ছবিঃ আমার তোলা।
খুতবা যে হুজুর দিতে থাকেন, তাতে নতুন কোনো কথা থাকে না। ঘুরে ফিরে এক কথাই প্রতিদিন। একই রকম কথা কারো ভালো লাগার কথা না। হুজুরদের কথায় নতুন কিছু থাকে না। তাদের সমস্ত আলাপ, গল্প, আলোচনা দুটা বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কোরআন আর হাদীস। একই কথা বারবার বলার কারনে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সেই নবিজির আমল থেকে হুজুরেরা দুটি বই থেকেই ক্রমাগত বলেই যাচ্ছেন। বলেই যাচ্ছেন। তাই খুতবাতে ঘুম আসাটা স্বাভাবিক। ভারতের লোকনাথ এবং সাঁই। দুজনেই সমাজের কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাস দূর করায় ব্রতী ছিলেন, কিন্তু তাদের মৃত্যুর পরে তাদের বাণীকে ধর্মব্যবসায় পরিণত করা হয়। আমার ঘরের পাশেই মসজিদ। খুতবা ঘরেই বসেই শুনতে পাই। হুজুর একদিন বললেন, ঐ দেখুন আমার খুৎবা শুনতে শুনতে দুইজন ঘুমিয়ে গেছে। এটা আল্লাহর রহমত। জুম্মার দিন আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় তাই তাই ঘুম আসে।
হুজুর যদি তাদের আলোচনাতে একটু পরিবর্তন আনেন। নতুন কিছু কথা বলেন তাহলে কিন্তু ঘুম আসবে না। আজ পর্যযন্ত কোনো হুজুর স্টিফেন হকিং কে নিয়ে আলোচনা করেন নাই। হযরত আলীকে নিয়ে আলোচনা করেছেন। কোনো হুজুর আধুনিক টেকনোলজি নিয়ে আলোচনা করেন নাই। করেছেন, বলেছেন শুধু মসজিদ মাদ্রাসার কথা। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে হুজুররা কথা বলেন না। নারী শিক্ষা নিয়ে হুজুররা কিছু বলেন না। আপনার দেখার দিকটাই আপনার দর্শন, আর তা তৈরি হয় আপনার পরিবেশের প্রভাবে। পরিবেশের সামান্যতম জিনিসেরও সমান প্রভাব আছে একজন মানুষের বেড়ে উঠায়। এমনিতেই আমাদের জীবনের নানাবিধ জটিলতা নিয়ে মানুষ স্বস্তিতে নেই তার উপর স্বর্গ-নরকের লাভ লোকসান নিয়ে জীবনভর হিসেব কষা আরেক যন্ত্রণা। ইহকাল বাদ দিয়ে পরকাল নিয়ে ভাবাটা বোকামি।
কি করলে চাকরী পাওয়া যাবে- সেই আলোচনা কোনো হুজুর আজ পর্যন্ত করেন নাই। কি করে পতিতাদের কোনো অফিসে কাজ দেওয়া যায় সেসব নিয়ে হুজুররা বলেন না। মাদক বন্ধ করতে হবে কিভাবে তা হুজুররা বলেন না। শুধু জুম্মার দিনে খুতবা না, হুজুরদের সমস্ত আলোচনাই কোরআন ও হাদীস নিয়ে। অথচ আমদের দেশ কোরআন হাদীসের নিয়মে চলে না। আমাদের দেশ চলে সংবিধান অনুযায়ী। জীবনকে বুঝতে হলে টিনের চশমা খোলা দরকার। ধার্মিকেরাও ধর্মকে ব্যবহার করে অপকর্ম করে যায়, কিন্তু ধর্মকে কটাক্ষ করে কিছু বললেই সিরিয়াস রূপ ধারণ করে তাঁরা। সমস্যা তখন, যখন ডাক্তার চিকিৎসা না করে যদি বলতে আরম্ভ করে যে দোয়াদরুদ পড়ুন, বিচারক যদি বলেন যে ধর্মে বলা আছে যে অপরাধ প্রমান করতে চারজন সাক্ষী লাগবে, নাহলে অপরাধী সাজা পাবেনা, নিচু জাতি বলে কাউকে জল দেওয়া যাবেনা ইত্যাদি। ইদানীং কিছু হুজুর ওয়াজ করার সময় নানান রঙ ঢং করে থাকেন। তাতে ওয়াজ শুনতে আসা লোকেরা আনন্দ পায়। মানুষ হাসতে চায়। আনন্দ চায়। ভয় পেতে চায় না। ররুপকথা শুনতে চায় না।
