১। একবার মতিঝিল সেন্টাল স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলছিলাম।
তখন আমি অনেক ছোট। ৬/৭ বছর হবে হয়তো। হঠাত দেখি মাঠে কেউ নেই। আমি একা। অথচ একটু আগে অনেকেই মাঠে খেলছিলো। অনেক বড় মাঠ। চিন্তা করলাম বাড়ি ফিরে যাই। তখন শুরু হলো- হঠাত ঝড়। অথচ একটু আগেই কড়া রোদ ছিলো। মাঠের একপাশে একটা পুকুর। ছোট পুকুর। বাতাসের ধাক্কায় আমি পুকুরে পড়ে যাই। জানি না সাঁতার। ডুবে যাচ্ছিলাম, তখন সুন্দর মতো একটা মেয়ে আমাকে বাঁচায়। মেয়েটা পানির মধ্যেই ছিলো। এই ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা আমি পাইনি। অথচ আমি একজন কুসংস্কার মুক্ত আধুনিক মানুষ। আমার দুনিয়া লজিকময়।
২। আমার এক বন্ধু স্ট্রোক করে মারা যায় সৌদি আরব।
বন্ধুর মৃত্যু আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। কাছের বন্ধু ছিলো। একদিন বাসায় কেউ নেই। রাতের বেলা। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তুমুল। আমি ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে বসার ঘরে এসে দেখি- আমার মৃত বন্ধু বসে আছে। ঘরে টিভি চলছে। বন্ধুকে দেখে খুব খুশি লাগলো। আমার মনেই ছিলো না, বন্ধুটি দু বছর আগে সৌদিতে স্ট্রোক করে মারা গেছে। আমি বন্ধুর পাশে বসে গল্প করছি। বন্ধু কিছু বলে না। যেন তার মন খারাপ। আমি একাই কথা বলে যাচ্ছি। রাত দুটায় আমি ঘুমাতে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বন্ধু কোথাও নেই। থাকার কথাও না। মৃত মানুষ ফিরে আসে না। এই বন্ধুকে আমি আরো দুবার দেখেছি। সেই ঘটনা অন্য কোনো সময় বলব।
৩। এটা কিছুদিন আগের ঘটনা।
আমার আব্বা করোনা'তে মারা গেছে। আব্বা মারা গেছে এটা আমি সম্পূর্ন ভুলেই গেছি। মনে হয়, বেঁচে আছে, ঢাকার বাইরে আছে। একদিন এক কাজে কুমিল্লা যাবো। বাসে যেতে ইচ্ছা করছিলো না। আব্বাকে ফোন দিয়ে গাড়ি পাঠাতে বললাম। আব্বা গাড়ি পাঠালো। উল্লেখ্য আমার বাবা গাড়ির বিজনেস করতো। যাইহোক, আব্বা গাড়ি পাঠালো। আমি কুমিল্লা গিয়ে আমার কাজ সেরে ঢাকা ফিরলাম। তিন দিন পর আমার মনে পড়লো, আরেহ আমি কাকে ফোন দিলাম? আমার বাবাতো বেঁচে নেই। তাহলে কে আমাকে গাড়ি পাঠালো? এই ঘটনার পর আমি আমার মোবাইল থেকে আব্বার নম্বর ডিলিট করে দেই।
৪। ছোটবেলা আমি বারবার অসুস্থ হয়ে যেতাম।
বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েও সুস্থ হচ্ছিলাম না। আব্বা শুধু বলতো- বেঁচে থাক বাবা। সব বাচ্চারা ছোটাছোটি করে। আমি বিছানায় শুয়ে থাকি সারাদিন। শুধু বেঁচে থাকতে চেষ্টা করতাম। আজমী শরীফ থেকে এক দরবেশ এলেন আমাদের এলাকায়। আমার বাবা তাকে অনুরোধ বাসায় নিয়ে এলেন। আমাকে দেখালেন। বললেন, আমার অসুস্থতার কথা। সেই দরবেশ বিড় বিড় করে কিছু বললেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আমি সুস্থ হয়ে গেলাম। এতটাই সুস্থ হলাম- গত ত্রিশ বছর ধরে আমি আর অসুস্থ হইনি। একবারও আমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি। সাম্মান্য জ্বরও আমার হয়নি।
৫। ফরিদপুর গিয়েছিলাম এক কাজে।
কাজ শেষ করে ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বেজে গেলো। বাইকে করে ডাকবাংলোয় ফিরছিলাম। অন্ধকার রাস্তা। শীতের রাত। বেশ কুয়াশা। মাঝে মাঝে দু একটা শিয়াল দেখা যাচ্ছিলো। রাস্তায় হঠাত বাইক নষ্ট হয়ে যায়। বাইক চালক বলল, হেটে চলে যান। দশ মিনিট লাগবে। একদম সোজা রাস্তা। যেতে পারবেন না? আমি বললাম, এটা কোনো ব্যাপারই না। অথচ আমি ভয় পাচ্ছিলাম। রাতেরবেলা গ্রাম দেশে নানান রকম শব্দ হয়। আমি শহরের মানুষ। এরকম পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত নই। গাছের পাতার শব্দ শুনলে অনে হয়- বুঝি সাপ ফোঁস ফোঁস করছে পায়ের কাছে।
বাইক চালক বলেছিলো, দশ মিনিট হাঁটলেই ডাকবাংলো পেয়ে যাবো।
আমি ত্রিশ মিনিট হাঁটলাম। ডাকবাংলো খুঁজে পেলাম না। উলটা ৫//৬ ছয়টা কুকুর আমার পিছু নিয়েছে। আমি ছোটবেলা থেকেই কুকুর ভয় পাই। কুকুর গুলো ঘেউ ঘেউ করছে না। চারিদিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। বাতাস নেই। অদ্ভুত সব শব্দ চারদিকে। হয়তো শব্দ গুলো অদ্ভুত নয়। কিন্তু আমার কাছে অদ্ভুত বলে মনে হচ্ছে। অজানা ভয়ে আমি বিধ্বস্ত। মনে হচ্ছে দম আটকে মরে যাবো। এমন সময় কোথা থেকে একটা মেয়ে এলো। আমাকে ডাকবাংলোয় পৌঁছে দিলো। মেয়েটা চলে যাবার আগে বলে গেলো- তোমার বিপদেআপদে সব সময় আমাকে পাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০২৩ দুপুর ২:৫৬