
আমার কন্যা আমাকে প্রশ্ন করে।
তার প্রশ্নের শেষ নেই। অদ্ভুত সব প্রশ্ন। আজ প্রশ্ন করলো- বাবা 'কে বেশি জ্ঞানী, যে বেশি প্রশ্ন করে নাকি যে উত্তর দেয়'? আমি তার প্রশ্ন শুনে বলি- খুব সুন্দর প্রশ্ন। খুব মজার প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর আমি এখন দিবো না। আগামীকাল দিবো। আজ আমি তোমার প্রশ্নটির উত্তর নিয়ে ভাববো। ভেবে ভেবে একটা সিদ্ধান্তে আসবো। হুট করে একটা বোকার মতো উত্তর দিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কারন এই প্রশ্নের উত্তরটা অনেক জ্ঞানীগুনী লোকেরা পড়বেন। বোকার মতো উত্তর দিলে তাঁরা হাসবেন। অথবা রাগ করবেন। আমি বিশ্বাস করি- একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি মানবতার সম্পদ, মানব জাতির সম্পদ। তাহলে একজন বোকা ব্যাক্তি কি?
ছোটবেলা আমার শিক্ষক বলতেন,
প্রশ্ন করো, আমাকে প্রশ্ন করো। আমি রাগ করবো না। আমাকে প্রশ্ন করলেই তুমি শিখতে পারবে, জানতে পারবে। প্রশ্ন না করে বোকার মতো বসে থাকলে তোমার ক্ষতি। তুমি কিছু শিখতে পারবে না। জানতে পারবে না। জানার প্রথম শর্তই হচ্ছে- প্রশ্ন করা। সাহস করে প্রশ্ন করে ফেলো। আবার এমনও শিক্ষক দেখেছি, প্রশ্ন করলে রেগে যেতেন। তবে আমি খুব প্রশ্ন করতাম। এখনও প্রশ্ন করি। আমার কৌতূহল বেশি। এদিকে ইসলাম ধর্ম বলছে, প্রশ্ন করো না। শুধু বিশ্বাস করে যাও। যীশু বলেছেন, বিশ্বাস করো। তাহলে পাবে। দেবদেবীরা বলেন, ভগবানের উপর বিশ্বাস রাখো। সব পাবে। ভগবান সব দেবে।
মানুষ প্রশ্ন করে জানার জন্য।
আর যে উত্তর দেন তিনি জানেন বলেই উত্তর দিতে পারছেন। অর্থাৎ আপাতত বলা যেতে পারে- যিনি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তিনিই বেশি জ্ঞানী। অন্তত প্রশ্নকারীর চেয়ে। সব মানুষের জ্ঞান সমান হয় না। আর সব মানুষ সব কিছুতে জ্ঞানী হয় না। সুন্দর একটা প্রশ্ন করতেও জ্ঞান লাগে। ভালো জ্ঞান না থাকলে ভালো প্রশ্ন করা যায় না। ধরুন, আমার জানতে ইচ্ছা করলো আফগানিস্তানের নারীরা কেমন আছে? আপনি সুন্দর করে উত্তর দিলেন। আপনার উত্তর পেয়ে আমি মুগ্ধ! আবার আপনি আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমস্টারডাম শহরের নারীরা কতটা স্বাধীন। সেই প্রশ্নের উত্তর আমি আপনাকে দিলাম। একেকজন একেক বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান রাখেন। জ্ঞান তো জমিয়ে রাখতে হয় না। জ্ঞান বিলিয়ে দিতে হয়।
জ্ঞানী ব্যাক্তিরা কথা কম বলেন।
তাঁরা বেশী শুনেন। অবশ্য আমি বলি কম। শুনি বেশী। একটা হাদীসে পড়েছিলাম- হযরত মূসা (আঃ) এক সমাবেশে ভাষণ দিতে দাঁড়ালে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো- কোন ব্যক্তি সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন, আমিই সর্বাধিক জ্ঞানী। মূসা (আঃ) এর আত্মবিশ্বাস আমাকে মুগ্ধ করে! অন্যদিকে মহামতি সক্রেটিসকে সবাই জ্ঞানী বলেই জানতেন। মানতেন। অথচ সক্রেটিস হতাশ হয়ে বলতেন- 'আপনি বা আমি, আমরা কেউই জ্ঞানী নই। তবে আপনার চেয়ে আমার জ্ঞান একটুখানি বেশি এই অর্থে যে, আমি অন্তত এতটুকু জানি যে আমি কিছুই জানি না। সত্রেটিস চমৎকার কথা বলেছেন। এই জন্যই কথায় বলে, বোকা বন্ধুর চেয়ে বুদ্ধিমান শত্রু অনেক ভালো। আপনের চেয়ে পর ভালো, পরের চেয়ে জংগল ভালো।
কোরআনে আল্লাহ মানুষের বহু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
হাদীসে নবীজি তার সাহাবীদের অসংখ্য প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। এমনকি নবীজি বিধর্মীদের প্রশ্নের জবাব দিতেন হাসিমুখে। ''জ্ঞানী লোকেরা কথা বলেন কারণ তাঁদের বলার কিছু আছে আর বোকারা কথা বলেন কারণ তাঁদের কিছু বলতে হবে''। এই কথা বলে গেছেন গ্রেট দার্শনিক প্লেটো। আমাদের সমাজে জ্ঞানী বা বোকা কথা বলায় কেউ কম যান না। সাধারনত মানুষ কথা বলতে ভালোবাসে। বাঁচতে হলে জানতে হয়। আর জানতে হলে অনেক অনেক প্রশ্ন করতে হয়। মানুষের জানার আগ্রহ'ই মানুষকে গুহা থেকে বের করে নিয়ে এসেছে। আজকের আধুনিক পৃথিবী মানুষের জ্ঞানের ফসল।
আমি একজন বোকা মানুষ।
লোকজন আমাকে সব সময় পচা ছেঁড়া নোট গুলো দেয়। আমি কিছু বললি না। চুপ করে নিয়ে আসি। আমার ড্রয়ার ভরতি পচা ছেঁড়া টাকা দিয়ে। অথচ আমি কাউকে কখনও ছেঁড়া পচা টাকা দেই না। আমি নিজে ঠকি অথচ কাউকে ঠকাই না। রিকশাচালক চল্লিশ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা চাইলেও আমি ঝগড়া করি না। রাগ করির না। রেস্টুরেন্টে আমাকে ঠান্ডা রুটি বা পরোটা দিলেও আমি রাগ করি না। ঠান্ডা রুটিই হাসি মুখে খেয়ে নিই। লন্ড্রীতে কাপড় আয়রন করতে দেই। তিন দিন পর কাপড় আনতে গেলে বলে এখনও আয়রন হয়নি। আমি রাগ করি না। ক্ষমা করে দেই। মানুষকে ক্ষমা করেতে আমার ভালো লাগে।
জ্ঞান হচ্ছে আমাদের চিন্তা শক্তিকে সাহায্য করবার মাধ্যম।
প্রচলিত জ্ঞান ছাড়াও নিজের ইমেজিনেশন (চিন্তাকে) কাজে লাগাতে হবে। যেমনটি আলবার্ট আইনষ্টাইন বলেছেন, "imagination is more powerful than knowledge". মনে রাখতে হবে, "জগতে নিজের কর্মই বেচে থাকে"। দেহ এর বিলীন হলে তাই শক্তির বিলীন হবার ধারনা ভুল। একারনেই নাস্তিকতা ধারনার সীমাবদ্ধতা আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২২ রাত ৩:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



