
আমি দীর্ঘদিন পত্রিকা অফিসে চাকরী করেছি।
তাই পত্রিকা অফিসের খুটিনাটি সব কিছুই জানি। পত্রিকা বের করতে চাইলে সবার প্রথমে আপনাকে টাকার বস্তা নিয়ে বসতে হবে। কারন নতুন পত্রিকা বের করলেই আপনি পর্যাপ্ত বিজ্ঞাপন পাবেন না। সময় লাগবে। অনেক সময় লাগবে। খেয়াল করে দেখবেন যারা দৈনিক পত্রিকার মালিক তাঁরা বেশির ভাগই দূর্নীতিবাজ। তাদের টাকার অভাব নাই। অনেক দূর্নীতিবাজ কালো টাকাকে সাদা করার জন্য পত্রিকা বের করেন। এখন দৈনিক পত্রিকা ছাড়াও অনলাইন নিউজ পোর্টালও আছে। সৎ লোক পত্রিকা বের করতে পারবে না। পত্রিকা থেকে যে টাকা ইনকাম হবে সেই টাকা দিয়ে পত্রিকা অফিস চালানো যাবে না। বাংলাদেশে একমাত্র 'প্রথম আলো' বেশ ভাল ভাবেই টিকে আছে। ওদের ইনকাম অনেক। খরচও অনেক।
তথ্য মন্ত্রনালয় থেকে পত্রিকা বের করার অনুমতি নিতে হবে।
ঘুষ তো কিছু দিতে হবেই। তাঁরা আপনার পত্রিকা অফিস পরিদর্শনে আসবেন। সব মিলিয়ে অনুমতি পেতে পেতে ২/৩ বছর লেগে যাবে। এই ২/৩ বছর ডামি বের করে যাবেন। বিশাল বড় একটা অফিস নেবেন। তারপর সব বিভাগ আলাদা করবেন। যেমন সার্কুলেশন বিভাগ, বিজ্ঞাপন বিভাগ, নিউজ বিভাগ, একাউন্স ইত্যাদি। প্রতিটা বিভাগের জন্য একাধিক লোক নিয়োগ দিতে হবে। তবে যেন তেন লোক নিয়োগ দিলে হবে। সৎ, দক্ষ ও যোগ্য লোককে নিয়োগ দিতে হবে। যেমন খেলাধুলা, অর্থনীতি, রাজনীতি, সাহিত্য, শহর, গ্রাম ইত্যাদি বিষয়েরর কমপক্ষে দুজন করে লোক নিতে হবে। সরকারের প্রতিটা মন্ত্রনালয়ের জন্য একজন করে বিট সাংবাদিক নিয়োগ দিতে হবে। শেয়ার বাজারের জন্য কমপক্ষে দুইজন। ফোটোগ্রাফার ৪/৫ জন লাগে। সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিনিধি নিতে হবে। একজন সম্পাদক নিয়োগ করতে হবে। যাকে সবাই চিনে, জানে, মানে।
এবার আসল কথায় আসি।
বাংলাদেশের লোকজন পত্রিকা খুব কম পড়ে। হাতের কাছে পত্রিকা পেলে দুই একজন চোখ বুলায় পত্রিকার পাতায়। কেউ কেউ অনলাইনে চোখ বুলায়। পত্রিকা বের করা সহজ। কিন্তু সেই পত্রিকা বের করে টিকে থাকা সহজ নয়। অনেকে ধুমধাম করে পত্রিকা বের করে তারপর সেই সব পত্রিকার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। যদি পত্রিকা মালিকের সীমাহীন টাকা থাকে তাহলে পত্রিকা চালু থাকবে। নইলে কদিন পর পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাবে। আবার সরকার পরিবর্তন হলে অনেক পত্রিকা উধাও হয়ে যায়। বাংলাদেশে কি নিরপেক্ষ কোনো পত্রিকা আছে? যাইহোক, বর্তমানে অনেক গুলো পত্রিকা ধুকে ধুকে টিকে আছে। অনেক অফিস তো ঠিক মতো সেলারিও দিতে পারছে না। বাংলাদেশের মতো দেশে শুধু মাত্র