somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ছোটবেলার ঘটনা

১৭ ই মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গ্রামের মাটির পথ ধরে ছোট ছেলেটা স্কুলে যাচ্ছে। ঝুমঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। প্যাক কাদায় মাখামাখি অবস্থা। মাথায় কচুপাতা একহাতে ধরা, জামার নিচে বইখাতা অন্য হাতে ধরা। খালি পা। চলছে চলছে। পথ আর শেষ হয় না। পিছল পথ। উঁচু নিচু পথ। কত দূরে স্কুল! আমার ঘরের দেয়ালের পেইন্টিং টা এই রকম। ছবিটার দিকে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। সহজ সরল একটা ছবি।

রবীন্দ্রনাথ যদি ভাষা দিয়ে থাকেন, মাইকেল মধুসূদন দিয়েছেন ঢং বা কাঠামো। তারাশঙ্কর ও মানিক দিয়েছেন বিষয় বস্তু। বিভূতিভূষণ আমাদের বোধকে আরও গভীর করেছেন। ব্যক্তিকে চিনিয়েছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, শহীদুল জহির, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও শওকত আলী আমাদেরকে ইতিহাসে ফিরিয়েছেন। হাসান আজিজুল হক গভীর থেকে আমাদের জীবনের প্রতিটা বাঁককে স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। সেলিনা হোসেন আপন অনুভূতি দিয়ে আমাদের নারী সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে এনেছেন এবং হুমায়ূন আহমেদ আমাদের দিয়েছেন- এক আকাশ স্বচ্ছ আনন্দ।

আমার কোনো হাইস্কুল নেই। নেই কলেজ, নেই ইউনিভার্সিটি। আমি কখনও স্কুল কলেজে লেখাপড়া করিনি। বেঁচে যে আছি এটাই বেশি। ছোটবেলাটা কেটেছে আমার অসুস্থতায়। নানান রকম রোগ লেগেই থাকতো। আব্বা বলতো শুধু বেঁচে থাক বাবা। আর কিছু চাই না। সত্যিই আমি বেঁচে গেলাম। কিন্তু লেখাপড়াটা আর হলো না। এদিকে আমার ১৪ বছর হয়ে গেলো। একদিন আব্বা বললেন, লেখাপড়াটা করা দরকার। বিসমিল্লাহ্‌ বলে স্কুলে ভরতি হয়ে যা। আমি বললাম, ইয়েস। কিন্তু স্কুলে আর ভরতি হতে পারলাম না। আবার অসুস্থ হয়ে পড়লাম। বাঁচি কিনা সন্দেহ। আমার ভাগ্যটাই খারাপ।

এরপর এক শিক্ষক আমাকে বাসায় পড়াতে শুরু করলেন। যত পড়ি তত ভালো লাগে। সারাক্ষণ আমার হাতে বই থাকতো। এদিকে একদিন এক দরবেশ বাবা আমাদের এলাকায় এলেন আজমী শরীফ থেকে। আমার আব্বা তাকে অনুরোধ করে বাসায় নিয়ে এলেন। আব্বা দরবেশ বাবাকে আমার অসুস্থতার কথা বললেব। দরবেশ আমাকে বললেন, হাত মুঠ করো। আমি হাত মুঠ করলাম। দরবেশ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বিড় বিড় করলেন এবং আমাকে ফুঁ দিলেন। তারপর হাতের মুঠ খুলে দেখলাম- আমাত হাতে একটা ফুল। এই ঘটনার পর থেকে আমার আর কোনোদিন কোনো অসুখ বিসুখ হয়নি। সামান্য জ্বরও আসে নাই। গত বিশ বছরে একবারও ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি।

এরপর আর স্কুল কলেজে ভরতি হই নাই। এত বড় ছেলেকে কে ভরতি করবে? নিজে নিজেই বাসায় সব রকম বই পড়তে শুরু করলাম। ফিজিক্স, রসায়ন, ইতিহাস, ধর্ম, অর্থনীতি, ভূগোল। কোনো বই বাদ দেই নাই। আমার এক বন্ধু জগন্নাথে পড়তো। মাঝে মাঝে জগন্নাথ কলেজে যেতাম বন্ধুর কাছে। ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তখন স্যার বললেন, আমার ক্লাসের সামনে একটা ছেলে কেন বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে। এসো, ভিতরে এসে বসো। আমিও ওদের সাথে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ক্লাশ কতাম। আমার বোন এক স্যারের বাসায় হিসাব বিজ্ঞান পড়তে যেতো। বোনের সাথে আমিও যেতাম। স্যার আমাকেও পড়াতেন। পড়ালেখার চেয়ে সুন্দর দুনিয়াতে আর কিছু নেই।

আরামবাগের কাছে এক ম্যাডামের বাসায় আমার বন্ধুরা ইংরেজি সাহিত্য পড়তে যেতো। বন্ধুদের সাথে আমিও যেতাম। পড়তাম। খুব ভালো লাগলো। মীরা ম্যাডাম আমাদের উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের- ম্যাকবেথ, হ্যামলেট, ওথেলো, জুলিয়েট সিজার, কিং লিয়ার ইত্যাদি বই পড়িয়েছেন। মীরা ম্যাডাম আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন রবার্ট ফ্রস্ট এর সাথে। কি সুন্দর কবিতা! মীরা ম্যাডাম আমাদের কবিতা শুনাতেন। কবিতা শুনে আমি তো ম্যাডামের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। শুনেছি, ম্যাডাম বর্তমানে আমেরিকা থাকেন। তার সাথে আমার যোগাযোগ নেই। ম্যাডামের সাথে আমার অনেক খাতির হয়ে গিয়েছিলো। ম্যাডাম আমাকে নুডুলস রান্না করে খাওয়াতো।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২৩ দুপুর ২:৩৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×