
আমাদের মহল্লার সেই ভাবীর কথা মনে আছে?
ঐ যে হঠাত করে ধার্মিক হয়ে যাওয়া। একদিন তার কথা লিখেছিলাম। গতকাল ভাবীর বাসায় গিয়েছিলাম। বাসায় গিয়ে দেখি ভাবী ঘরের মধ্যে হিজাব পড়ে বসে আছেন। এই ভাবীকে আগে কি সুন্দর করে থাকতেন। কি চটপট কথা বলতেন। কত মজা করতেন। খুব হাসতে পারতেন। হাসাতে পারতেন। আজ ধর্মের কারনে আমাদের ভাবীর কি অবস্থা হয়ে গেলো। যাইহোক, ভাবীকে বললাম- আপনার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ভাবী বললেন, এই পরিবর্তন অনেক দেরীতে হলো। শোনো, রাজীব আমি এত দিন ভুলের মধ্যে ছিলাম। এই দুনিয়া কিছুই না। পরকালটাই আসল। জানো দেবরের সামনে হিজাব ছাড়া আসা কত বড় পাপ। আমি বললাম, কিন্তু একসময় তো আপনি এলাকার যে কোনো অনুষ্ঠানে নাচতেন। গান গাইতেন। আমার কথা শুনে ভাবী কেঁদে দিলেন। বললেন, আমি পাপী। পাপ করেছি। এখন প্রতি অক্তে নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
রাত নয়টায় ভাবীর অনলাইনে ক্লাশ শুরু হয়।
এক হুজুর অনলাইনে ৪৩ জন নারীকে ধর্মীয় শিক্ষা দেন। অবশ্য গড়ে প্রতিদিন ক্লাশ করে ২০/২২ জন। যাদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এরা সবাই অনেক আগেই মাস্টার্স পাশ করেছে। তাঁরা এখন জানে স্কুল কলেজের লেখাপড়া ইহকালের জন্য, মাদ্রসার লেখাপড়া ইহকাল-পরকাল দুই জাহানের জন্য। হুজুর সবাইকে আপনি আপনি করে বলেন, আর তার স্টুডেন্টরা হুজুর বা স্যার বলে সম্বোধন করে। শুনেছি এই হুজুর বিরাট ভালো মানুষ। খুব ভালো আরবী পড়ান। এক শিল্পপতি তাকে বলেছিলো তার নাতনীকে পড়াতে। বিনিময়ে তাকে মাসে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। হুজুর রাজী হন নাই। টাকা পয়সার প্রতি তার কোনো লোভ নাই। বহু লোক তার কাছে পড়তে চায়। কিন্তু তিনি সময় দিতে পারেন না। তার দুটা মাদ্রাসা আছে। তিনি দুটা হাফিজি মাদ্রসায় পড়ান। একটা মসজিদে ইমামতি করেন। আমার ধারনা এই হুজুরের মাসিক আয় কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। সে তার ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিজেই সহজ করে আরবী বই লিখেছেন। সে বই তার কাছ থেকে কিনে নিতে হয়।
হুজুর কি পড়ান? হুজুর আরবী শব্দ শেখান।
এই আরবী শব্দ ও উচ্চারন শিখলে কোরআন পড়লে তার অর্থ জানা যাবে পরিস্কার ভাবে। একদিন ভাবীকে দেখলাম ভাবী পড়ছেন- লি, লি মানে আমরা। আনা মোতালেব- আমি মোতালেব। ওয়েন আনতা- তুমি কোথায়? এশ বাক- তোমার কি হলো? আমি বুঝি না এইসব শিখে ভাবীর কি উপকার হবে? ভাবী খুবই মন দিয়ে পড়েন। হুজুর বলেছেন, তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভাবী সবচেয়ে ভালো। যাইহোক, ভাবীকে বললাম, আপনি অনেক বদলে গেছেন। হ্যাঁ আমি জানি মানুষ বদলে যায়। কিন্তু আপনি পুরো বদলে গেছেন। আপনাকে