somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

সাইকেল... সাইকেল

১১ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একসময় আমার সাইকেল খুব পছন্দ ছিলো।
সাইকেলের বাংলা নাম সম্ভবত দ্বিচক্রযান। ছোটবেলায় আব্বা আমাকে সাইকেল কিনে দেয়নি। সাইকেলের কথা বললেই বলতো- 'হ, সাইকেল নিয়ে ট্রাকের নীচে চলে যাও! কখনও সাইকেল না। নো নেভার। সাইকেলের নাম মুখে নিবি না'। এদিকে আমার বন্ধুরা সাইকেল চালায়। আমি দূর থেকে দেখি। আর আব্বার উপরে রাগ হয়। একদিন আমার বন্ধু বলল, কোনো সমস্যা নাই। সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। এক ঘন্টা ৮ টাকা। রেলওয়ে কলোনী মাঠে সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। ভাড়ার সাইকেল দিয়ে আমি সাইকেল চালানো শিখলাম। হাতে পায়ে অনেক ব্যথা পেয়েছি। ছিলে গেছে। রক্ত বের হয়েছে। টুকটাক ব্যথা তখন গায়ে লাগতো না। স্কুল শেষ করেই চলে যেতাম রেলওয়ের কলোনি মাঠে। ইচ্ছা মতো সাইকেল চালাতাম।

একদিন সাইকেল নিয়ে আব্বার কাছে ধরা খেয়ে গেলাম।
আব্বা বললেন, 'না করলাম শুনলি না। আরেহ ব্যাটা জীবনে আমি আমার বাপের অবাধ্য হই নাই। এখনও আমার বাপ আমাকে ঝারি দেয়। দৌড়ের উপর রাখে'। তখন দাদা বেঁচে ছিলো। কিন্তু অন্ধ ছিলো। মারাত্মক তেজ ছিলো দাদার। তার ১১ জন ছেলেমেয়েকে সব সময় ধমকের উপর রাখতো। কিন্তু ছেলেমেয়ে গুলো বাপের জন্য পাগল ছিলো। যাই হোক, কিছু দিন সাইকেল চালানো বন্ধ রাখলাম। মাঝখান দিয়ে কয়েক বছর চলে গেলো। মেট্রিক পরীক্ষা শেষ। তখন আমাদের এক আত্মীয় বিদেশ থেকে এলেন। আমাকে বললেন, তুমি কি চাও? আমি বললাম, আমি একটি সাইকেল চাই। হিরো সাইকেল। তখন হিরো সাইকেল বাজারের সেরা ছিলো। আর ফনিক্স সাইকেল ছিলো মুরুবীদের। গ্রামে প্রত্যেক বাড়িতে একটা করে ফনিক্স সাইকেল থাকতোই।

এখন তো এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট এক মাসের মধ্যে দিয়ে দেয়।
আমাদের সময় তিনমাস পর পরীক্ষার রেজাল্ট দিতো। যাই হোক, নতুন একটা সাইকেল পেয়ে গেলাম। নিজের সাইকেল। তাও আবার হিরো সাইকেল। সাইকেলের দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা। এখন নাকি একটা সাইকেলের দাম ২০/২৫ হাজার টাকা। ৪০ হাজার টাকা দামের সাইকেলও নাকি আছে! যাই হোক, সাইকেল দিয়ে সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। ঢাকা শহরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আমি সাইকেল চালিয়ে যাই নি। সাথে আমার এক বন্ধু ছিলো- আলমগীর। আলমগীরের বাবা ছিলেন সচিব। আলমগীর এখনও সাইকেল চালায়। কয়েকে বছর আগে সে বাইক কিনেছিলো। বাইক বেচে দিয়েছে। তার নাকি সাইকেল'ই বেশি ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আলমগীর সাইকেল চালিয়ে আমার বাসায় আসে।