বিজ্ঞাপন দিয়ে পত্রিকা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। হাতে গোনা কয়েটা বড় বড় প্রতিষ্ঠান ভালো বিজ্ঞাপন দেয়। এবং তাঁরা অনেক টাকা দেয়। সমস্যা হলো এই প্রতিষ্ঠান আবার সব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় না। প্রথম সারির পত্রিকা ছাড়া তাঁরা বিজ্ঞাপন দেয় না। যারা বিজ্ঞাপন বিভাগে কাজ করে তাদের মূলত ছেচরা হতে হয়। গায়ের চামরা মোটা হতে হয়।
পত্রিকা অফিসের সার্কুলেশন বিভাগের লোকেরা সাক্ষাৎ চোর হয়।
ধান্দাবাজ হয়। এমনকি অনেক সাংবাদিক পর্যন্ত ধান্দাবাজ হয়। তাঁরা ধান্দাবাজি করার জন্যই পত্রিকা অফিসে জয়েন করে, অনেক পুলিশ যেমন ঘুষ খাওয়ার জন্য পুলিশে জয়েন করে, ঠিক তেমন। যাইহোক, সব অফিসেই দুচারজন করে চোর বা ধান্দাবাজ থাকেই। আপনি টাকার বস্তা হাতে নিয়ে পত্রিকা বের করুণ। হোক সেটা দৈনিক পত্রিকা বা অনলাইন নিউজ পোর্টাল অথবা সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন। কিছু আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকা আছে। ২/১ শ' কপি বের করে। এদের উদ্দেশ্য আলাদা। এদের কে আপনি টাকা দিলে যা বলবেন এরা তাই লিখে দিবে। এরা ফকিরাপুলের ছোট মেশিন থেকে পত্রিকা বের করে। কাগজের মান খারাপ। অসংখ্য বানান ভুল। অতি নিম্মমানের পত্রিকা। এগুলো কেউ পড়ে না। তবে ধান্দাবাজি করে এদের ইনকাম বেশ ভাল। বাংলাদেশে একটা দরিদ্র দেশ। দরিদ্র দেশের লোকজন ধান্দাবাজ হবে এটাই স্বাভাবিক।
সরকার ধান্দাবাজি করা পত্রিকা গুলো কেন বন্ধ করছে না সেটা আমি ভেবে পাই না।
অনেক পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার নতুন করে অনেক পত্রিকা চালু হচ্ছে। ইলেকট্রিক মিডিয়া এবং প্রিন্ট মিডিয়া গুলো পরিচালনা করতে হলে সীমাহীন টাকা লাগে। এজন্য সীমাহীন টাকার মালিক ছাড়া কেউ টিভি চ্যানেল বা দৈনিক পত্রিকা বা অনলাইন নিউজ পোর্টাল প্রকাশ করতে পারে না। অবশ্য আজকাল কিছু ধান্দাবাজ অনলাইন নিউজ পোর্টাল খুলে নানান রকম ধান্দাবাজি শুরু করেছে। সরকার এদের কোনো অনুমোদন দেয়নি। তবু তাঁরা ধুকে ধুকে টিকে আছে। বহু সাংবাদিক পত্রিকা অফিসে কাজ করে অবৈধ ভাবে অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছে। ফ্লাট কিনেছে। গ্রামে পাকা বাড়ি করেছে। দুষ্টসাংবাদিকরা নিজেদের অপকর্ম ঢেকে রাখার জন্য সাহিত্যে নজর দিয়েছে। প্রতিবছর দু চারটা করে বই প্রকাশ করছে। সেই সব বই আবার নিজ খরচে দেশের গন্যমান্য ব্যাক্তিকে কুরিয়ার করে পাঠাচ্ছে। এভাই চলছে পত্রিকা অফিস গুলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



