ঢালাই করা হয়েছে। বাগান গুলো সুন্দর করে সাজিয়েছে। ভাঙ্গা বেঞ্চ গুলো মেরামত করা হয়েছে। শাহেদ মনে মনে বলল- ভালো। ভেরি গুড। শাহেদ তার সেই প্রিয় বেঞ্চে বসলো। মাথার উপরে ছাতার মতো এক বিশাল অশ্বথ গাছ। অশ্বথ তার সব ডাল পালা মেলে দিয়েছে বন্ধুর মতোন। গায়ে রোদ লাগে না। চারিদিকে বেশ মিষ্টি রোদ আর নানান পাখির কলতান। এরকম শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ শাহেদের ভালো লাগে।

শাহেদ জামালের মন আজ বড্ড খারাপ।
সে আজ বড় বিষন্ন। বড় হতাশ। বড় অস্থির। বড্ড যন্ত্রনাবিদ্ধ। তার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে। জীবনটা ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। অথচ জীবনটা এরকম হওয়ার কথা ছিলো না। তার অন্য ভাইদের জীবন সুন্দর। তার বন্ধুদের জীবন সুন্দর। গতকাল পাশের বাসার নাসিরের ছেলে আজ শাহেদের কাছে দিয়াশলাই চেয়েছে। অথচ এই ছেলেকে শাহেদ জামাল প্রায় জন্মাতে দেখেছে। একটা হাফ প্যান্ট পরতো। প্যান্টের জিপার ছিলো না। সেই ছেলে আজ সানগ্লাস পড়ে, ঠোটে সিগারেট নিয়ে বাইক নিয়ে শাহেদ জামালের সামনে এসে বলল- দিয়াশলাই আছে বড় ভাই? শাহেদ জামালের ইচ্ছা করলো ছেলেটাকে একটা বা হাত দিয়ে থাপ্পড় দিতে। কিন্তু দেয় নি। শাহেদ তার রাগ সামলে নিয়েছে। এযুগের পোলাপান বেয়াদব।

শাহেদ জামাল ব্যর্থ মানুষ।
জীবনে সে অনেক কিছু হতে চেয়েছিলো বলেই, সে জীবনে কিছুই হতে পারে নি। সে ডাক্তার হতে পারেনি। ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে নি। পাইলট হতে পারেনি। নাবিক হতে পারে নি। ব্যবসায়ী হতে পারেনি। সাংবাদিক হতে পারেনি। ফোটোগ্রাফার হতে পারে নি। শিক্ষক হতে পারে নি। অভিনেতা হতে পারে নি। নির্মাতা হতে পারে নি। বাংলায় একটা কথা আছে- অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়। শাহেদ জামালের এই অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। শাহেদ জামালের মাথায় বেশ কিছু সাদা চুল দেখা দিয়েছে। থুতনির কাছে বেশ কিছু দাঁড়ি সাদা হয়ে গেছে। নদীর স্রোত আর বয়স থামিয়ে রাখা যায় না। অতীতের দিকে তাকালে তার কোঁনো সাফল্য চোখে পড়ে না। আগা গোড়া একজন ব্যর্থ মানুষ সে। নিজের উপর নিজের খুব রাগ হয় শাহেদ জামালের।

শাহেদ জামালের চিন্তা ভাবনা কি অতি নিম্ম!
তার সাথে কারোর সাথে মিলে না। কারো চিন্তা ভাবনা শাহেদ জামালের পছন্দ হয় না। আবার শাহেদ জামালের চিন্তা ভাবনা কারো পছন্দ হয় না। অথচ শাহেদ জামাল সারাটা জীবন নিরপেক্ষ থাকতে চেষ্টা করেছে। কালো কে কালো বলেছে। সাদাকে সাদা বলেছে। কারো সাথে অন্যায় করেনি। জুলুম করেনি। মিথ্যা বলেনি। কারো ক্ষতি করে নি। সহজ সরল মানুষ হিসেবে জীবন চলেছে তার। অথচ তার পরিবারের সদস্যরাও তাকে আজকাল আর পছন্দ করছে না। সে আজ সর্বত্র অবহেলিত। পরিবারের লোকজন পারিবারিক মিটিং করে তাকে ছাড়া। তার ছোট ভাই সেন্ট মার্টিন গিয়েছে অথচ সে জানেই না। তার মা রাজশাহী গিয়েছে, অথচ সে জানে না। তাকে কেউ বলেও যায় নি।

খুব শ্রীঘই শাহেদ জামাল একটা সিদ্ধান্ত নেবে।
সে সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে এই ঘরসংসার, এই সমাজ থেকে চলে যাবে। এই মনুষ্য সমাজ তার ভালো লাগছে না। তার দম বন্ধ হয়ে আসে। মানুষের মুখোশ দেখতে দেখতে আজ সে বড্ড ক্লান্ত। বিধ্বস্ত। সে নিরালায় চলে যাবে। সমুদ্রের কাছে একটা পাহাড়ে একটা কাঠের ঘর থাকবে। ঘর ভরতি থাকবে বই। সে দিন রাত বই পড়ে কাটিয়ে দেবে। একটা মাটির চুলা থাকবে। ক্ষুধা পেলে সামান্য ডাল চাল দিয়ে খিচুরী রান্না করে খেয়ে নিবে। পাহাড়ের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাবে। অনেক দেরী হয়ে গেছে আর না। এরকম একটা জীবনই শাহেদ জামাল স্বেছায় বেছে নিবে। দেরী হোক, যায় নি সময়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:১৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×