
অফিসের কাজে চিটাগাং যাচ্ছি।
জরুরী কাজ। ভেবেছিলাম সকাল বেলাতে চিটাগাং রওনা দিবো। কিন্তু পারিবারিক কাজে সকালে রওনা দিতে পারিনি। আমি জানি রাত ১১ টায় বাস আছে। বাসের টিকিটও আগে কেটে রাখি নাই। কারন আমি জানি বাসের টিকিট পাওয়া যাবে। শুধু মাত্র ঈদের সময় টিকিট পাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়। ঢাকা থেকে প্রচুর বাস প্রতিদিন চিটাগাং যাচ্ছে। কাজেই বাসের টিকিট নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। আর যদি সমস্যা হয়ও তাহলে ট্রেনে করে চলে যাবো। প্রতিদিন রাত সাড়ে ১১ টায় 'তূর্ণা এক্সপ্রেস' ছাড়ে।
যাইহোক, বাসা থেকে বের হয়ে ফকিরাপুল গেলাম।
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে গেলাম। হ্যাঁ টিকিট আছে। ৫শ' টাকা টিকিট। (আমি অনেক আগের কথা বলছি। এখন তো টিকিটের দাম অনেক বেড়েছে।) অবশ্য বাস গুলোও দারুন। জার্নিতে ক্লান্তি লাগে না। আরাম আছে। সে যাকগে, টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি ম্যানিব্যাগ পকেটে নাই। মেজাজটা আমার প্রচন্ড খারাপ হলো। না ম্যানিব্যাগ হারাইনি বা পকেটমার হয়নি। তাড়াহুড়ায় ভুলে বাসায় রেখে এসেছি। এরকম ভুল তো হওয়ার কথা না। রাগ লাগছে।
আমি রাস্তায় এসে দাড়ালাম।
কি করবো বুঝতে পারছি না। এখন আবার বাসায় যেতে হবে। ম্যানিব্যাগ নিয়ে ফিরে আসতে আসতে অনেক সময় লাগবে। ততক্ষন বাস ছেড়ে দিবে। (সেই সময় বিকাশ ছিলো না, মোবাইল ফোনও ছিলো না।) আমি মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকালাম। মনে মনে বললাম, হে আল্লাহ আমাকে কি বিপদে ফেললে! এক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হলো- আল্লাহ যেন বললেন, 'চিন্তা করিস না'। আমি আকাশের দিক থেকে নীচে তাকালাম। দেখি সাত শ' টাকা রাস্তায় পড়ে আছে। একটা ৫ শ' টাকার নোট, দুটা ১০০শ' টাকার নোট। কেন জানি একটুও অবাক হলাম না।
আমি দৃঢ় বিশ্বাস এই টাকা আল্লাহপাক আমকে দিয়েছেন।
আমি টাকা টা তুলে নিলাম। আমার মধ্যে কোনো অপরাধ বোধ কাজ করলো না। ৫শ' টাকা দিয়ে টিকিট কেটে নিলাম। বাস চলছে তুফানের মতো। মনে হচ্ছে ভোর ৬ টার মধ্যে চিটাগাং পৌঁছে যাবো। যাইহোক, একবার বাস কুমিল্লাতে থামলো বিশ মিনিটের জন্য। আমার কাছে এখনও দুই শ' টাকা আছে। 'রাস্তায় পাওয়া টাকা'। কথাটা ভুল বললাম, রাস্তায় পাওয়া টাকা নয়। আল্লাহর দেওয়া টাকা। একশ' টাকা দিয়ে ভাত খেলাম রুই মাছ দিয়ে। রসমালাই খেলাম। ফানটা খেলাম। সব শেষে একটা বাংলা ফাইভ সিগারেট। এখন বাংলা ফাইভ সিগারেট পাওয়া যায় না।
সারাদিন পাগলের মতো কাজ করলাম।
অফিস আমাকে যে কাজে পাঠিয়েছিলো সেই কাজ খুব সুন্দর মতো শেষ করতে পেরেছি। রাতের গাড়িতে ঢাকা ফিরবো। কিন্তু আমার কাছে কোনো টাকা নেই। আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, হে আল্লাহ তুমি আমাকে ঢাকা থেকে চিটাগাং এনেছো। এবার আমাকে ঢাকা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও। আল্লাহর সাথে কথা শেষ করে- নিজের অজান্তেই নীচের দিকে তাকালাম। দেখি রাস্তায় ৭ শ' টাকা পড়ে আছে। একটা পাঁচ শ' টাকার নোট আর দুটা ১০০ শ'টাকার নোট। আমি সুন্দর ভাবে ঢাকা ফিরে এলাম। ফেরার পথেও কুমিল্লাতে বাস থামলো। পানসী নামের রেস্টুরেন্টে খেলাম। রুই মাছ দিয়ে ভাত। রসমালাই। ফানটা এবং সবশেষে একটা বাংলা ফাইভ।
বহু আগের ঘটনা। আজ হঠাত মনে পড়লো।
তাই ঘটনাটা লিখে ফেললাম। এই ঘটনা জীবনে মাত্র দুজনকে বলেছি। দুজনের কেউ'ই বিশ্বাস করেনি। হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। প্রথম বলেছিলাম, নীলাকে। একদিন বিকেলে নীলা আর আমি ধানমন্ডি লেকে বসে আছি। তখন নীলাকে চিটাগাং যাওয়া এবং রাস্তায় টাকা পাওয়ার ঘটনাটা বললাম, নীলা হেসে উড়িয়ে দিলো। বিশ্বাস'ই করলো না! বিয়ের পর বললাম, স্ত্রীকে। সুরভি বললো- যাহ বানিয়ে বানিয়ে আর বলতে হবে না। অথচ ঘটনা সত্য। মানুষ মিথ্যাটা দ্রুত পছন্দ করে এবং বিশ্বাস করে। সত্যটা বিশ্বাস করতে চায় না। মানুষের ইতিহাস বড়ই রহস্যময়। সমাজবিজ্ঞান তো তাই বলে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২২ সকাল ১১:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



