
অনেকদিন পর আজ শাহেদ জামাল বাজারে গিয়েছে।
প্রতিটা জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চাষের ট্যাংরা মাছ শাহেদ আগে কিনতো ৫ শ' টাকা কেজি। এখন ৭ শ' টাকা কেজি। ভাবা যায়! আগে আড়াই কেজি একটা রুই মাছ পাওয়া যেতো ৭০০ টাকা দিয়ে। এখন একটা আড়াই কেজি রুই মাছের দাম নিচ্ছে ৯৫০ টাকা। নয় শ' গ্রাম একটা ইলিশের দাম এক হাজার টাকা। চাষের চিংড়ি মাছ ছোট সাইজ দাম নিচ্ছে ৬৫০ টাকা কেজি। বাজারে নানান রকম আপেল পাওয়া যায়। সবচেয়ে কম দামের আপেলের কেজি হচ্ছে ২৪০ টাকা। শাহেদ জানে জিনিস পত্রের দাম সব সময়ই বাড়ে। কিন্তু এবার অনেক বেশী বেড়েছে। এতটা বেশি বাড়ার কারন কি? দাম অতি বৃদ্ধির কারনে কি দেশের কোনো মানুষের সমস্যা হচ্ছে না? আজিব লাগে- বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
ঢাকা শহরের মানুষের হাতে অবশ্যই প্রচুর টাকা আছে।
প্রায়'ই দেখা যায় কেউ কেউ একাই বড় বড় ৩০/৪০ পিছ ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এই শহরের এক শ্রেণীর মানুষের কাছে দাম কোনো ব্যাপার না। সে যদি চারটা ইলিশ কিনতে যায়, তখন বিক্রেতা যদি বলে স্যার পদ্মর ইলিশ। খুব ভালো, আরো চারটা নিয়ে যান। ক'দিন পর আর ইলিশ পাওয়া যাবে না। পাওয়া গেলেও সেগুলোর স্বাদ হবে না। তখন ক্রেতা বলে তাহলে ১২টা দিয়ে দাও। শাহেদ জামাল এ বছর অনেক ইলিশ মাছ খেয়েছে। ইলিশ মাছের চেয়ে তার বেশী পছন্দ ইলিশ মাছের ডিম। অবশ্য নীলা পছন্দ করে ইলিশ পোলাউ। এবং সে এই খাবারটা ভালো রান্না করে। এ যুগের মেয়েরা রান্নায় এক্সপার্ট না। তাদের কিছু খেতে ইচ্ছা করলে ফোন দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনে খায়। তাই বর্তমানে খাবারের ব্যবসায় লাভ বেশি।
অনলাইন থেকে কেনাকাটা করতে নীলা খুব পছন্দ করে।
সেদিন নীলা অনলাইন থেকে নিমকি, চানাচুর, তেলেভাজা ইত্যাদি খাবার অর্ডার করলো। দাম দ্বিগুন নিয়েছে। শাহেদ বললো, ডবল দাম দিয়ে এইসব খাবার অনলাইন থেকে কেনার মানে কি? নীলা বলল, এইসব খাবারের যত্নসহকারে বানানো হয়েছে। এবং এইসব খাবারের বানাতে যা যা উপাদান লেগেছে সবই উন্নত মানের। এগুলো খেলে গ্যাস্টিকের কোনো সমস্যা হবে না। শাহেদ বলল, এসব খাবার যখন বানানো হয়েছে, তুমি সামনে ছিলে? নীলা বলল, আমি সামনে না থাকলেও আমি জানি। যে মহিলা এসব খাবার বানিয়েছে তার টাকার অভাব নাই। তিনি শখের কারনে এসব বানায়। মহিলার স্বামী পুলিশের বড় অফিসার। নীলা ইদানিং সব কিছুই অনলাইন থেকে কিনছে। জামা, জুতো, ঘি, সরিষার তেল, মধু, খেজুর, মাছ, বাদাম ইত্যাদি।
শাহেদ রাতে মুভি দেখার সময়-
অনলাইন থেকে কেনা- নিমকি, চানাচুর আর তেলেভাজা খেলো। যেহেতু নীলা বলেছে- গ্যাস্টিকের সমস্যা হবে না। তাই শাহেদ পরিমানে বেশিই খেলো। রাত তিনটায় শাহেদ জামালের গ্যাস্টিকের সমস্যা শুরু হলো। বুক মুচড়ে ব্যাথা করতে শুরু করলো। শাহেদ জামাল তাড়াতাড়ি গ্যাস্টিকের ওষুধ খেয়ে ব্যথা দূর করলো। অথচ নীলা বলেছিলো- এই খাবার এত ভালো যে গ্যাস্টিকের সমস্যা হবে না। নীলা কত ভুলের মধ্যে আছে। বহু মেয়ে এরকম ভুলের মধ্যে আছে। তাদের মাথায় অনলাইন থেকে কেনার ভূত চেপেছে। অনলাইন থেকে কেনাকাটা করলে, ৯০% নিশ্চিত থাকুন- খারাপ পন্য পাওয়ার। অনলাইন ব্যবসায়ীদের একটাই গল্প ইনবক্স প্লীজ। আর ইনববক্স মানেই ঘাপলা। এই সাধারন ব্যাপারটা মেয়েরা বুঝে না কেন?
শাহেদ জামাল মোটা ভাত খেতে পারে না।
একসময় শাহেদ মিনিকেট চাল খেতো। এখন বাজারে মিনিকেট চাল ৭৫ টাকা কেজি। গতমাসে শাহেদ 'কাটারী ভোগ' চাল কিনেছে। ৮০ টাকা কেজি। এই চালটা ভালো। চিকন ভাত। এবং ঝরঝরা হয়। খেতে ভালো। শাহেদ ভাবে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ গরীব। তাঁরা কিভাবে খেয়েপরে বেঁচে আছে? এমন খবর পত্রিকাতে এখনও আসেনি কেউ না খেয়ে মরে গেছে। অর্থাৎ দাম বাড়লেও মানুষ খাচ্ছে। মানুষের হাতে টাকা আছে। মানুষ যদি খেতে না পারতো তাহলে নিশ্চয়ই আন্দোলন করতো। বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে জিনিসপত্রের দাম অনেক কম। যাইহোক, দেশের সবাই খেয়েপরে বেঁচে থাকুক দিন শেষে এটাই চাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




