
১। তখন আমার বয়স ৫/৬ হবে। স্কুল ছুটি হয়েছে।
আমার বাসা থেকে স্কুল কাছেই। হেঁটে যেতে ১৫ মিনিট সময় লাগে। আজ হঠাত খুব বেশি ক্ষুধা লেগেছে। অথচ আজ টিফিন অন্য দিনের তুলনায় বেশি খেয়েছি। এক একদিন এমন হয় না, হুট করে খুব ক্ষুধা লেগে যায়। কাচ্চি খেতে মন চায়। মনে মনে ভাবছি, এই মুহুর্তে এক প্লেট কাচ্চি পেলে বেশ হতো! ভাবা মাত্রই এক সুন্দর মতো মেয়ে আমার হাতে এক প্যাকেট কাচ্চি দিয়ে দিলো। সুন্দরী মেয়েটাকে আমি চিনি না। কোনোদিন দেখিও নাই। অবশ্য এত কিছু আমার ভাবার দরকার নাই। কাচ্চি খেতে মন চেয়েছে, পেয়ে গেছি। ব্যস। এই ঘটনার ব্যাখ্যা আমি আজও খুঁজে বের করতে পারিনি।
২। মতিঝিল মডেল স্কুলের মাঠে রোজ বিকেলে ফুটবল খেলতাম।
আমি আবার ফুটবলটা ভালো খেলি। আমার পায়ে একবার বল এলে, আমি আর কোনো দিকে তাকাই না। বল নিয়ে এক দৌড় দিয়ে বারপোষ্টের দিকে চলে যাই। গোলকিপার হিসেবেও আমি অতি উত্তম ছিলাম। যাইহোক, সেদিন হুট করে সন্ধ্যা নেমে গেলো। আকাশে মেঘ ডাকছে। যে কোনো সময় বৃষ্টি নামবে। হঠাত খেয়াল করে দেখলাম। মাঠে কেউ নেই। সবাই কখন চলে গেলো কে জানে! মাঠের কোনায় একটা ডোবা ছিলো। আমি হাত পা ধুয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু ডোবায় পড়ে গেলাম। আমি ডুবে যাচ্ছিলাম প্রায়। তখন কোথা থেকে সুন্দর একটা মেয়ে এসে আমাকে বাঁচায়।
৩। জাহাঙ্গীর নামে আমার এক বন্ধু আছে।
আমরা একই স্কুলে লেখাপড়া করেছি। জাহাঙ্গীরদের পরিবার বেশ দরিদ্র ছিলো। ক্যান্সারে জাহাঙ্গীরের বাবা মারা যায়। তখন থেকেই জাহাঙ্গীরের মা সেলাই মেশিন চালিয়ে সংসার টেনে নেন। জাহাঙ্গীররা অনেক গুলো ভাইবোন ছিলো। আমরা স্কুল পাশ করে কলেজে ভরতি হলাম, কিন্তু জাহাঙ্গীর সংসারের হাল ধরার জন্য ধারদেনা করে সৌদি চলে গেলো। ধীরে ধীরে জাহাঙ্গীদের পরিবার আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠলো। সৌদি থেকে জাহাঙ্গীর আমাকে প্রায় প্রতিদিন ফোন দিতো।
তিন বছর আগে একদিন (সেদিন ঈদের দিন ছিলো) জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আমাকে ফোন দেয়। উনি বললেন, জাহাঙ্গীর স্ট্রোক করে মারা গেছে। জাহাঙ্গীরের মৃত্যু আমাকে ভীষন কষ্ট দেয়। যাইহোক, এক সপ্তাহ পরের ঘটনা। আমি বাসায় একা। এক কাপ চা বানিয়ে বসার ঘরে বসে আছি। হঠাত দেখি আমার বন্ধু জাহাঙ্গীর আমার পাশে বসে আছে। আমি প্রচণ্ড ভয় পেলাম। বন্ধু জাহাঙ্গীর বলল, আমি মারা গেছি। কিন্তু কি করে এখানে এলাম আমি জানি না। তুই ভয় পাস না। আমি তোর কোনো ক্ষতি করবো না। এরপর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
৪। ফরিদপুর যাচ্ছি। ভাঙ্গা এলাকার রসুলপুর গ্রামে।
বাস থেকে নেমে ভ্যানগাড়িতে উঠেছি। সুন্দর পাকা রাস্তা। রাস্তার দুপাশে গাছ। বেশ ভালো লাগছে। আমাদের ভ্যানগাড়িটি একটা তিন রাস্তার মোড় ঘুরতেই দেখি একটা মেয়ে। মাথার ভরা চুল খোলা। সারা গায়ে ময়লা। হাতে একটা লাঠি। বয়স খুব বেশী হলে ১৮/২০ হবে। নিশ্চয়ই পাগল হবে। মেয়েটা আমাকে দেখে একটা হাসি দিলো। যে হাসি দেখলে ভয় লাগে। কলিজা কেঁপে উঠে। যাইহোক, সন্ধ্যায় গিয়ে আমরা পৌছালাম। আমি বেশ ক্লান্ত ছিলাম। দ্রুত পুকুরে নেমে স্নান করে নিলাম। স্নান করাতে বেশ ফ্রেশ লাগছে। রাত আট টায় হারিকেনের আলোতে ডিনার করতে বসলাম।
খেতে বসে দেখি, নানান রকম খাবার।
পাঁচ রকমের মাছ। গরু, হাঁস, মূরগী, কবুতর কিছুই বাদ নেই। রান্নাও বেশ হয়েছে। প্রচুর খেলাম। এত বেশী খেয়েছি যে হাঁসফাঁস লাগছিলো। রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু সুন্দর ঘুম হলো না। ঠিক রাত দুটায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। প্রস্বাব করতে হবে। এই বাড়ির কর্তা খুব করে বলে দিয়েছেন, ঘরের বাইরে যেতে হলে যেন তাকে ঘুম থেকে জাগাই। একাএকা যেন বাইরে না যাই। আমি মনে মনে ভাবলাম, এত রাতে কাউকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। সিদ্ধান্ত নিলাম- উঠান পেরিয়ে ওয়াশরুম পর্যন্ত যাবো না। ঘরের দরজা খুলে যে কোনো কোনার দিকে প্রস্বাব করে দিবো।
ঘরের দরজা খুলতেই দেখি পুকুর পাড়ে কে যেন বসে আছে।
ভালো করে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে। হাতে লাঠি। মাথার ভরতি খোলা চুল। মেয়েটা আমার দিকে তাকালো এবং ভয়ানক এক হাসি দিলো। হাসি দেখে আমি খুব ভয় পেলাম। মেয়েটা তার হাতের লাঠিটা ধীরে ধীরে আমার দিকে উঁচু করে ধরলো। এই সময় কোথা থেকে অনেক গুলো কুকুর এসে মেয়েটাকে ঘিরে ধরলো। কুকুর গুলো সমানে ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করলো। কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে আশে পাশের ঘর থেকে অনেকেই বেড়িয়ে এলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




