
মানুষকে ভালোবাসতেই হবে।
মানুষ খারাপ হোক, মিথ্যাবাদী হোক, অসৎ হোক, জটিল হোক, কুটিল হোক, ভূয়া হোক, মন্দ হোক, ভন্ড হোক, অসুস্থ হোক। তবু মানুষকে ভালোবাসতে হবেই। মানুষকে ভালো না বাসলে পাপ হয়। এই পাপের শাস্তি হলো- জীবনে ভালোবাসা না পাওয়া। এজন্য আমি সবাইকে ভালোবাসি। এবং আমার সাথে যারা অন্যায় করে তাদের আমি হাসিমুখে ক্ষমা করে দেই। কিন্তু আমি খেয়াল করে দেখেছি, যারা আমার সাথে অন্যায় করে প্রকৃতি তাদের শাস্তি দিয়ে দেয়। হ্যাঁ সত্যি। এটা বারবার প্রমানিত। এজন্য আমি খুব নিশ্চিত থাকি। মন্দ লোক কোনো না কোনো ভাবে ঠিকই শাস্তি পেয়ে যায়। ইয়েস।
তখন আমি স্কুলে পড়ি।
ক্লাশ সেভেন বা এইট হবে। একজন রাগী ম্যাডাম স্কুলে নতুন এসেছেন। ম্যাডামের নাম হোসনে আরা। খাটো করে। মোটার দিকে। বয়স ৩৫ হবে হয়তো। ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকেন জালি বেত নিয়ে। আসলে নারীদের হাতে বেত মানায় না। কখনো না। যাই হোক, একদিন ক্লাশে ম্যাডাম আমাকে মারলেন। কেন মেরেছিলেন সেটা আমার আজ মনে নেই। সম্ভবত ম্যাডাম কোনো কারনে আমাকে ভুল বুঝেছিলেন। জালি বেত দিয়ে ভালোই মারলেন ম্যাডাম আমাকে। পায়ে চাক্কা চাক্কা দাগ হয়ে গেছে। সাধারণত আমি স্কুলের হিরো। আমাকে মারলো! ম্যাডামের এই রকম নিষ্ঠুর আচরন আমার খুবই খারাপ লাগলো। অথচ আমি ভালো ছাত্র। রোল নম্বর তিন। মনে মনে ম্যাডামকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। হাজার হোক, মায়ের জাত তো।
পরের দিন দেখি ম্যাডাম স্কুলে আসেন নি।
খোজ নিয়ে জানলাম ম্যাডাম একসিডেন্ট করেছেন। রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে গেছে। যাই হোক, এক সপ্তাহ পর ম্যাডাম মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে স্কুলে এলেন। আমাকে বললেন, রাজীব স্যরি। অন্য একটা বিষয়ে আমার মেজাজ ভীষন খারাপ ছিলো। সেদিন তোমাকে মারাটা আমার অন্যায় হয়েছে। এই জন্য ঈশ্বর আমাকে শাস্তি দিয়েছেন। তারপর ম্যাডাম আমাকে বার্গার আর কোক খাওয়ালেন। আরেকটা ঘটনা বলি, আমাদের এলাকায় একটা বখাটে আছে। নাম সালাম। বাইক চালায়। একদিন আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেখলাম বখাটে বিকট শব্দে বাইক নিয়ে গলির ভিতরে প্রবেশ করলো। আমি বললাম, গলি তো খালি, হর্ন না দিলেও পারতে। বখাটে সালাম বলল, আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না। আমি কারো জ্ঞানে চলি না। আমি কিছু বললাম না। চাইলে সালামের কানটা টেনে ছিড়ে দিতে পারতাম। দিলাম বখাটে সালামকে ক্ষমা করে।
পরের দিন শুনলাম, বখাটে সালাম একসিডেন্ট করেছে।
