
ইদানিং আমার কিছু লিখতে ইচ্ছা করে না।
অথচ চারপাশে লেখার উপকনের অভাব নেই। আমার জন্য সবচেয়ে সহজ চারপাশে যা দেখি, তা লিখে ফেলা। আসলে কয়েকদিন আগে একটা সাহিত্যের আলোচনার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। ঠিক অনুষ্ঠান নয়, আড্ডা বলা যেতে পারে। বেশ কয়েকজন জ্ঞানীগুনী কবি- সাহত্যিক, অভিনেতাসহ সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তিরা এসেছেন। তাঁরা নানান বিষয় আলাপ আলোচনা করছেন। ঠিক আলোচনা নয়, ঘরোয়া ভঙ্গিতে আড্ডা দিচ্ছেন। আমরা ত্রিশ জন দর্শক তাদের কথা মন দিয়ে শুনছি। মুড়িমাখা আর লাল চা খাচ্ছি। সেই আড্ডাতে তাদের গল্প শুনে আমার লেখার ইচ্ছা চলে গেছে।
তাঁরা বললেন, আগে পড়তে হবে।
প্রচুর পড়তে হবে। বাংলা সাহিত্য, বিশ্ব সাহিত্য সব পড়তে হবে। জানতে হবে। বুঝতে হবে। ইলিয়াড পড়তে হবে। ইলিয়াড গ্রিক মহাকাব্য। প্রাচীন গ্রিসের ইলিওন শহরের নামানুসারে এই মহাকাব্যের নামকরণ করা হয়। মহাকবি হোমার এই মহাকাব্যের রচয়িতা। আমি খেয়াল করে তাদের কথা গুলো মন দিয়ে শুনলাম। আমার তো খুব বেশি পড়াশোনা নাই। বাংলা সাহিত্য বা বিশ্বসাহিত্য আমি আজও পড়ে শেষ করতে পারি নাই। দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র এসব বিষয়ে আমার অগাধ জ্ঞান নেই। তাহলে আমি কি লিখব? আগে তো আমাকে পড়ে পড়েই জানতে হবে।
ইলিয়াড আমি পড়িনি।
কোনোদিন পড়বো কিনা তাও জানি না। অথচ ইলিয়াড বাংলায় খুব সুন্দর অনুবাদ করা হয়েছে। আচ্ছা, রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ কি ইলিয়াড পড়েছেন? মহাভারত, রামায়ন আমার পড়া হয়নি। অসংখ্য জনপ্রিয় বই, বিখ্যাত বই আমার আজও পড়া হয়নি। হাতেগোনা কয়েকটা বই আমি পড়েছি। ভালো লেখার প্রথম শর্তই হচ্ছে পড়া। অথচ আমি তেমন কিছুই পড়িনি। পড়া হয়নি। তাহলে আমি কি লিখব? মানুষ কেন আমার লেখা পড়বে? অসংখ্য ভালো ভালো লেখা বাদ দিয়ে মানুষ কোন দুঃখে আমার লেখা পড়তে যাবে? এই চিন্তাটা মাথার আশার পর আমার আর লিখতে ইচ্ছা করে না। তাই আমি ঠিক করেছি এখন শুধু পড়বো।
আব্বা আমাকে একটা কথা বলেছিলেন,
দশটা বই পড়ে তুমি যা শিখবে তার চেয়ে বেশি শিখবে একদল বুদ্ধিমান মানুষের সাথে আড্ডা দিয়ে। আড্ডা থাকে অনেক কিছু শেখা যায়, জানা যায়। ব্লগার চাঁদগাজী/সোনাগাজী প্রায়ই বলেন উনি খুব একটা বইটই পড়েন নি। অথচ উনার লেখা পড়লে বুঝা যায় উনি অনেক জানেন। উনি এত কিছু কিভাবে জানলেন? আড্ডা থেকে? নাকি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে? বিষয়টা রহস্যময়। যাইহোক, এখন আমি পড়বো বেশি। লিখব কম। এবং যা লিখব বুঝেশুঝে লিখব। যেন লেখার মধ্যে জ্ঞানের ছাপ থাকে। অভিজ্ঞতার ছাপ থাকে। পাঠক যেন বিরক্ত না হয়। পাঠক যেন না ভাবে সময়ের অপচয় করা হলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২২ রাত ১:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


