১। স্কুলে 'হাজার বছর ধরে' আর ইন্টারে পড়েছি 'পদ্মা নদীর মাঝি'।
দুটোই পরকীয়া প্রেমের গল্প। হাজার বছর ধরে উপন্যাস নিয়ে সিনেমা হয়েছে। উপন্যাসে অঙ্কিত গ্রামের মানুষ গুলোর সকলের ধর্ম ইসলাম। সকলেই ধর্মকর্মে অতটা উৎসাহী না হলেও জীবনাচরণের দিক থেকে ধর্ম মেনে চলতেই তাদের দেখা যায়। তাবিজ-কবচ, জিন-ভূতে এন্তার বিশ্বাস তাদের। বিশ্বাস অবৈজ্ঞানিক ঝাড়ফুঁকেও।
'পদ্মা নদীর মাঝি' সিনেমা হয়েছে। দেখেছি। ভালো লেগেছে। পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের পটভূমি বাংলাদেশের বিক্রমপুর-ফরিদপুর অঞ্চল। উপন্যাসে পদ্মার তীরবর্তী কেতুপুর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের পদ্মার মাঝি ও জেলেদের জীবনচিত্র সুনিপুণভাবে অঙ্কিত হয়েছে। শহর থেকে দূরে এ নদীর তীরবর্তী জেলে পাড়ার মাঝি ও জেলেদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না-অভাব-অভিযোগ- এই উপন্যাসে খুব সুন্দর করে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন।
২। 'ক্র্যাচের কর্নেল' বইটি পড়লেই মন খারাপ হয়ে যায়।
কষ্ট হয়। আমরা যারা আশির দশকের জন্ম নিয়েছি, আমাদের সবাই পড়তে হয়েছে পরিবর্তিত ইতিহাস। নানান কারণে নানান জনের হাত ধরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ পরবর্তি ইতিহাসের হয়েছে নানা পরিবর্তন। 'ক্র্যাচের কর্নেল' চমৎকার একটা বই। অথচ এই বই নিয়েও বহুজন বিরুপ মন্তব্য করেছেন। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
৩। 'সূর্য দীঘল বাড়ি' লেখক- আবু ইসহাক।
কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, পুরুষতন্ত্রের নির্যাতন ও ধনীর শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট গ্রামীণ বাংলাদেশের এক নারীর জীবন সংগ্রামের অনবদ্য দলিল ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। বাংলার গ্রামীণ জীবনের অসামান্য চিত্রায়ন। উপন্যাসে লেখক ধর্মকে হেয় করেননি। তিনি হেয় করেছেন ধর্মের অপব্যাখ্যা দেওয়া মানুষদের। যারা ধর্মের চেয়েও নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখে। ধর্মীয় গোঁড়ামি মনের ভেতর বেঁধে রাখা কুসংস্কারচ্ছন্ন মানুষদের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।
৪। মন প্রকৌশল লেখক- রাগিব হাসান।
আমাদের তরুণদের কিছু বাঁধাধরা সমস্যা আছে সেই সমস্যা গুলোর কথা বলা আছে। হতাশ হয়ে যাওয়া সেই তরুণদের কেউ না কেউ নিশ্চয়ই এই বইটা পড়ে এক ধরনের শক্তি পাবে, এক ধরনের সাহস পাবে, নিজের ভেতর অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবে। চমৎকার একটা বই। সকলের পড়া উচিত। হতাশা গ্রস্ত লোকেরা এই বই পড়লে আশা খুঁজে পাবেন।
৫। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত প্রথম আলো।
দুটি খন্ডে রচিত এই উপন্যাসটির মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা হল ১১৪১। প্রথম খন্ডে ৪২৪ পৃষ্ঠা। দ্বিতীয় খন্ডে ৭১৭ পৃষ্ঠা। এত মোটা বই কিন্তু পড়তে বিরক্ত লাগবে না। পুরো উপন্যাস জুড়ে অনেক চরিত্র। সবার সাথে সবার সামঞ্জস্য আছে। লেখক এত সুন্দর করে লিখেছেন, মনে হয় যেন চরিত্র গুলোকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। সুনীলের আত্মজীবনী মূলক লেখা 'অর্ধেক জীবন'। দারুন একটা বই।
৬। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় রচিত "শ্বেতপাথরের টেবিল"।
সাহিত্যের জগতে থাকেন কিছু কিছু জহুরি, সম্ভাবনাময় নতুন লেখকদের তাঁরা এক নজরেই শনাক্ত করতে পারেন। ষাটের দশকে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত অজ্ঞাতনামা এক লেখকের একটি গল্প পাঠ করে আবু সয়ীদ আইয়ুব দেশ-এ চিঠি লিখেছিলেন- ''এই লেখক আর কোনো গল্প যদি নাও লেখেন ওই একটি গল্পের জন্যই বাংলা সাহিত্যে তাঁর স্থান পাকাপোক্ত হয়ে থাকবে''। গল্পটির নাম ছিল 'শ্বেতপাথরের টেবিল', লেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।
৭। কাকতাড়ুয়া সেলিনা হোসেন।
একটি বিখ্যাত শিশুতোষ উপন্যাস। উপন্যাসটি আমাদের ইতিহাসের এক গৌরবময় দলিল। বাংলাদেশের কোন একটি গ্রাম। এই গ্রামেরই বাস করে এতিম এক কিশোর নাম বুধা। কলেরায় মারা যায় তার ভাইবোন। প্রথমে চাচির বাড়িতে আশ্রয় নিলেও চাচি দারিদ্রের কথা তুললে সে বাড়ি ত্যাগ করে। পুরো গ্রাম আর হাটবাজার ছিল তার বিচরণ ক্ষেত্র। চেনাজানা সব মানুষ হয়ে উঠল তার আপনজন। একদিন ঐ গ্রামে মিলিটারি ঢুকলে তারা পুড়িয়ে দিল বাজারের দোকানপাট।
৮। শাপমোচন - ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়।
উক্ত উপন্যাসের গ্রামের একটি পরিবার আর শহরেরে একটি পরিবারকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বইটা শেষ করার পর এর রেশ যে অনেককাল পাঠকের মনে রয়ে যাবে এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। যারা প্রেমের উপন্যাস পছন্দ করেন তাঁরা এটা পড়ে উদ্বেলিত হবেন।
৯। শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন- সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।
চমৎকার একটা বই। বইটির জন্য লেখক সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। এই বইটা পড়ার পর আপনি অটোমেটিক এই লেখকের অন্যান্য বই গুলো খুঁজে পড়তে শুরু করবেন। বইটি পড়ুন এবং আমার কথা মিলিয়ে দেখুন।
১০ । প্রথম প্রতিশ্রুতি আশাপূর্ণা দেবী।
লেখিকা এই উপন্যাসে মেয়েদের স্বনির্ভরতার গুণগান গেয়েছেন। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা যে নারীমুক্তির কেন্দ্রবিন্দু। গল্পের শেষে, স্বামী ও সংসার পরিত্যাগের পর, নায়িকা সত্যবতী ইঙ্গিত দেয় সে স্কুলের শিক্ষয়িত্রী হয়ে পেট চালাবে। কারোর কাছে হাত না পেতে তার নিজের পায়ে দাঁড়াবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৪