আমার জীবন ভরা অনুতাপে।
ছোটবেলায় একটা মেয়েকে আমার খুব ভালো লাগতো। তখন আমি স্কুলে পড়ি। মেয়েটা ভীষন রকমের সুন্দর। মনে মনে ভেবে রেখেছি, স্কুল পাশ করেই মেয়েটাকে 'আই লাভ ইউ' বলে দিবো। স্কুল পাশ করলাম। আমি 'আই লাভ ইউ' বলার আগেই মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলো এক ধনী লোকের সাথে! ভীষন কষ্ট পেলাম। কষ্টের চোটে সিগারেট খাওয়া শুরু করলাম। সেই সিগারেট খাওয়া আমি আজও থামাতে পারিনি। মেয়েটার নাম ছিলো- মীরা। মীরা এখন আমেরিকা থাকে। তার দুই মেয়ে। তার স্বামীর মাথায় একটা চুলও নাই। ভালো হইছে।
ইচ্ছা ছিলো নটরডেম অথবা ঢাকা কলেজে পড়বো।
কিন্তু শেষমেশ ভরতি হলাম অখ্যাত এক কলেজে। সেই কলেজে এক স্যার ক্লাসে এসেই বলতো- আজ আমার শরীরটা ভালো নেই। আমি বিশ্রাম নেবো। তোমরা চুপচাপ থাকো। যাইহোক, কলেজ পাশ করলাম। বহু দিনের স্বপ্ন এবার পূরন হবে। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়বো। কপাল খারাপ। সুযোগ পেলাম না। এমন কি রাজশাহী, সিলেট, চিটাগাং কোনো ভার্সিটিতেই চান্স পেলাম না। কপালে আছে জগাবাবু আমি করবো কি? এখনো এসব মনে পড়লে কষ্ট হয়। ভীষন অনুতাপ হয়।
যাইহোক, গোঁজামিল দিয়ে লেখাপড়া শেষ করলাম।
দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ব্যবসা করবো। ছোট করে একটা ব্যবসা শুরু করে দিলাম। দেড় বছর পর ব্যবসায় লাখ লাখ টাকা লস খেয়ে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। গেলাম সৌদি। সৌদি গিয়েছি থ্রি স্টার হোটেলের ম্যানেজারের কাজ নিয়ে। গিয়ে দেখি আমাকে কাজ দিয়েছে কাঠ মিস্ত্রির হেলপার হিসেবে। অথচ কাঠের কাজ জানি না কিছুই। জীবন তেজপাতা। হেড মিস্ত্রি বলে, যাও ঐ চ্যালা কাঠ টা কাঁধে করে নিয়ে আসো। বিশাল সাইজের লম্বা এক কাঠ। এটা একটা মানুষের পক্ষে বয়ে আনা সম্ভব না। বললাম স্যরি, পারবো না। আমি না বলাতে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিলো কিছুক্ষন।
বহু কষ্ট করে সৌদি থেকে দেশে ফিরলাম।
সৌদি হারামজাদারা পাসপোর্ট রেখে দেয়। সেই পাসপোর্ট ফেরত পেতে বহু কষ্ট করতে হয়েছে। যাইহোক, দেশে এসে এক বছর বেকার থাকলাম। এরপর গেলাম মরিশাস। মরিশাস গিয়েও সুবিধা করতে পারলাম না। তিন মাস পর দেশে ফিরে এলাম। দেশে এসে এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম। কঠিন প্রেম। আব্বাকে বললাম, বিয়ে করবো। আব্বা বলল, যা মন চায় কর। একদিন সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেললাম। বিয়ে করার পর জীবনটা সুন্দর হতে শুরু করলো। আমার বউ খুবই ভালো মেয়ে। ভালো রান্না জানে। দারুন হাসিখুশি। এবার মনে হচ্ছে লাইফ ইজ বিউটিফুল।
বিয়ের পর এক অফিসে জয়েন করলাম।
ভালো চাকরী। অনেক টাকা সেলারি। জীবন সুন্দর চলছিলো। একদিন আমার বস ডেকে বলল, সকাল-বিকাল অফিস করলেই হবে না। তুমি আরো বেশি সময় দাও। আরো বেশি কাজ করো। ইত্যাদি ইত্যাদি নানান ধানাই পানাই কথাবার্তা। একদিন বস বললো, যাও অফিসের জন্য নতুন ত্রিশ টা চেয়ার কিনে আনো। আরেকদিন বলল, এখন থেকে তুমি সকাল থেকে রাত দশ টা পর্যন্ত কাজ করবে। এবং আগামী এক বছর তোমার কোনো ছুটি নেই। তুমি ইয়াং ম্যান। তুমি পারবে। একের পর এক বস অর্ডার দিয়েই যাচ্ছে। দিলাম চাকরী ছেড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:৩৯