
নবীজিকে নিয়ে লেখার ইচ্ছ আমার দীর্ঘদিন ধরে।
এজন্য আমাকে অনেক লেখা পড়তে হয়েছে। অবশ্য নবীজিকে নিয়ে লেখার মতো যোগ্য লোক আমি নই। নবীজিকে নিয়ে বহু মানুষ লিখেছেন। আছে শত শত বই। আমাদের হুমায়ূন আহমেদ নবীজিকে নিয়ে লেখা শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই তার মৃত্যু হয়ে গেলো। বিশ্ব একটা অসাধারন বই পড়া থেকে বঞ্চিত হলো। যাইহোক, অনেকেই নবীজিকে নিয়ে লিখতে গিয়ে, তাকে মহান হিসেবে দেখানোর জন্য অনেক ভুল লিখেছেন। অতিরঞ্জিত করেছেন। বানোয়াট গালগল্প লিখেছেন। যেমন নবীজি জন্মের সময় চারপাশ আলোকিত হয়ে গিয়েছিলো। তার মা কোনো ব্যথাবোধ করেন নি। ইত্যাদি হাজার রকমের কথা। যাইহোক, নবীজিকে নিয়ে ৫শ' পর্ব লিখলেও লেখা শেষ হবে না। আমি ৫শ' পর্ব লিখব না। আমি লিখব মাত্র ৫ পর্ব। আজ লিখব প্রথম পর্ব।
মদীনা অঞ্চলের নাম আগে ছিলো- ইয়াসরিবই।
তখন চলছিলো ৫২২ সাল। সেই সময় আরবে গুটিকয়েক লোক লেখাপড়া জানতো। তাঁরা সক্রেটিসকে চিনতেন। তাঁরা খুব ভাল কবিতা লিখতেন। সেই সময় মদীনাতে অনেক ইহুদী ও খিস্টানদের বসবাস ছিলো। তৎকালীন রাজার পুত্রকে মদীনাবাসীরা হত্যা করে। রাগে রাজা কালেব মদীনার সমস্ত খেজুর গাছ পুড়িয়ে দেন। এই খেজুর গাছই ছিলো মদীনাবাসীর একমাত্র আয়ের পথ। কোরআনে এসব কথা আসেনি। মক্কাতে বেড়াতে অনেক লোকজন আসতো। কারন এখানে অনেক গুলো সুন্দর সুন্দর মূর্তি আছে। যদিও কিছু মুসলিম দাবী করতো এটা আল্লাহর ঘর। কেউ কেউ আল্লাহকে দেবতা বলে মনে করতো। যারা মূর্তি দেখতে আসতো, মক্কা তে থাকতো, খেতো- তাতে মক্কাবাসীর বেশ ভাল ইনকাম হতো। চতুর লোকেরা মনে করলো- এখানে যেন সারা বছর লোকজন আসে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে মক্কা, মদীনাবাসী উপকার পাবে।
আব্রাহাম নামে এক রাজা ছিলেন।
সে তার ক্ষমতা দেখাতে চায়। সে মক্কাতে যেখানে মূর্তি রাখা হয়েছে। সে গুলো ধ্বংস করে ফেলতে চায়। কারন খিস্টান, মুসলিম এবং ইহুদীরা ঐ জায়গাটা নিয়ে সারা বছর ক্যাচাল করেই। রাজা অনেক সৈন্য পাঠায় মক্কাতে। সৈন্য গুলো মক্কাতে লোকজনের ঘরে গিয়ে যা পায় কেড়ে নিয়ে আসে। এমনকি তাদের উট গুলো পর্যন্ত। তখন লোকজন মক্কার ঘর নিয়ে চিন্তিত না। মূর্তি গুলো নিয়েও চিন্তিত না। তাঁরা চায় তাদের উট গুলো। এর মধ্যে আব্দুল মোতালিব নামে একজনের ৫০ টা উট ছিলো। অনেকেই এই ঘটনায় কিছু রুপকথা জুড়ে দিয়েছেন। যেমন যখন সৈন্যরা এলো- তখন আকাশ থেকে অসংখ্য পাখি পাথর নিক্ষেপ করে সৈন্যদের রক্তাত্ব করে দিয়েছে। এই পাখির নাম কোরআনে এসেছে 'আবাবিল' নামে। সেই সময় আরবের লোকজন উট ছাড়া অন্যান্য প্রানীদের ভাল চিনতো না।
৫৭০ সাল। রবিউল আওয়াল মাস, ১২ তারিখ, সোমবার।
২১ বছর বয়স আব্দুল্লাহ ও পনের বছর বয়স আমিনার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন হযরত মুহাম্মাদ (সা)। আব্দুল্লাহ তার সন্তানকে কোলে তুলে নিলেন। তখন আমিনা বললেন, সবাইকে খেজুর বিতরণ করো। আব্দুল্লাহ বললেন, শুধু খেজুর নয় আমি দুটা উট জবাই করবো। তিনি তার স্বামীকে বলেছিলেন, দেখে নিও আমার ছেলে সন্তান হবে। এদিকে এই নবজাতকের জন্ম নেওয়ার খুশিতে আত্মীয়স্বজনেরা দুইজন দাসীকে মুক্ত করে দিলেন। পাড়াপ্রতিবেশীরা নবীজিকে দেখতে এলেন। এবং মুগ্ধ হলেন। তাঁরা নবজাতককে কোলে নিয়ে সুন্দর কথাবার্তা বললেন। আব্দুল্লাহ সকলে খেজুর খেতে দিলেন।
এক বেদুইন মহিলা যার নাম হালিমা-
নবজাতকে দুধ খাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হলো। তখন আরবে এরকমই নিয়ম ছিলো। হালিমা ৫ জন ছেলেমেয়ে। তবু সে আগ্রহ নিয়ে নবীজিকে লালন পালন করেছেন। তখন জ্ঞান বিজ্ঞান উন্নত ছিলো না। অতি সামান্য রোগে মানুষ মরে যেতো। নবীজির বাবা মারা গেলেন। নবীজির যখন ছয় বছর তখন তার মা মারা গেলেন। মায়ের বয়স মাত্র বিশ বছর। সময়টা তখন ৫৭৬ সাল। নবীজির যখন ৮ বছর তখন তার দাদা মারা গেলেন। বিনা দ্বিধায় বলা যায়- নবীজির জীবনটা সুখ দুঃখ মিলিয়েই পার হয়েছে। আজীব নবীজিকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। নবীজি ধনীর সন্তান ছিলেন না। একের পর এক মৃত্যু। বাবা, মা, দাদা, ধাত্রী মা হালিমাকে হারিয়ে নবীজি বড় অসহায় হয়ে পড়লেন। তিনি ধনীদের ছাগল মাঠে নিয়ে যেতেন ঘাস খাওয়াতে। তার পেশা হলে দাঁড়ালো রাখাল।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