পুরো ঢাকা শহর সাইকেল চালিয়ে আমার সাহস গেলো বেড়ে।
একদিন আলমগীর আর আমি সাইকেল চালিয়ে চলে গেলাম ঢাকার বাইরে। মাওয়া। গাজীপুর। কাচপুর ব্রীজ। বসিলা। ঢাকার আশে পাশে গ্রাম গুলোতে খুব ঘুরলাম। গ্রামীন পরিবেশ আমার ভালো লাগে। দারুন আনন্দময় জীবন ছিলো তখন। ক্ষুধা পেলে যেখানে ইচ্ছা সাইকেল থামিয়ে খেয়ে নিতাম। একবার সাইকেল নিয়ে বিরাট বিপদে পড়লাম। সেদিন মিরপুর গিয়েছিলাম এক নম্বরে। হঠাত সাইকেলের চাকা পাংচার হয়ে গেলো। সন্ধ্যার পর সাধারণত সাইকেল সারানো লোকদের পাওয়া যায় না। মিরপুর থেকে সেদিন সাইকেল নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরে ছিলাম। ভীষন কষ্ট হয়েছিলো। একবার সংসদ ভবনের রাস্তায় এক প্রাইভেট কার আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে দিয়েছিলো। অথচ আমার কোনো দোষ ছিলো না। আমি সাইকেল থামিয়ে আইসক্রীম খাচ্ছিলাম। প্রাইভেট কার চালাচ্ছিলো এক চ্যাংরা পোলা। বুঝাই যাচ্ছে বড় লোকের বখাটে ছেলে। বখাটে আমাকে বলল, এই রাস্তায় সাইকেল নিয়ে আর আসবি না।

আমাদের এলাকায় একটা মেয়ে ছিলো- মিতা নাম।
মিতার বাবা পুলিশ ছিলো। মিতার একটা সাইকেল ছিলো। সে আমাকে বলতো- তুমি যখন সাইকেল নিয়ে বাইরে যাও আমাকে নিয়ে যেও। একদিন মিতাকে নিয়ে গেলাম পুরান ঢাকায়। সেদিন আমরা দুজন মিলে বিরানী খেয়েছিলাম। সাইকেলে করে বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে কেরানীগঞ্জ গিয়েছিলাম। মিতা বলেছিলো- চলো সারা জীবন আমরা সাইকেল চালিয়ে কাটিয়ে দেই। এক শহর থেকে আরেক শহর ঘুরে বেড়াবো। আমি রাজীব নূর বোকা নই। আমি বুঝতে পেরেছিলাম এটা মিতার আবেগের কথা। মিতার কথায় আমি পাত্তা দেই নাই। প্রতি শুক্রবার মিতা আর আমি সাইকেল নিয়ে বের হতাম। মিতা পছন্দ করতো নদীর ধার। মিতাকে নিয়ে যেতাম বালু নদীতে। সাইকেল রেখে আমরা বসে গল্প করতাম। এখন মিতা কোথায় আছে জানি না। মিতাকে দেখতে ইচ্ছা করে। সুরভিকে কখনও মিতার কথা বলা হয়নি। বলবও না। সংসারে অশান্তি করে বোকারা।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:১০
২৩টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আসেন জুলাই/ আগস্টের মিনি পোস্ট মোর্টেম করি।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২৪





গল্প শুনেন বলি-

আমরা পড়ালেখা গুছগাছ কইরে চাকরীতে ঢুকছি।হঠাৎ বন্ধু গো ইমেইলের গ্রুপে মেসেজ (নাম ধরেন রফিক), রফিক যে পাড়ায় (রেড লাইট এরিয়া) যাইতো সেখানের একজন সার্ভিস প্রোভাইডাররে বিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলন পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১৬

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলনের পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লালবদর নীলা ইস্রাফিল এখন বলছেন ও স্বীকার করছেন যে—
জুলাইয়ের সবকিছুই ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন।
মুগ্ধের হত্যাও সেই ডিজাইনের অংশ।

অভিনন্দন।
এই বোধোদয় পেতে দেড় বছর লাগলো?

আমরা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×