
আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে নিজেকে শুধু একটা কথাই বারবার বলেছি- জীবনে অসৎ হওয়া যাবে না। নো নেভার। এবং অবাক ব্যাপার হচ্ছে- অসৎ হইনি। যদিও অসৎ হওয়ার উপকরন চারপাশে ছড়ানো ছিলো। এজন্য আমি নিজের উপর নিজে খুশি। নিজেকে নিজেই বাহবা দেই। আত্মতৃপ্তি পাই। বলতে লজ্জা নাই, আমার জীবনে আমি কোনো খারাপ কাজ করি নাই। পারলে ভালো কাজ করেছি। না পারলে চুপচাপ বসে থেকেছি। তবু মন্দ কাজ করিনি। আমি আপনাকে আমার জীবনে করা অসংখ্য ভালো কাজের মধ্যে তিনটা কাজের কথা বলতে চাই। বলা দরকার। ভালো কথা বলেও শান্তি আছে। আনন্দ আছে।
১। আমাদের এলাকায় একলোক ভাড়া থাকতো। উনি মেসে ভাড়া থাকতেন। এলাকার চায়ের দোকানে আমার সাথে তার আলাপ হয়। এবং খুব খাতির হয়ে যায়। একদিন লোকটা বলল, আমি ড্রাইভার। গাড়ি চালিয়ে শহরের কত কত জায়গায় যাই। রাস্তার দেওয়ালে কত কত সিনেমার পোস্টার দেখি। অথচ সিনেমার নাম পড়তে পারি না। আমি মূর্খ। কোনোদিন স্কুলে যাইনি। আমি বললাম, পড়তে মন চায়? লোকটা বলল, খুব পড়তে মন চায়। আমি লোকটাকে লেখাপড়া শেখাই। খুব অল্প সময়ে লোকটা বাংলা পড়তে শিখলো। পড়তে শিখে লোকটা দারুন আনন্দ পেয়েছিলো। লোকটার আনন্দিত চোখ মুখ এখনও আমার মনে আছে।
২। শীতের দুপুর। কোনো রোদ নেই। চারিদিকে কুয়াশা। সেবার খুব শীত পড়েছিলো। আমি এক ব্যস্ত রাস্তা পার হচ্ছিলাম। তখন দেখি ফুটপাতে এক বুড়ি। বসে বসে কাঁপছে। ঠিকভাবে নিলশ্বাস নিতে পারছে না। বুড়িকে দেখে খুব মায়া হলো। একদম নানী দাদী বয়সী। বললাম, কি খবর? তোমার অবস্থা তো সুবিধার মনে হচ্ছে না। বুড়ি বলল, আমার ইনহেলার শেষ। তাই ঠিক করে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। এদিকে আজ প্রচণ্ড শীত। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আমি বুড়িকে একটা ইনহিলার কিনে দেই। বুড়ি ফোকলা দাঁতে খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়েছিলো। সেই হাসি আমি চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই। আসলে ভালো কাজ করলে ভালো লাগে। খুশি লাগে। নেশা লেগে যায়। আরো ভালো ভালো কাজ করতে মন চায়।
৩। এটা আমাদের বাসার সামনে ঘটনা। একলোক তার স্ত্রীকে মারছে। খুব মারছে। ঘরের ভিতর মারছিলো। স্ত্রী স্বামীর মাইর খাওয়া থেকে বাঁচতে রাস্তায় চলে এসেছে। কিন্তু স্বামী রাস্তাতে ফেলে স্ত্রীকে মারছে। খুব কঠিন মাইর। কিল, গুসি, চড়, লাথথি। চুল ধরে টান দিচ্ছে। রাস্তায় ভিড় জমে গেছে। স্ত্রী নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না। কান্না করছে। মাগো, বাবাগো বলে। কিন্তু কেউ স্ত্রী লোকটিকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসছে না।
কান্নার আওয়াজ শুনে- আমি দৌড় দিয়ে বাসা থেকে নীচ নেমে এলাম। লোকটাকে বললাম, মারছেন কেন? স্বামী রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার স্ত্রী আমি মারবো তাতে কার বাপের কি? আমি বললাম, ধরেই নিলাম আপনার স্ত্রী অন্যায় করেছে। কিন্তু তার পরেও আপনি তাকে মারতে পারেন না। এটা অন্যায়। স্বামী আমার কথা শুনছে না। মানছে না। স্ত্রীকে সমানে মেরেই চলেছে। তখন আমি দুই চারটা দিলাম স্বামীকে। স্বামী বেচারা আমার মার খেয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লো। তারপর স্বামী ছাগলকে বুঝালাম কেন স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা যাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৪:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




