(গতকাল দুপুরে এই পোষ্ট টি লিখেছিলাম।
কিন্তু আমার ভাগ্য খারাপ লেখাটা পোষ্ট করার আগে হঠাত লেখাটা মুছে যায়। খুব মন খারাপ হয়েছিলো আমার। রাগ করে দুপুরে ভাত'ই খাই নি। প্রায় আড়াই হাজার শব্দ লিখেছিলাম। যাইহোক, এখন আবার লিখতে বসলাম। কিন্তু আমি জানি লেখাটা আগের মতো সুন্দর হবে না। প্রথম বার লেখাটা যতটা ভালো হয়, দ্বিতীয় বার ততটা ভালো হয় না।)
লেখাপড়া শেষ করেছি। চাকরী পাচ্ছি না।
এলাকার এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে মরিশাস গেলাম। মরিশাস যেতে বেশি টাকা লাগেনি। মরিশাস খুব সুন্দর দেশ। ছবির মতো সুন্দর। এখানে যারা বাঙ্গালী আছে তাঁরা সবাই অতি নীচু মানের কাজ করে। (আমি কিন্তু নীচু কাজ বলে, কোনো কাজকে অবহেলা করছি না।) এত নীচু মানের কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। যদি নীচু কাজ'ই করি তাহলে লেখাপড়া করলাম কেন? ঠিক করলাম দেশে ফিরে যাবো। কিন্তু প্লেনের টিকিট কাটার টাকা নাই। বাঙ্গালী দেশী ভাইরা বলল, তাঁরা সবাই অল্প অল্প করে টাকা দিয়ে আমার টিকিটের ব্যবস্থা করে দিবে। আমি বললাম, না। আমার টিকিটের টাকার ব্যবস্থা আমিই করবো।
সমুদ্রের পাড়ে অনেক নারী পুরুষ শুয়ে আছে।
আমি এক বোতল তেল নিয়ে তাদের সামনে গিয়ে বলছি- ওয়েল ম্যাসাজ, ওয়েল ম্যাসাজ। কেউ কেউ আমাকে ডাক দিলো। আমি তেল দিয়ে তাদের সারা শরীর ঢলে দিলাম। ইচ্ছে মতো মালিশ করে দিলাম। এরপর ট্যাটু লাগাতে শুরু করলাম। সমুদ্রে তীরে যারা বেড়াতে এসেছে, স্নান করছে তাদের সামনে গিয়ে বলি- ট্যাটু, টেটো। অনেকেই আমাকে ডাক দিচ্ছে। তাঁদের শরীরের নানান জায়গায় ট্যটু লাগিয়ে দিচ্ছি। যাইহোক, পনের দিনে অনেক টাকা হয়ে গেলো। সেই টাকা দিয়ে টিকিট কেটে দেশে ফিরি।
দেশে ফিরে এক বছর হয়ে গেলো। চাকরী পাই না।
তখন ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় গেলাম সৌদি। সৌদি একটা বর্বর দেশ। বাকি জীবনে এই দেশে আর যাবো না। নো নেভার। বলেছিলো আমাকে কাজ দিবে ফাইভ স্টার হোটেলের ম্যানেজার। কিন্তু গিয়ে দেখি কাজ পেয়েছি কাঠ মিস্ত্রির হেল্পার। কাঠের কাজ জীবনে কোনোদিন করি নাই। ইয়া বড় বড় কাঠ কাঁধে করে নিয়ে আসতে হয়। আমি পারি না। হেড মিস্ত্রি ঘানার এক লোক সে আমাকে মুখ খিচিয়ে খারাপ গালি দেয়। বলে পাকিস্তানীরা কিভাবে কাঠ কাঁধে করে নিয়ে আসে, তুই কেন পারিস না শালা! দিলাম কাজ ছেড়ে।
সৌদিতে আমি যে এলাকায় ছিলাম তার নাম- হাফার আল বাতেন।
একদম ইরাকের বর্ডারের কাছে। চারিদিকে শুধু মরুভূমি আর মরুভূমি। একটু পরপর বাতাস এসে সারা শরীর বালি দিয়ে ভরিয়ে দিয়ে যায়। এদিকে যেখানে থাকি সেখানে পানির সমস্যা। যে পানি দিয়ে যায়, তাতে একদিন ঠিক মতো হয় না, অথচ বলে এই পানি দিয়ে সাত দিন চলতে হবে? একদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। আচমকা এক পুলিশ এসে আমাকে মারতে শুরু করলো। বলল, এই মিসকিনের বাচ্চা নামাজের সময় তুই বাইরে ক্যান? প্রচন্ড গরমের দেশ। দেশে ফিরব সেই উপায় নাই। পাসপোর্ট রেখে দিয়েছে মালিক। সৌদিরা ভিসাকে বলে আকামা। আর হুজুরকে বলে মোতা। শুনেছি, কত লোক সৌদি এসে অনেক টাকা ইনকাম করে। দেশে গাড়ি, বাড়ি করে। জমি কিনে।
বুঝে গেলাম সৌদিতে থাকলে আমি মরে যাবো।
মালিকের হাত পায়ে ধরলাম। বললাম, আমাকে মাফ করে দেন। আমি দেশে চলে যাবো। আল্লাহর দোহাই লাগে। আমার ভাগ্য ভালো তখন মালিকের দ্বিতীয় স্ত্রী মালিকের সাথে ছিলো। স্ত্রী বলল, দিয়ে দাও ছেলেটার পাসপোর্ট। পাসপোর্ট হাতে পেলাম। কিন্তু দেশে ফিরবো কি করে প্লেনের টিকিট এর টাকা নাই। টাকার জন্য নানান রকম কাজ করলাম। মিথ্যা বলব না যেই বাঙ্গালির কাছে গিয়ে কাজ চেয়েছি, কাজ দিয়েছে। এক মাস কুকুরের মতো খাটলাম। রেস্টুরেন্টে কাজ করেছি। গাড়ির গ্যারেজে কাজ করেছি। বাজারে কাজ করেছি। এখন আপনিই বলুন, নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে আমার মানসিক অবস্থা কি হয়েছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২২ দুপুর ১২:৪৯