
একবার ভেবে দেখুন,
একজন জলজ্যান্ত মানুষকে মুখ কালো কাপড় দিয়ে ডেকে, ধরে নিয়ে যাচ্ছে- তাকে ফাঁসি দিবে! এই আধুনিক যুগে এটা কি করে সম্ভব? আরেহ ভাই আপনাদের ধর্মই তো বলছে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাহলে সেরা জীবকে ভালো হওয়ার সুযোগ না দিয়ে কেন তাকে ফাঁসি দিচ্ছেন? মানুষ তো ভুল করে শিখে। অনেক সময় মানুষ যখন অন্যায় কাজ করে তখন সে বুঝতে পারে না। অন্যায় কাজটা করার পর অনুভব করে 'ভুল করে ফেলেছি'। এই যে সে বুঝতে পারলো- 'ভুলটা' করে ফেলেছি। এজন্যই সে মানুষ। তাকে শুধরানোর জন্য সময় দিতে হবে। এরপর সে হয়তো মহৎ কাজ করতে পারবে। মানুষের অনেক ক্ষমতা। আজকের আধুনিক বিশ্ব মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের দান। হাজার হাজার বছর লেগেছে গুহা থেকে বের হয়ে আধুনিক সভ্যজগত গড়তে। আকাশ থেকে ফেরেশতা বা জ্বীন নেমে এসে আমাদের পৃথিবী গড়ে দেয়নি।
ইসলামেই মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে।
আপনি কি কোরান বদলে ফেলতে পারবেন? ১৪০০ বছর আগের নিয়মে কেন আমাদের চলতে হবে? এটা আধুনিক বিশ্ব। যুগ বদলে গেছে। ইসলামিক শরিয়া আইন অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড একটি প্রচলিত শাস্তি। আসলে আমি ইসলামের আলোচনায় যাবো না। আমি সময় নষ্ট করবো না। কারন, আমাদের রাষ্ট্র ইসলামের নিয়মে চলে না। রাষ্ট্র চলে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক করতে হবে। সারা পৃথিবীতে ১৪২টি রাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড নেই, মাত্র ৫৬টি রাষ্ট্র মৃত্যুদণ্ডের বিধান বলবৎ আছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ১৪২ দেশ এখন আর মৃত্যুদণ্ড চর্চা করছে না। প্রকৃতপক্ষে সারা বিশ্বে যতগুলো মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়, এককভাবে চায়না তার চেয়ে বেশী মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে। আমি এক কথায় বলতে চাই- একজন অপরাধীকে ভালো হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। সে যত বড় অন্যায় করুক না কেন। কোনো মানুষ'ই জেন শুনে বুঝে অন্যায় করে না। এই সমাজে যাদের প্রচুর টাকা আছে, তাঁরা টাকা দিয়ে অন্যায় কাজ করার। এবং যাদের প্রচুর টাকা নেই, তাঁরা অন্যায় কাজ করে।
মানুষ হত্যা একটা অপরাধ।
সমাজ হত্যাকে ঘৃণা করে। হত্যাকারীকে ঘৃণা করে। কিন্তু হত্যার শাস্তি হিসেব সেই হত্যাই যখন রাষ্ট্র ঠান্ডা মাথায় কোন হত্যাকারীর উপর আরোপ করে তখন সেই সমাজকে সভ্য সমাজ বলা যায় না। জীবন কেড়ে নেবার অধিকার হত্যাকারীরও নেই, হত্যার বিচারকার্য পরিচালনা করা রাষ্ট্রেরও নেই। ইংল্যান্ডে রানী প্রথম এলিজাবেথের সময় পকেটমারের শাস্তি ছিল মৃত্যুদন্ড। জনসমক্ষে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার সময় সেই ভীড়ের মধ্যে পকেটমারেরা তাদের কাজ ঠিকই চালিয়ে যেত। খুনের বদলে মৃত্যুদন্ড দিয়ে খুন করা যায় না। কেউ কারো চোখ উপড়ে নিলে রাষ্ট্র তার চোখ উপড়ে নিতে পারে না, কেউ এসিড নিক্ষেপ করলে রাষ্ট্র তাকে শাস্তি হিসেবে এসিড নিক্ষেপ করতে পারে না। কারণ, এগুলো ভয়াবহ। এক হাদীসে পড়েছিলাম, নবীজি এক ব্যাক্তির চোখ উপড়ে নিতে বলেছিলেন। কারন সেই ব্যাক্তি অন্যের ঘরে উঁকি দিতো। কারো ঘরে উঁকি দিলে চোখ উপড়ে নিতে হবে! এটা ভীষন অমানবিক। সম্ভবত এটা জাল হাদীস হবে।
সারা বিশ্ব থেকেই মৃত্যুদন্ড বাতিল করা উচিত,
সেই সাথে আমাদের দেশে প্রেসিডন্ট এর ক্ষমা করা বিষয়ক আইনের সংশোধন প্রয়োজন। সহজ সরল কথা হলো- আইন ঠিক মতো প্রয়োগ হলে এবং বিচার ব্যবস্থা সৎ থাকলে মৃতুদণ্ডের প্রয়োজন হয় না। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান সহ অনেক ইউরোপীয় দেশ এবং কানাডাতে মৃত্যুদণ্ড নেই। কিন্তু ওই সকল দেশে অপরাধের পরিমান যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের চাইতে অনেক কম। অপরাধ করলেই শাস্তি দেয়া যাবে না। বরং নিজের কৃতকর্ম সংশোধন করার সুযোগ দিতে হবে। আমার বাবা মাকে কেউ যদি হত্যা করে সেই ক্ষেত্রেও আমি জেলই দাবী করব। আমাকেও যদি কেউ হত্যা করে, আমি চাইব না তার মৃত্যুদন্ড হোক। কোনকিছুর জন্যই কাউকে মারা যায় না। আপনার আমার বাবা মাকে হত্যা করলেও না, আপনার আমার বোন বা স্ত্রীকে ধর্ষণ করলেও না। কোন কিছুর জন্যই না। আধুনিক পৃথিবীতে মানুষকে ধার্মিক নয় মানবিক হতে হবে। তাহলেই অপরাধ কমে যাবে।
একজন মন্দ মানুষকেও ভালো পথে আনা সম্ভব।
তাকে ভালো হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। তার আগেই যদি তাকে ধরে বেঁধে ফাঁসি দিয়ে দেই- তাহলে কেমনে হবে? আমি একজন মানবিক মানুষ। আমি মৃত্যুদন্ড পছন্দ করি না। একজন অপরাধীকে ভালো হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আমার প্রিয় শহর আমস্টারডাম। শুনেছি সে দেশে কেউ অপরাধ করে না। জেলে কোনো কয়েদী নেই। কেউ অন্যায় বা দোষ করলেও পুলিশ তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়। তাতেই কাজ হয়। মামলা টামলা করতে হয় না। জেল জরিমানাও করতে হয় না। একজন আধুনিক মানুষ, একজন শিক্ষিত মানুষ এবং একজন মানবিক মানুষ মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে কখনই থাকবে না। আমার ভাবতে ভালো লাগে, আধুনিক পৃথিবী হবে সুন্দর। আনন্দময়। মানুষ যত মানবিক হবে, পৃথিবী তত সুন্দর হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