হাত ভেঙ্গেছে। পা ভেঙ্গেছে। যাক, একমাস পর সালামের সাথে আমার গলির মুখে দেখা। সালাম ক্র্যাচ নিয়ে আমার কাছে এসে বলল, রাজীব ভাই আমাকে মাফ করে দেন। আপনার সাথে বেয়াদবি করেছি। এজন্য আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিয়েছেন। দেখুন, সারা জীবনের জন্য ক্র্যাচ এখন আমার সঙ্গী। আসলে আমি আপনাকে চিনতে ভুল করেছি। আপনি মহাপুরুষ। আপনার পাওয়ার আছে। কেউ না জানুক সেটা আমি টের পেয়েছি। ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কথা। যাই হোক, এরকম ঘটনা আমার জীবনে বহুবার ঘটেছে। আমার মা আমাকে খুব মানে। মা বলে, তুই যা বলিস তাই হয়। এজন্য মা বড় কোনো কাজ করার আগে সব সময় আমার সাথে আলাপ আলোচনা করে নেয়। আমার কাছ থেকে বুদ্ধি পরামর্শ নেয়।
যাই হোক, আরেকটা ঘটনা বলে, লেখাটা শেষ করছি।
তখন কলেজে পড়ি। আমি দেখতে শুনতে বরাবর স্মাট। জামা কাপড়ে, চেহারায়, কথায়, লেখাপড়ায়। একদিন ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে বের হয়ে ফুলার রোড হয়ে কলা ভবনের দিকে হেঁটে হেঁটে আসছি। ভর দুপুরবেলা। রাস্তা প্রায় খালি খালি। আমি দেখলাম, একটা মেয়ে রিকশায় করে যাচ্ছে। সে দুই হাত উঁচু করে আমাকে ডাকছে। মেয়েটার মুখ ভরতি হাসি। হাসিটা সুন্দর। আমি মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকালাম। মেয়েটা খুব সুন্দর। সুন্দর একটা চুন্ডি শাড়ি পরা। শাড়ির কুচি গুলো সব এক সমান হয়েছে। মেয়েটার মাথা ভরতি চুল। দুই হাত ভরতি কাঁচের চুড়ি। মোটা করে চোখে কাজল দেওয়া। কপালে একটা টিপ। না এই মেয়েকে আমি চিনি না। কোনোদিন দেখি নাই। অথচ মেয়েটা রিকশা থেকে নেমে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
মেয়েটা বলল, তুমি আমাকে চিনবে না।
আমি তোমাকে চিনি। তোমার নামও জানি। আমি বললাম, বলুন আমার নাম কি? মেয়েটা বলল, তোমার নাম রাজীব। আমি ভীষন অবাক হলাম! মেয়েটা বলল, আমি তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। আমরা দুজন দুনজকে ভালোবাসি। আমাদের বিয়ে হবে। ঘরসংসার হবে। বাচ্চা হবে। আমি বললাম, আপনি কি বলছেন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। মেয়েটা বলল, আমার কোনো ভুল হচ্ছে না। আসলে আমি তোমাকে গুছিয়ে বলতে পারছি না। এই দেখো আমার হাত কাঁপছে। আজ আমার ফুলার রোডে কোনো কাজ ছিলো না। তুমি স্বপ্নে বলেছো দুপুরবেলা আসতে। তাই আমি এসেছি। আমি মেয়েটার কথা কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। এদিকে আমার ক্ষিদে পেয়েছে। মেয়েটাকে বললাম, আচ্ছা, ঠিক আছে। পরে দেখা হবে। বলেই আমি হাঁটতে শুরু করলাম। কিছু দূর গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা কাঁদছে। আমার খুব কষ্ট লাগলো।
(লেখাটা বেশি বড় যাচ্ছে। মেয়েটার গল্প আরেকদিন বলব। যাই হোক, হয়তো অনেকে বলবেন, শিরোনামের সাথে লেখার কোনো মিল নেই। মিল আছে। অবশ্যই কিছুটা মিল আছে। আসলে লেখাটা পুরোটা লিখতে পারলে মিল খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু কাউকে কাউকে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছা করে। ইহা সত্য। এজন্যই হয়তো শিরোনাম দিয়েছি, 'এমন থাপ্পড় খাবি'।)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




