তাহলে সত্য ঘটনা টা খুলেই বলি।
ইন্টারভিউ দিতে এক আধুনিক অফিসে গেলাম। সামনে পাঁচজন খুব ভাব নিয়ে বসে আছেন। এদের মধ্যে চারজন কোট টাই পরা। এদের মধ্যে একজন শুধু হাফ প্যান্ট পরা। অনেক মোটা। সে চিপস খাচ্ছে আর কোকের বোতলে চুমুক দিচ্ছে। এই হাফ প্যান্টওলা সিইও। যাইহোক, সিইও বলল, আপনি কী এমন কিছু করতে পারেন যা অন্য কেউ পারে না? প্রশ্ন শুনে আমি কিছুটা অবাক। সিইও বলল- আপনাকে আর কোনো প্রশ্ন করা হবে না। এটার উত্তর আমাদের মন মতো হলেই আপনি চাকরীটা পেয়ে যাবেন। এবং উন্নত জীবনযাপন করতে পারবেন। এত সহজ, আমি মনে মনে ভাবলাম।
আমি বললাম, স্যার আমার একটাই যোগ্যতা আছে।
আমি একটা কাজই শুধু পারি। সিইও বললেন, হ্যাঁ সেটাই জানতে চাচ্ছি। আমি বললাম, আমি সুপার ম্যানের মতো করে উড়তে পারি। বসে থাকা পাঁচজন ভীষন অবাক হলেন আমার কথা শুনে! তাঁরা নড়েচড়ে বসলেন। তাদের চোখে একই সাথে দেখতে পেলাম বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের খেলা। তাঁরা বললেন দেখান আপনার যোগ্যতা। আমি দুই হাত সামনে দিয়ে সুপারম্যানের মতো করে উড়ার অভিনয় করলাম। টেবিলে বসে থাকা স্যারদের পাশ দিয়ে দুবার চক্কর দিলাম। এবং মুখে বেশ কয়েকবার বললাম, সুপারম্যান, আমি সুপারম্যান।
সিইও বললেন, শালা। বের হ এখান থেকে।
আমি বুঝলাম না সিইও সাহেব এত রেগে গেলেন কেন? আমি আমার যোগ্যতা দেখাচ্ছিলাম। আমি মন খারাপ করে মেসে ফিরলাম। মেস ম্যানেজার রফিক ভাই বললেন, কি হয়েছে? এত মন খারাপ কেন? ইন্টারভিউ ভালো হয়নি? আমি বললাম, রফিক ভাই সিইও আমাকে 'শালা' বলে গালি দিয়েছে। রফিক ভাই বললেন, চাকরী না দিলে না দিবে। কিন্তু শালা বলবে কেন? এটা তো ভীষন অন্যায়। রফিক ভাই রেগে গিয়ে বললেন, আপনি ওই শালার নামে মামলা করে দেন।
মনটা আমার ভীষন খারাপ।
রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রফিক ভাই আমাকে ডেকে তুললেন। বললেন, মন খারাপ করে থাকবেন না। চলুন বাইরে থেকে গরম গরম তেহারী খেয়ে আসি। আজ রহিমা বুয়ার রান্না ভালো হয়নি, খেয়ে পেট ভরেনি। আমি বিছানা থেকে নামলাম। দুপুরে কিছু খাইনি। অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। জামা চেঞ্জ করলাম। রাস্তায় বের হলাম। রাত ১১ টা। রাস্তা বেশ নিরিবিলি। আমরা হাঁটছি। যাবো ভোলা ভাইয়ের বিরানীর দোকানে। ভোলা ভাই আমাদের বাকিতে খাবার দেন। মাস শেষে টিউশনির টাকা পেলেই তার পাওনা শোধ করে দেই। রফিক ভাই হঠাত বললেন, আজ আপনাকে তেহারী খাওয়া শেষে মিষ্টি পান খাওয়াবো।
দুইজন পেট ভরে তেহারী খেলাম।
আজ রান্নাটা বেশ ভালো হয়েছে। ভোলা ভাইয়ের কর্মচারীদের সাথে আমাদের বেশ সুসম্পর্ক। কোক খেলাম। ঢেকুর তুলতে তুলতে ভোলা ভাইয়ের দোকান থেকে বের হলাম। এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়লাম। পুলিশ আমাদের কোনো কথাই শুনলো না। বলল, তোরা ছিনতাইকারী। আমাদের গাড়িতে তুললো এবং থানায় নিয়ে এলো। আমাদের তন্নতন্ন করে চেক করা হলো। মোবাইল ছাড়া সাথে আর কিছুই পেলো না। পুলিশ মোবাইল রেখে আমাদের লকাবে ঢুকিয়ে দিলো। রফিক ভাই বললেন, তেহারী খেতে আসাটাই ভুল হয়েছে। আমি বললাম, আসুন সুপারম্যানের মতো উড়ি। রফিক ভাই বললেন, যাহ মিষ্টি পান খাওয়া হলো না!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২৮