
আমার স্কুল জীবন ছিলো আনন্দের।
খুব আনন্দের। আমি ছিলাম স্কুলের হিরো। আমাদের স্কুলে ছেলেমেয়ে একসাথেই ক্লাশ করতাম। আমি দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দর। স্মাট। উঁচা লম্বা ভালোই। পট পট করে কথা বলি। কোনো জড়তা নেই। কোনো রকম ভান নেই, ভনিতা নেই। লেখাপড়ায়ও ভালোই ছিলাম। যাইহোক, আমার স্কুল জীবনের একটা ঘটনা বলি। তখন আমি ক্লাশ নাইনে পড়ি। বিজ্ঞান শাখায়। অনেক মেয়েই আমার দিকে আড়ে আড়ে চায়। আমি পাত্তা দেই না। কেউ কেউ আমাকে চিঠি পর্যন্ত দিতো। সেই সব চিঠি না পড়েই আমি ফেলে দিতাম। মেয়েরা আমাকে কত কিছু গিফট করতো!
আমাদের স্কুলে এক নতুন ম্যাডাম এলেন।
দারুন সুন্দরী। ম্যাডামকে দেখে আমি মুগ্ধ! ছোটবেলা থেকেই আমার সুন্দরের প্রতি দারুন আকর্ষন। ম্যাডামের নাম মীরা। মীরা ম্যাডাম আমাদের ইংরেজি ক্লাশ নিতেন। চল্লিশ মিনিটের ক্লাশ। এই চল্লিশ মিনিট আমি মুগ্ধ হয়ে শুধু ম্যাডামকে দেখতাম। ম্যাডাম এর আমার সব ভালো লাগতো! তার হাসি, তার কথা, তাঁরা চোখ, তার পাতলা শাড়ি। তার পেট। ম্যাডাম যখন শাড়ি পড়তেন তখন তার অনেকখানি পেট বের হয়ে থাকতো। সাদা পেট। কি সুন্দর। মসৃন! অথচ তা নিয়ে ম্যাডামের কোন মাথা ব্যথা নেই, জড়তা নেই। এই জিনিসটাই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো।
একদিন ম্যাডাম বুঝে ফেললেন আমি তাকে মুগ্ধ হয়ে দেখি।
যাইহোক, ক্লাশ শেষ হলো- ম্যাডাম বললেন, স্কুল ছুটির পর তুমি আমার সাথে দেখা করবে। আমি ভয় পাইনি। ঘাবড়েও যাইনি। বরং খুশি হয়েছি। স্কুল ছুটি হলো- টিচার্স রুমে গিয়ে ম্যাডামের সাথে দেখা করলাম। ম্যাডাম অতি সাধারন দুই একটা কথা জিজ্ঞেস করলেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন, তোমার চুল গুলো সুন্দর তো। কি শ্যা ম্পু দাও। বুঝাই যাচ্ছে খুব যত্ন নাও। ম্যাডাম তার ব্যাগ থেকে আমাকে দুটা চকলেট বের করে দিলেন। আমি নিলাম। আমাদের ভূগোল পড়াতেন ইসহাক স্যার। টাক মাথা। এই টাক মাথা দেখি- ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমার ভীষন রাগ হয়। ইচ্ছা করতো তিন তলা থেকে স্যারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই।
স্কুল একমাসের বন্ধ!
আমার মাথায় যেন আকাশটা ভেঙ্গে পড়লো! ম্যাডামকে দেখতে পারবো না! ম্যাডামের বাসা খুঁজে বের করলাম। আরামবাগ বাসা। ম্যাডাম আমাকে দেখে অবাক! আমিও ম্যাডামকে দেখে অবাক! ম্যাডাম কি সুন্দর একটা জামা পরে আছেন। দেখতে কি ভালো লাগছে! ম্যাডাম বললেন, বাসা কিভাবে খুঁজে বের করলে! আমি বললাম, ইচ্ছা করলেই সম্ভব। ম্যাডাম নুডুলস রান্না করলেন। মনে হলো এরকম নুডুলস আমি জীবনেও খাইনি। এত মজা লাগলো! বললাম, আমি আপনার কাছে পড়তে চাই। ম্যাডাম বললেন, আমি তো প্রাইভেট পড়াই না। আমি বললাম, তাহলে আমি প্রতিদিন আপনার কাছে আসবো। আপনি আমাকে নুডুলস রান্না কররে খাওয়াবেন। ম্যাডান হাসলেন। কি সুন্দর হাসি! একদম বুকে এসে লাগে!
এরপর ম্যাডামে সাথে আমার বেশ ভাব হয়ে গেলো।
ম্যাডামের কাছে যাই। গল্প করি। ম্যাডাম বাসায় একা থাকেন। বিয়ে করেন নি। মাঝে মাঝে ম্যাডামের সাথে বাইরে যাই। হাঁটি। বাজার করি। ম্যাডাম আমাকে আইসক্রিম খাওয়ান। নিজেও খান। ম্যাডামের একটা মেরুন কালারের গাড়ি ছিলো। ম্যাডাম নিজেই চালাতেন। আমি ম্যাডামের পাশে বসে থাকতাম। কি যে ভালো লাগতো!! আমার স্কুল জীবনের সেরা আনন্দ এই মীরা ম্যাডাম। একদিন ম্যাডাম জানালেন সে আমেরিকা চলে যাচ্ছে। সেখানে তার মা আর বড় ভাই থাকেন। খুব কষ্ট পেলাম। একদম চোখে পানি চলে এলো আমার। ম্যাডামকে বলতে ইচ্ছা করলো- না আপনি যাবেন না। খবরদার আপনি যাবেন না। আল্লাহার দোহাই লাগে আপনি যাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০২২ রাত ১২:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



