
হ্যাঁ এরকম বহু কথা আছে।
বহু গল্প আছে। আমার, একান্তই আমার। যা কখনও কাউকে বলিনি। কিন্তু আজ আপনাকে আমি একটা দুঃখের গল্প বলতে চাই। আমার জীবনের দুঃখের গল্প। সত্যি গল্প। কষ্টের গল্প। শান্তির কথা বলব না। কারন মানুষ যত কষ্ট পায় তত খাটি হয়। ঠিক স্বর্নের মতো। স্বর্ন যত পুড়ে তত খাটি হয়। এজন্যই আপনাকে আমার একটা দুঃখের গল্প বলছি। আমার জীবনের গল্প নাটক সিনেমা বা গল্প উপন্যাসকেও হার মানায়।
লেখাপড়া শেষ করছি, চাকরী পাই না।
শুধু জুতা ক্ষয় করছি। বাবা মায়ের অনেক বয়স। তাঁরা বেশ অসুস্থ। ডাক্তার দেখালে বলবে, এখুনই হাসপাতালে ভরতি করান। ঢাকা নাই ভরতি করাবো কি করে? এদিকে আমার তিন বোন। দুজনের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের সবাই আমার একটা চাকরীর অপেক্ষায়। একটা চাকরী আমাদের পুরো পরিবারের চেহারা বদলে দিবে। বাবা মা সারাদিন নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে আমার চাকরীর প্রার্থনা করে। অথচ চাকরী নাই। আমাদের কোনো ক্ষমতাবান মামা চাচা নেই, যে ফোন করে বললেই চাকরী হয়ে যাবে।
তবে আমার দুটা টিউশনি ছিলো।
অল্প কিছু টাকা আসতো। টিউশনি করেও শান্তি নেই, ওদের চল্লিশ কেজি চালের বস্তা টেনে পাঁচ তলায় তুলে দিতে হতো। মাস্টার্স পাশ করে শেষমেষ কোনো উপয়া না দেখে- একটা অফিসে পিয়নের চাকরী নিলাম। খুব অল্প টাকা বেতন। মাত্র আট হাজার টাকা। বাসায় সবাইকে বললাম, চাকরী হয়েছে। কি চাকরী সেটা এড়িয়ে গেলাম। অফিস শেষ হওয়ার পরও স্যাররা আমাকে নানান জায়গায় পাঠায় তাদের ব্যাক্তিগত কাজ দিয়ে। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১০/১১ টা। অথচ অফিস ছুটি হয় বিকেল ৫ টায়। অমানবিক পরিশ্রম করে যাচ্ছি। যাই হোক, এভাবে দিন যাচ্ছে। মাস শেষ সেলারি পাবো। তারউপর সামনে ঈদ। অফিস আমাকে খুশি হয়ে ৮ হাজার টাকার বদলে ১০ হাজার টাকা দিলো। বলল, তাঁরা আমার কাজে খুশি।
পকেটে ১০ হাজার টাকা। খুব খুশি লাগছে।
ভাবছি এত টাকা দিয়ে কি কি করবো। বাবার জন্য পাঞ্জাবী, মায়ের জন্য শাড়ি। বোনদের জন্য জামা। সেমাই, পোলাউ, মাংস। কিন্তু আমার এসব কিছুই কেনা হয়নি। পকেটে হাত দিয়ে দেখি টাকা নেই। হারিয়ে ফেলেছি অথবা পকেটমার হয়ে গেছে। মাথায় যেন পুরো আকাশটা ভেঙ্গে পড়লো। ঈদের দিন বাবা মা আর বোনদের নিয়ে না খেয়ে থাকলাম। ঈশ্বর মনে হয় আছেন, ঈদের সারাটা দিন না খেয়ে থাকতে হয়নি, পাশের বাসার রুনা ভাবী বড় বোলে করে একগাদা খাবার দিয়ে গেলেন। রুনা ভাবী আমাদের জন্য অনেক করেছেন। অনেক।
একদিন সম্পূর্ন অকারনে চাকরীটা চলে গেলো।
এদিকে আমার বড় বোনকে বা কারা কিডনাপ করলো। অনেকে থানা পুলিশ করলাম। বোনকে আর খুঁজে পেলাম না। কেউ কেউ বলল, আমার বোনকে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে নাকি একটা চক্র বিক্রি করে দিয়েছে। বাবা মা মারা গেলেন বিনা চিকিৎসায়। আমার চোখের সামনে। মেজো বোন মারা গেলো ক্যান্সারে। আমি বেঁচে আছি। আর বেঁচে আছে আমার ছোট বোনটা। তিন বছর হলো ছোট বোনটাকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট বোনের স্বামী কলেজ শিক্ষক। গত বছর তাদের জমজ সন্তান হয়েছে। নাম রেখেছি আমি টাপুর টুপুর।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



