
রাত সাড়ে দশটা।
সুন্দর একটা মসজিদ। তারাবীর নামাজ শেষ অনেক আগেই। মসজিদের দরজা তালা দেওয়া হয়ে গেছে। মসজিদের প্রবেশ পথ দামী মার্বেল টাইলস দিয়ে বাঁধানো। সেই মার্বেল টাইলসের উপর এক পিতা এবং তার কন্যা বসে আছে। কন্যার বয়স ষোল মাস। রাস্তা মোটামোটি নিরিবিলি। তবে মাঝে মাঝে দুই একটা রিকশা আর গাড়ি যাচ্ছে, আসছে। পায়ে হেঁটে কিছু মানুষও যাতায়াত করছে। কন্যা একা একাই খেলছে। কন্যাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে আনন্দিত। পিতা মোবাইলে গেমস খেলছে। তার চোখ মুখও আনন্দিত। প্রতিদিন এই পিতা তার কন্যাকে নিয়ে মসজিদের বারান্দায় বসে থাকতে দেখা যায় আধা ঘন্টা। দৃশ্যটা দূর থেকে দেখতে ভালো লাগে।
একটা সুন্দর আলো ঝলমল করা ফলের দোকান।
এক লোককে দেখা যাচ্ছে, বেছে বেছে ফল কিনছেন। আপেল, নাসপাতি, মালটা আর আনার। প্রতি সপ্তাহে তাকে ফল কিনতে দেখা যায়। ভদ্রলোক বেশ আগ্রহ নিয়ে ফল কিনেন। এই ফল খাবে তার ষোল মাস বয়সী এক মেয়ে। মেয়ে ফল অতি সামান্য খায়, বাকিটা নষ্ট করে। এটা প্রতিদিনকার দৃশ্য। মাঝে মাঝে এক আধদিন কন্যা অনেক আগ্রহ নিয়ে খায়। কন্যাকে সবজি খিচুড়ি খাওয়ানো হয়। কন্যা খেতে চায় না, তাকে নানান রকম কর্মকান্ড করে খাওয়াতে হয়। ফলাফল সারা ঘর খিচুড়ি দিয়ে মাখামাখি। বিছানার চাদর মাখামাখি। ফ্লোর মাখামাখি। জামা কাপড়ে মাখামাখি। অর্থ্যাত কন্যাকে খাওয়াতে গেলে যুদ্ধ করতে হয়।
গভীর রাত।
এক কন্যা ও তার মাতা পাশাপাশি ঘুমিয়ে আছে। গভীর ঘুম। পাশের ঘরে কন্যার পিতা ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। পিতা ল্যাপটপ বন্ধ করে কন্যার পাশে বসলো। কন্যা বাম হাত বাম গালের উপর রেখে আরাম করে ঘুমাচ্ছে। কন্যা এক পা তার মায়ের গায়ে উঠিয়ে দিয়েছে। মুগ্ধ চোখে পিতা তাকিয়ে আছে কন্যার মুখে দিকে। এই কন্যা ঘুমের মধ্যেও মাঝে মাঝে 'বাবা' 'বাবা' বলে ডেকে উঠে। তখন বাবা কন্যার মাথায় হাত রেখে বলে, কোনো ভয় নেই। তুমি ঘুমাও। তোমার বাবা তোমার পাশে আছে। কন্যা শুনতে পেলো কিনা কে জানে! কিন্তু সে পাশ ফিরে আরাম করে ঘুমায়। ঘুমের মধ্যেই এক হাত দিয়ে বাবাকে ছুঁয়ে রাখে। এই দৃশ্য টাও প্রতিদিনকার।
প্রিয় কন্যা আমার-
তুমি জানো এতক্ষন কার কথা বললাম? হা হা হা। তোমার কথা বলেছি। হ্যাঁ তোমার কথা। তুমি আমার জীবন বদলে দিয়েছো। তুমি আমার জীবন আনন্দময় করে তুলেছো। এখন আমি সর্বদা হ্যাপি। তাই আমি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে চাই। বাইরে থাকলে অস্থির লাগে আমার। কখন বাসায় যাবো। তোমাকে দেখবো। তুমি 'বাবা' 'বাবা' বলে আমার কোলে ঝাঁপ দিবে। তোমাকে কোলে নিবো। তুমি বলবে, বাইরে। আমি বাইরে নিয়ে যাই তোমাকে। সারাদিন ঘরে থাকতে থাকতে তুমি ক্লান্ত। এজন্য আমিই তোমাকে আগ্রহ নিয়ে বাইরে নিয়ে যাই। তাছাড়া এখন আমি কোথাও যাবো না। যেখানেই যাই তোমাকে নিয়ে যাবো। কারন তোমাকে ছাড়া কোথাও গিয়ে আমার ভালো লাগবে না।
রমজান মাস চলছে।
সেদিন তোমাকে নিয়ে আবারো গেলাম ডাক্তারের কাছে। তোমার খুবই ঠান্ডা লেগেছে। নাক দিয়ে সারাদিন পানি পড়ে। রাতের বেলা দুই একবার শুকনো কাশি দাও। দেরী না করে ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার তোমাকে তিন মাসের ওষুধ দিলো। এতটুকু বাচ্চাকে কেউ তিন মাসের ওষুধ দেয়! আমার মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হলো। যাই হোক, সেই ওষুধ তোমাকে দশ দিন খাওয়াবো। যদি উপকার পাও, তাহলে ওকে। তা না হলে অন্য ডাক্তারের কাছে যাবো। ঢাকা শহরে ডাক্তারের অভাব নাই। তোমার মা নামাজ পড়ে। তুমি দেখেছো। এখন তুমি সুযোগ পেলেই নামাজ পড়ো। নামাজে দাঁড়িয়ে বিড় বিড় করে যেন কি বলো! আজিব! সেদিন দেখলাম রাতা দুটায় তুমি নামাজ পড়ছো! তোমাকে একটা হিজাব কিনে দিয়েছি।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