দেখলে মনে হয়- এখন আপনি অন্য দুনিয়ার বাসিন্দা। ভাবী এখন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেন। ফযরের নামাজ পড়েন। তারপর এক ঘন্টা জায়নামাজে বসে থাকেন। তখন হাতে থাকে তজবি। তারপর সে তার মোবাইলে সূরা ইয়াসিন ছেড়ে দেয়। মোবাইলে বাজতে থাকে সূরা। বাংলা অর্থ ও উচ্চারন। অন্যদিইকে ভাবী ঘরের কাজ করতে থাকেন। আমি জানি, নবীজি বলেছেন- সূরা ইয়াসিন হলো কোরআনের আত্মা। এই সূরার একটা আয়াত এরকমঃ তোমরাতো আমাদের মত মানুষ, দয়াময় কিছুই অবতীর্ণ করেননি, তোমরা শুধু মিথ্যাই বলছ।
একসময় এই ভাবীর আমি হাজার হাজার ছবি তুলে দিয়েছি।
এখন সে ছবি তুলেন না। কোনো অনুষ্ঠানে যায় না। নাচ গান করেন না। কোথাও গেলেও নিজেকে বস্তাবন্ধী করে রাখেন। শুধু চোখ দুটা দেখা যায়। আমার কন্যার জন্মদিনে সে আসেনি। ভাবী বলেছে, জন্মদিন পালন করা গুনাহ। নাচ গান করা গুনাহ। স্বামী ছাড়া কারো সামনে হিজাব ছাড়া হুটহাট চলে আসা গুনা। পরকালে আমি দোজকে যেতে চাই না। দোজক অনন্ত কালের জন্য। দোজক মানেই ভয়াবহ সব শাস্তি। আমি বললাম, সামান্য শাস্তির জন্য আল্লাহ কেন অনন্তকাল শাস্তি দেবেন? একমাস সাজা দিক। এক বছর সাজা দিক। অনন্তকাল কেন? ভাবী বললেন, তুমি আমার হুজুরের কাছে পড়ো। সব জানতে পারবে। সব বুঝতে পারবে। হুজুর তোমার জীবন বদলে দেবেন। সে তোমাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পথ বলে দিবেন। হাশরে ময়দান থেকে যেন হাসি মুখে বেহেশতে যেতে পারো সে পথ বলে দিবেন। আমি মনে মনে বলি- দুনিয়ার কোনো হুজুর আমাকে বুঝাতে পারবে না। বরং আমি হুজুরের মাথা আউলায়ে দিবো। একদিন আমি এই হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করবো।
কিছুদিন আগেও ভাবীর বাসায় গেলে-
ভাবী খুব খুশি হতেন। ফ্রিজ থেকে গরুর মাংস বের করতে করতে বলতেন, আমার ভাই এসেছে। আমার ভাই গরুর মাংস আর পোলাউ পছন্দ করে। নুডুলস রান্না করে দিতেন। চা বানিয়ে দিতেন নিজ হাতে। এখন তার বাসায় গেলে তাকে বস্তাবন্ধী দেখলেই আমার বিরক্ত লাগে। তার উপর হাতে থাকে তজবি। তার বাসায় গেলে তিনি এখন সময় দেন না। আরবী অনলাইন ক্লাস নিয়ে ভীষন ব্যস্ত। ক্লাশ শেষে হুজুর অনেক পড়া দিয়ে দেন। সারাদিন ভাবী সেগুলো মন দিয়ে পড়েন। আমি বুঝি না- হায্যাফ মানে কেটে ছোট করা, দাররাজাতুন মানে সাইকেল, যুল্লাতুন মানে ছাতা। এসব শিখে ভাবীর কি উপকার হবে? সে কোন জান্নাতে যাবে? লাভ হচ্ছে হুজুরের সে মাত্র তিন দিন অনলাইনে ক্লাস করিয়ে মাসে ১৫ হাজার টাকা পাচ্ছেন। ভাবীর জন্য খুব কষ্ট হয়। এই ভাবী কি সুন্দর গাড়ি চালাতেন। আমাকে ফোন দিয়ে বলতেন, রাজীব আজ সরকারী ছুটি। রাস্তায় জ্যাম নেই। চলো রাজীব ঘুরে আসি। আমরা গাজীপুর মাওনা চলে যেতাম।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