গুরু নানক বলেছিলেন- মানুষ হও , হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান কিছুই হওয়ার প্রয়োজন নেই। নানক খুবই সুন্দর কথা বলেছেন। মানুষের আসল পরিচয় ধর্ম বা ইসলাম না। মুসলিম না। মানুষের আসল পরিচয় সে 'মানুষ'। আমি একজন মানুষ। তারপর একজন গর্বিত বাংলাদেশী। আমি প্রতিটি মানুষকেই একজন 'মানুষ' হিসেবে দেখি। লিঙ্গ, ধর্ম, ধনী গরীব, জাতীয়তাবাদ আমার কাছে তেমন মূখ্য নয়। তবে যারা ধর্মের ওপর ভিত্তি করে মানুষ বিচার করে তাদের বিষয়ে সাবধান। আপনি যদি কোনো গানের অনুষ্ঠানে যান তাহলে আপনার ঘুম আসবে না। গান মানুষ উপভোগ করে। হুজুরদের দিনের পর দিন একই ঘ্যান ঘ্যান শুনতে শুনতে মানুষ আজ বিরক্ত। ধর্মে আর নতুন কথা বলা সম্ভবও না। তাই এখন হুজুররা ওয়াজে গিয়ে গান করছেন। কৌতুক করছেন। শ্রোতা যেন বিরক্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখছেন। এটা ভালো। বুদ্ধের জীবনী থেকে জানা যায় যে, তিনি ইশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি এবং সবকিছু যুক্তি দিয়ে বিচার করার পক্ষে ছিলেন। জাস্ট গ্রেট। আপনার আশে পাশের ৯০ ভাগ মানুষই চিন্তা করে না বা করতে পারে না। ধর্ম নতুন কিছু ভাবতে শেখায় না। যে'ই ধর্ম আঁকড়ে থাকবে, সে-ই পেছনে পড়ে থাকবে। আমি আর দশজনের চেয়ে আলাদা- এই সুখানুভূতিটা অনুভব করতে আমার ভালো লাগে। তোতা পাখির মত শিখিয়ে দেয়া জীবন থেকে বের হয়ে অন্য দেশ, ধর্ম, সম্প্রদায়, প্রকৃতির বৈচিত্র, সৌন্দর্য উপভোগ করি। নিজের অজান্তেই বারবার বলে ফেলি- 'লাইফ ইজ বিউটিফুল'।
ঈশ্বর একটি ধর্মই মানুষকে দিয়েছেন আর সেটা হচ্ছে 'মনুষ্যত্ব'। অমঙ্গলের আশঙ্কায়, নরকভীতিতে মানুষ ধর্মকে মানে বা ধর্মপালন করে। সৃষ্টিশীল মানুষ এবং মহামানবেরা কোন নির্দিষ্ট ধর্মের গন্ডিতে আবদ্ধ থাকেন না। তারা ধর্ম, জাতি, দেশ, কালের সীমানার অনেক অনেক উপরে। ধর্ম সত্য এটা দাবি করেন ধর্মগুলির ধর্মগুরুরা, যাদের পেট চলে ধর্মব্যবসা করে। নয়তো পুরুত, মৌলভী, পাদ্রীদের সবাইকে বাজারে, রেলস্টেশনে ভিক্ষা করতে হতো। গতকাল সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে কথা হলো। তাদের বললাম, তোমরা কি মাদ্রাসায় পড়ে নাসায় চাকরী পাবে? কর্পোরেট অফিসে চাকরী পাবে? উড়োজাহাজ চালাতে পারবে? বিজ্ঞানী হতে পারবে? ছাত্ররা বললো- আমরা মসজিদে চাকরী পাবো। আযান দিবো। নামাজ পড়াবো। এটাই আমাদের শান্তি। পরকালে আমরা আনন্দ করবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২২ রাত ১০:৪৬